মরিচের দাম কম: মানিকগঞ্জের চাষীদের মাথায় হাত
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ ॥
মানিকগঞ্জে এবার কাঁচা মরিচের ফলন ভালো হলেও দাম অনেক কম। ফলে উৎপাদন খরচ তো দুরের কথা, ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে যে টাকা খরচ হয় সে টাকাও উঠছে না। এতে চাষীরা মরিচ নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে। দাম কমে যাওয়ায় অনেক চাষী ক্ষেত থেকে এখন মরিচ তোলাই বাদ দিয়েছেন। এবার মরিচের দাম আর যদি না বাড়ে তাহলে মোটা অংকের টাকা লোকসান গুণতে হবে এ অঞ্চলের চাষীদের।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত সুত্রে জানা যায়, গত বছর মরিচের দাম ভালো হওয়াতে এবার মরিচের আবাদ বেড়েছে এবং ফলনও ভালো হয়েছে। ফলে মরিচের দাম কমে গেছে। এবছর ৫,৭০৯ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ৬,৭৫০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৮,২৭৮ মেট্রিক টন। আর গত বছর ৫,৫৫০ হেক্টর জমিতে ৮,৩৩৮ মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদন হয়।
ঘিওর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের মরিচ চাষী মুন্নাফ মিয়া জানান, গতবার মরিচের ভালো দাম পাওয়ায় এবছর ৩ বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন তিনি। মরিচের ফলন অনেক ভালো। ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি মরিচ তোলা ও হাটে নিয়ে বিক্রি করতে মোট খরচ হচ্ছে ৫/৬ টাকা। জমি চাষবাস থেকে শুরু করে চারা লাগান এবং পরিচর্যাসহ উৎপাদন খরচ তো রয়েই গেছে। অথচ গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি মরিচ ৮/১০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। মরিচের এরকম দাম অব্যাহত থাকলে এবার মোটা অংকের টাকা লোকসান গুণতে হবে।
জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা, বাল্লা, বাস্তা, মাচাইন, শিবালয় উপজেলার বরংগাইল, নালী, রূপসা, তাড়াইল, শাকরাইল এবং ঘিওর উপজেলার ঘিওর হাট মরিচ কেনা-বেচার বিখ্যাত হাট-বাজার।
গতকাল শনিবার সরজমিনে জেলার বৃহত্তর মরিচ হাট বরংগাইলে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত কৃষক বস্তাভর্তি মরিচ নিয়ে বসে আছেন একটু ভালো দাম পেয়ে বিক্রির আশায়। কিন্তু তাদের এই আশা সফল হয়নি। এক সপ্তাহ ধরে কাঁচা মরিচের দাম একই জায়গাতেই রয়ে গেছে।
হাট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই হাট থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক মরিচ যাচ্ছে ঢাকার কাওরান বাজার, শ্যাম বাজার, কুমিল্লা ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। পাশাপাশি দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখান থেকে সৌদি, কুয়েত, দাম্মাম, দুবাইসহ আরো কয়েকটি দেশেও মরিচ রপ্তানি করা হয়ে থাকে।
হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার মরিচের বাম্পার ফলনই কাল হয়েছে কৃষকের। উৎপাদন কম হলে দাম ভালো পাওয়া যেতো এমন কথা অনেকের। আবার অনেকে বলছে, সামনে রমাজান মাসে কাঁচা মরিচের চাহিদা ও দর দুটোই বৃদ্ধি পেতে পারে। তখন হয়তো কৃষকরা একটু ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে।
পুখুরিয়া গ্রামের চাষী ময়নাল মৃধা ক্ষোভের সাথে বলেন, “সরকার আমাগো দিকে তাকায় না। যখন মরিচের দাম বাড়ে তখন মোবাইল কোর্ট বসিয়ে আমাদের হুমকি দিয়ে যায় দাম কমানো জন্য। কিন্তু এখন মরিচের দাম না পেয়ে কৃষক মাঠে মারা যাচ্ছে। কেউ তো এখন খোঁজ নেয় না।
বরংগাইল হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা কৃষক হরিপদ সরকার জানান, অন্যের কাছ থেকে এক বছরের জন্য বর্গা নিয়ে ১৪ হাজার টাকা খরচ করে মরিচ ক্ষেত করেছিলাম। কিন্তু আমাগো এখন মাথায় হাত। মরিচের দাম নাই।
এই হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা অনেক কৃষকের ধারণা, এখান থেকে পাইকরারা কম দামে মরিচ কিনে শহরের বেশি দামে বিক্রি করছেন। শহরের সাথে গ্রামে দামের ফারাক আকাশ পাতাল।
পাইকারী ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানালেন, এবার দুই লাখ পকেটে নিয়ে মরিচ কেনা বেচায় নেমেছিলাম। এ পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকা খোয়া গেছে। তিনি বলেন, “বরংগাইল হাট থেকে প্রতিদিন মরিচ কিনে চট্রগামে পাঠাই। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য এই ক্ষতি মেনে নিতে হচ্ছে।”
বরংগাইল হাটের আড়ৎদার ওয়াজেদ আলী বলেন, “প্রতিদিন এ হাটে প্রায় শত মণ মরিচ কেনাবেচা হয়। মরিচের দাম চড়া থাকলে কৃষক ও আমরা সবাই লাভবান হই। কিন্তু দাম নেমে গেলেও উভয়কে লোকসান গুনতে হয়। কয়েক দিন ধরে লাভ কাকে বলে জানিনা।” ঢাকার কাওরান বাজার, শ্যামবাজার ও চট্রগ্রামেও মরিচের দাম কম বলে তিনি জানান।
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশরাফ উজ্জামান বলেন, “এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় মরিচের উৎপাদন অনেক ভালো হয়েছে। দাম কয়েকদিন আগেও ভালো ছিল। বর্তমানে দাম অনেক কম থাকায়, কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সন্মূখীন হচ্ছেন।