প্রচন্ড তাপদাহে মানিকগঞ্জে কদর বেড়েছে তালের শাঁসের

মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক  

জ্যৈষ্ঠের খরতাপে সারাদেশে চলছে দাবদাহ। দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। তীব্র গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থায় একটু স্বস্তি পেতে মানিকগঞ্জে কদর বেড়েছে তালের শাঁসের। বিশেষ করে চলতি রমজানে ইফতারের খাদ্য তালিকায় অনেকেই তালের শাঁস রাখছেন। কারণ কচি তালের শাঁস যেমন পুষ্টিকর তেমনি প্রশাস্তিদায়ক।

জেলার ঘিওর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজারের মোড়ে বিক্রেতারা এখন হরদমে বিক্রি করছে তাল শাঁস। এছাড়াও ভ্যান যোগে ভ্রাম্যমান তাল শাঁস বিক্রেতাদের সংখ্যাও কম নয়। জেলায় প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের লোকজন তাল শাঁস বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। অনেক ক্রেতাই পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে প্রতিটি তাল শাঁস ৫-৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

SAMSUNG CAMERA PICTURES

মৌসুমী ব্যবসায়ী আনু মিয়া জানান, একটি গাছের তাল ৮০০ টাকায় কিনেছেন। গাছ থেকে তাল নামাতে লেগেছে ৩শ’ টাকা আর ভাড়া লেগেছে ৬০০ টাকা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বানিয়াজুরী বাসষ্ট্যান্ডে সামনে প্রতিটি তাল বিক্রি করেন ১৫ টাকা। পেশায় রিকশাচালক আনু মিয়ার এটি মৌসুমী ব্যবসা। তিনি জানান, এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত তাল শাঁস বিক্রি করা যাবে। এই এক দেড় মাসে তিনি তালের শাঁস বিক্রি করে আয় করবেন ২০/৩০ হাজার টাকার মতো। র্ঘিওর বেপারীপাড়া গ্রামের সুমন ও আশিক জানায়, প্রতিবছর মধু মাসে সে ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে পাইকারি দরে তাল শাঁস ক্রয় করে ঘিওর হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকে। পরিশ্রম একটু বেশি হলেও লাভ বেশ ভালোই হয়।

চলতি মৌসুমে তালের ফলন কম হওয়ায় উপজেলার সর্বত্রই তাল শাঁসের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে চড়া মূল্যে এ মৌসুমে তাল শাঁস বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতিটি তাল ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে তারা প্রতি দিন ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা আয় করছেন। সৌখিন ক্রেতা থেকে শুরু করে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা প্রচন্ড গরমে একটু শান্তির পরশ পেতে ভীড় করছেন তাল শাঁস বিক্রেতাদের কাছে।

গতকাল রোববার মানিকগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ড, টাউন বাজার, ঘিওর বাসস্ট্যান্ড, মাছ বাজার, পূরাতন গরু হাট, কুস্তা বীজের নিকটে দেখা গেছে অনেক সৌখিন বিক্রেতারা তাল বিক্রি করছে। সব শ্রেণী পেশার লোকজন মৌসুমী ফল তাল শাঁস ক্রয় করতে ভীড় করছেন বিক্রেতাদের কাছে। বিশেষ করে ইফতারের খাদ্য তালিকায় অনেকেই তালের শাঁস রাখছেন।
Ghior, Manikgonj (2)
বালিরটেক বাজারের ব্যবসায়ী মো. ফারুক জানান, কাঁচা তালের কচি শাঁস খেতে কার না ভালো লাগে। এই গরমে হরদম বিক্রি হচ্ছে এই ফল। ইফতারিতে কঁচি তালের রসালো শাঁস সকলকে তৃপ্তি দেয়। মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল করিম জানান, তাল শাঁস পুষ্টিকর, প্রশান্তিদায়ক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফ উজ্জামান জানান, চলতি মৌসুমে তালের ফলন কম হওয়ায় বিক্রেতাদের আনা মৌসুমী ফল তাল শাঁস মুহুর্তের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে ঘিওর উপজেলায় কতটি তাল গাছ আছে তা আমাদের জানা নেই।
Ghior, Manikgonj (3)
পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন নেত্রী ও জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মী চ্যাটার্জী বলেন, “গ্রীষ্মকালে তাল পাখার বাতাস গ্রামের মানুষের শরীরে যেমন হিমেল পরশ বুলিয়ে দেয়। তেমনি ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাড়িঘর ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় তাল গাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য।” তাল গাছের অভাবে এখন আর চোখে পড়েনা বাবুই পাখির বাসা। পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ অঞ্চলে তালগাছ এখন বিলুপ্ত প্রায়। ফলে, ঐতিহ্যবাহী তালের রস, তালের গুড় ও তালের পাটালি এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।

একসময় মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ তালগাছ ছিল। প্রতিবছর বয়স্ক শত শত তালগাছ কেটে গৃহস্থালি, ইট পোড়ানো, তালের ডোঙ্গা তৈরি ও জ্বালানিসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া, অজ্ঞাত রোগ, প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বহু তালগাছ অকালে মারা যাচ্ছে। আবার আর্থিক অনটনের কারণে অনেক তালগাছের মালিক তাদের তালগাছগুলো সস্তায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এই গাছ সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

happy wheels 2

Comments