আমরা নারী, সাম্যের সমাজ গড়ি
মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার
“করোনাকালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব” প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে কিশোরীদের অংশগ্রহণে ফুটবল খেলা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় প্রত্যয় কিশোরী সংগঠন, চরমত্ত, কৃষ্ণপুর, সদর, মানিকগঞ্জ এবং আলোর দিশারী কিশোরী ক্লাব, আজিমপুর, সিংগাইর, মানিকগঞ্জ অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদর, মানিকগঞ্জ।
বিশ^ব্যাপি বিভিন্ন অঞ্চলে নারীদের প্রতি সম্মান, প্রশংসা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে নারীদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনের উৎসব হিসেবে প্রতিপালিত হয়। দিবসকে সামনে রেখে বারসিক আয়োজনে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে ফুটবল খেলা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। খেলার উদ্বোধন করেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। নির্ধারিত ৬০ মিনিটের খেলা শেষ করে ট্রাইব্রেকারে ৩-২ গোলে প্রত্যয় কিশোরী সংগঠন জয়লাভ করে।
বারসিক কর্মকর্তা রাশেদা আক্তারের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ফুটবল খেললে শরীর মন দুটোই ভালো থাকে। নারীদের অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়। নারীরা আজ পিছিয়ে নেই। তোমরা আজ এখানে খেলতে এসেছো সেজন্য তোমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। তোমাদের দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে। তোমরা নিয়মিত চর্চা করবে। মনে রাখবে এই খেলা শুধু একদিনের জন্য নয়। নিয়মিত খেলবে। বারসিককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এমন সুন্দর একটি আয়োজনের জন্য।’ প্রধান অতিথি দুই দলের দুইজন বেস্ট খেলোয়ারকে ৫০০ করে সম্মানী দিয়ে উৎসাহিত করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড: আজাহারুল ইসলাম আরজু বলেন, ‘আজ তোমাদের খেলা দেখে আমার সত্যিই খুব ভালো লেগেছে। নারীরা আজ কোন কাজেই পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের সংগ্রামের ইতিহাসে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। আজ তোমারাও তার প্রমাণ দিয়েছো। নারীরা ইচ্ছে করলেই পারে। এই ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তোমরা প্রত্যেকেই সেই গ্রাম থেকে এখানে এসেছো। খেলায় অংশগ্রহণ করেছো। তোমাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
জাতীয় মহিলা সংস্থা, মানিকগঞ্জ জেলা শাখার চেয়াম্যান শ্রীমতি লক্ষ্মী চ্যাটার্জী, বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবসে কিশোরীদের অংশগ্রহণে ফুটবল খেলা প্রতিযোগিতা এটিই প্রমাণ করছে যে নারীরা আজ পিছিয়ে নেই। নারীদের চলার পথে অনেক বাধা আছে। কিন্তু তোমরা সেই বাধা অতিক্রম করেই আজ এখানে জেলা পর্যায় ফুটবল খেলতে এসেছো। এজন্য তোমাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তোমাদের দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে। তোমাদের লক্ষ্য ঠিক থাকলে তোমরা একদিন লক্ষ্যে পৌঁছাবেই। বারসিককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এমন সুন্দর একটি আয়োজন করার জন্য।’
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায়। তিনি আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা চাই নারীরা তাদের সম অধিকার পাক। নারীদের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। সেই সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। নারীদের ফুটবল খেলার মধ্য দিয়ে নারীদের সেই সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা মনে করি।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক এ্যাড: দীপক কুমার ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীরা সব পারে। নারী দিবসে এমন একটি আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। বারসিক নারীদের সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা সময়োপযোগি উদ্যোগ। তোমরা নিয়মিত খেলবে। খেলাধুলা করলে শরীর ভাল থাকে, মন প্রফুল্ল থাকে। দুই দলকেই অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা ক্রীড়া সম্পাদক রোমেনা আক্তার খান মাহিন, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: ফারুক হোসেন এবং বারসিক কর্মকর্তাবৃন্দ।
নারীরা আজ অনেক এগিয়ে গিয়েছে একথা আমরা সবাই জানি এবং বলি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আজ একবিংশ শতাব্দীতে পদার্পণ করেও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। দেশের বিদ্যমান আইনেও নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য চরম মাত্রায় বিরাজমান। সেজন্য নারীসমাজের পক্ষ থেকে সিডও সনদের পূর্ণ স্বীকৃতি ও বাস্তবায়নের দাবি উত্থাপন করা হলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে বারবার। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণীত হলেও সেখানে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমঅধিকার নীতি হিসেবে ঘোষিত হয়নি। অথচ সংবিধানের ২৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে -কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ-নারী-পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। আজ নারী দিবসের মধ্য দিয়ে নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়িত হোক, সিডও সনদের পূর্ণ স্বীকৃতি ও বাস্তবায়ন হোক এটাই হোক সকলের অঙ্গীকার।