শিমুল গাছ

মানিকগঞ্জ থেকে বিমল চন্দ্র রায়

‘ও পলাশ ও শিমূল কেন এ মন মোর রাঙালে’? লতা মঙ্গেশকর এর গাওয়া গান বাঙালি মুগ্ধ হয়ে শুনে থাকেন। শিমুল শব্দটি শোনার সাথে সাথে রক্তরাঙা থোকা থোকা ফুলের কথা মনে আসে।
শিমুল বহুবর্ষজীবী জাতীয় উদ্ভিদ। এটি পাতাঝড়া জাতীয় উদ্ভিদ। ছোট অবস্থায় গাছের কান্ডে ব্যাপক কাঁটা থাকে তবে বয়স্ক গাছে তেমন কাঁটা থাকে না। শিমুল গাছ তুলনা মূলক নরম জাতীয় গাছ। ফাল্গুন মাসে বাংলার আকাশে রাঙা শিমুলের ফুল দেখতে পাওয়া যায়। চৈত্র/বৈশাখ মাসে শিমুল ফল হতে শিমুল তুলা বেরিয়ে আসে। দ্রুত বর্ধনশীল এই গাছ, অন্য গাছের যে সময় ২০/২৫ বছর লাগে সেই রকম বড় হতে ৪/৫ বছর লাগে। বাংলার মাঠে-ঘাটে,নদী-নালা,খাল- বিলে, রাস্তার ধারে অনাদরে অবহেলায় ও অব্যবহৃত জমিতে আপনজ্বালা হিসেবে বেড়ে ওঠে। শিমুল গাছ লাগানো কথা শোনা যায় না। বর্ষা শেষে শিমুল গাছ জন্মাতে দেখা যায়। শিমুল, রক্ত শিমুল, লাল শিমুল, রেমমি শিমুল, পাহাড়ি শিমুল, মোজাম্বিক শিমুল ইত্যাদি প্রজাতির শিমুল গাছ দেখতে পাওয়া যায়। বোম্বাক্স বা শিমুল এর ইংরেজি নাম সিল্ক কটন। বাংলাদেশ, ভারত, মালয়, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ চীন,হংকং এবং তাইওয়ানে ব্যাপকভাবে এ গাছের চাষ হয়।


মানিকগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে শিমুল দেখতে পাওয়া যায়। শিমুল ফুলের পিক ফেসবুকে ব্যাপক আকারে ফাল্গুন মাসে দেখতে পাওয়া যায়। লাল, নীল, হলুদ, সোনালিসহ আরো উজ্জ্বল রঙের ফুল আমাদের মনকে রাঙিয়ে দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাসে জাতীয় পতাকার রক্তরাঙা বৃত্তের সাথে রক্তরাঙা আকর্ষণীয় শিমুল ফুল বাঙালিকে আকর্ষিত করে। শিমুল তুলা দিয়ে বালিশ তৈরি হয়। তবে শিমুল তুলা সংগ্রহ অনেক ঝাঁমেলাপূর্ণ। শিমুল ফল পাকা পাকা অবস্থায় সময় বাঁশের লঙ্গী/ লাঠি দিয়ে কুটা বেধে পাড়তে হয় টেনে টেনে, তা না হলে পরিপূর্ণ পাকলে ফল ফেটে গিয়ে তুলা বাতাসে বাতাসে ভেসে যায়। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাবাসপুর গ্রামের বৈশাখ মাসের নিমাই চাঁন্দের মেলায় গ্রামের মানুষ তুলা বিক্রি করতে নিয়ে আসে। তবে বর্তমানে তুলার ব্যাপক চাহিদার কারণে ফাল্গুন মাসের শেষে তুলা ব্যবসায়ীগণ ফল অবস্থায় গাছ কিনে থাকে এবং নিজ উদ্যোগে তুলা সংগ্রহ করে। এক কেজি তুলা এলাকা ভেদে পাঁচ/ছয়শত টাকা বিক্রি হয়।


এই বিষয়ে কথা হয় লেপ তোশক ব্যবসায়ী ধুনকর মোঃ নূরুল্লার সাথে। তিনি বলেন, ‘এখন শিমুল গাছ কমে গেছে। ফলে মানিকগঞ্জ শিমুল তুলা কম পাওয়া যায়। আমরা উত্তরাঞ্চল থেকে শিমুল তুলা সংগ্রহ করি তবে মানিকগঞ্জএর তুলার মান ভালো। ম্যাচ ফাক্টরি, ডিঙ্গি নৌকা বানানো, নির্মাণের সেন্টারিংসহ আরো কিছু কারণে গাছ বিক্রি করে দেওয়ায় গাছ কমেছে। তবে ইদানিং অনেক গাছ দেখা যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘একটি ভালো মানের শিমুল তুলার বালিশ তৈরি করলে ১৩০০/১৪০০ টাকা লাগে তাই সবাই তুলার বালিশ বানাতে চায় না। তুলার বিকল্প হিসেবে গার্মেন্টস ঝুট কিনে আনি তা থেকে বালিশ, তোষক তৈরি করি।’ অন্যদিকে বরুন্ডি গ্রামের সুভাষ মাস্টার বলেন, ‘আমাদের ভিটায় দু’টি বড় শিমুল গাছ আছে। বর্তমানে কয়েক বছর ধরে ব্যাপারীরা এসে কাঁচা ফল অবস্থায় কিনে নেয়। আগের দিনে বড় গাছ হওয়ায় তুলা পেকে উড়ে যেত। এলাকার পরিবেশ নষ্ট হতো। তবে উড়া তুলার সাথে তুলার বীজ যেত ফলে পরবর্তীতে ব্যাপক এখানে সেখানে শিমুল গাছ জন্মাতো ।


‘শিমুল ফুল তুমুল লাল ছড়ায় রঙিন আলো……’ ‘রক্ত শিমুল তপ্ত পলাশ দিল ডাক, সুনীল ভোরে’ কিংবা ‘ও শিমুল বন দাও রাঙ্গিয়ে মন’। যুগ যুগ শিমুল নিয়ে এই ধরনের গান, গল্প, কবিতা, প্রেরণা সাহিত্যে টিকে থাকুক।

happy wheels 2

Comments