টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উদ্যোগ নিল কিশোরীরা

নেত্রকোনা থেকে শংকর ম্রং

গতকাল নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ফচিকা গ্রামের অগ্রযাত্রা কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগ সংগঠনের বৈঠকখানায় গ্রামের গর্ভবতী মা, শিশু, কিশোরী, বয়স্ক ও প্রবীণ নারীদের অংশগ্রহণে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক এক আলোচনা সভা ও পুষ্টিকর খাদ্য উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে পুষ্টিরকর খাদ্যাভাস গড়ে তোলে গর্ভের সন্তানদের সুস্থ্যভাবে ভূমিষ্ট হতে কিশোরীরা এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে বলে জানায়।

20190806_103711-W600
অনুষ্ঠানটি উপলক্ষে কিশোরী সংগঠনের সদস্যরা তাদের টিফিনের/হাত খরচের টাকা জমিয়ে গ্রামের ৪ জন গর্ভবতী মায়েদের জন্য হাঁসের ডিম, পেয়ারা, কলা ক্রয় করে। কিশোরীরা গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে বিতরণের জন্য ভোর বেলায় গ্রামের আনাচে কানাচে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কচুর ডাটা সংগ্রহ করে চারটি আঁটি বাঁধে। কিশোরী সংগঠনের নেত্রী শেফালী আক্তারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় বিষয়ে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন অহিদুর রহমান, শংকর ম্রং, রুখসানা রুমী, কলেজ শিক্ষার্থী প্রীতি আক্তার, লায়লা আক্তার (গ্রাম্য ধাত্রী) প্রমূখ।

20190806_111715-W600
সঞ্চালক শেফালী আক্তার বলেন, ‘গ্রামের অনেক গর্ভবতী মায়েরা বিভিন্ন কুসংস্কার ও অসচেতনতা জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে চায়না। আবার গ্রামে অনেক দরিদ্র গর্ভবতী মা রয়েছেন যারা পুষ্টিকর খাবার কিনে খেতে পারেন না। এসব গর্ভবতী মায়েদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামান্য সহায়তা হিসেবে পুষ্টিকর খাদ্য উপকরণ সহায়তা দিয়ে তাদের মধ্যে পুষ্টিকর খাদ্যাভাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংগঠনের পক্ষে একজন গর্ভবতী মাকে হয়তো গর্ভকালীন পুরো সময়ে পুষ্টিকর খাদ্য সহায়তা দেয়া সম্ভব হবে না। সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামের প্রত্যেক গর্ভবতী মাকে ৩০টি করে হাঁস/মুরগির ডিম দিয়ে সহায়তা করা হবে, তবে এটি একসাথে দেয়া হবে না। চার হালি করে দু’বারে দেয়া হবে।’

20190806_111808-W600
এ ধরণের আলোচনার মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের এবং তাদের অভিভাবক ও আত্মীয়দের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে তারা বাড়ির আনাচে কানাচে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো খাদ্য উদ্ভিদ সংগ্রহ করে পুষ্টির অভাব মেটাতে পারবে। তাই কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। গ্রামে গর্ভবতী নতুন কোন মায়ের সংবাদ পেলেই সংগঠনটি এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

আলোচনায় অহিদুর রহমান গর্ভাবস্থায় শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গর্ভবতী মায়েদের ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘সন্তান গর্ভে থাকাকালীন মা পুষ্টিকর খাবার না খেলে সন্তান পুষ্টিহীনতায় ভূগবে। তাই সকল গর্ভবতী মায়েদেরকে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অচাষকৃত খাদ্য উদ্ভিদগুলো সংগ্রহ করে খেয়ে সহজেই পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব। গর্ভাবস্থায় মায়েদের কোন সমস্যা হলে রেজিষ্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করা যাবে না।’ তিনি সকল মাকে এবং পরিবারের লোকদেরকে গর্ভাবস্থায় মায়েদের সঠিক যত্ন নিতে এবং মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের পরামর্শ দেন।

20190806_111848-W600
শংকর ¤্রং গর্ভবতী মায়েদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত স্বাস্থ্য চেকআপ করার পরামর্শ দেন। এছাড়াও তিনি গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণে এলাকায় যেসব অচাষকৃত খাদ্য উদ্ভিদ পাওয়া যায় সেগুলো সংগ্রহ করে খাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি প্রত্যেকের বাড়িতে কমপক্ষে দু’টি করে পেঁপে গাছ, পেয়ারা, লেবু, পুইশাক, কাল কচু ও সাজনাসহ বছরব্যাপী অন্যান্য শাকসবজি চাষ করার পরামর্শ দেন। গর্ভবর্তী মায়েরা পুষ্টিকর খাবার খেয়ে নিজেরা সুস্থ থেকে সুস্থ ও সুন্দর সন্তান প্রসব করতে পারে। তিনি কাল কচু, পেঁপে ফুল, কাঁচা/পাঁকা পেঁপে, সাজনা শাক, সাজনা, লেবু, পুঁই শাকসহ বিভিন্ন সবজি ও ফলের গুণাগুণ সম্পর্কেও আলোচনা করেন। গর্ভবতী মায়েদেরকে তিনি ভারী জিনিস বহন করা/উঠানো, মাঠে গিয়ে পরিশ্রমের কাজ না করা এবং পিছিল রাস্তায় চলাচল না করে সম্ভাব্য দূর্ঘটনা এড়ানোর পরামর্শ দেন।

20190806_112235-W600

রুখসানা রুমি বিভিন্ন সমস্যায় সরকারি সেবাসমূহ পেতে সংগঠনের বৈঠকখানায় সংরক্ষিত সরকারের বিভিন্ন পরিসেবা প্রদানকারী বিভাগসমূহের সেবা পেতে এবং জানতে জরুরি ফোন নম্বরগুলো সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। প্রীতি আক্তার গর্ভবতী মায়েদেরকে যথা সম্ভব পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ করে খাওয়ার পরামর্শ দেন। গ্রাম্য ধাত্রী লায়লা আক্তার বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় মা সুস্থ না থাকলে গর্ভের সন্তানও সুস্থ থাকবে না। মা-ই শুধু পারে তার সন্তানকে সুস্থ সবলভাবে পৃথিবীতে আনতে। আর এটি সম্ভব গর্ভাবস্থায় মাকে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে এবং নিজের সঠিক যত্ন নিয়ে সুস্থ থাকার মাধ্যমে। তাই সকল মাকে এসময়ে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যের চেকআপ করাতে হবে।’

আলোচনা শেষে চারজন গর্ভবতী মায়ের মধ্যে কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগে পুষ্টিকর খাদ্য উপকরণ জন প্রতি পেয়ারা (২ হালি), কলা (২ হালি), হাঁসের ডিম (৪ হালি) ও কচুর ডাটা বিতরণ করা হয়। গ্রামের প্রবীণ নারী ও কিশোরী সংগঠনের সদস্যরা গর্ভবতী মাদেরকে এসব উপকরণ বিতরণ করেন।

happy wheels 2

Comments