দেশকে জানো, দেশকে ভালোবাসো

ঢাকা থেকে সুদীপ্তা কর্মকার

পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তির অধিকার বঞ্চিত শিশুদের মাঝে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্নকে জাগিয়ে তুলতে এবং তাদের ইচ্ছে শক্তিকে প্রখর করার মাধ্যমে সেই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রেরণা দিতে বারসিক ধারাবাহিকভাবে এই বস্তির শিশুদের সাথে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। এই সকল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় শিশুরা তাদের বর্তমান জীবনের অবস্থা, ভবিষ্যতে তাদের ইচ্ছের স্বপ্ন, দেশের প্রতি ভালোবাসা এইসবের ছবি আকাঁর চেষ্টা করে তাদের অনভিজ্ঞ হাত দিয়ে। যদিও ছবি আঁকার উপরে তাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, কিন্ত এই সকল ছবিতে তাদের অনভিজ্ঞ হাত দিয়েই উঠে আসে তাদের মনের মধ্যে পুষে রাখা ইচ্ছেগুলো, তাদের স্বপ্নগুলো।

53781080_588888981587445_1575972755310903296_n

তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ মার্চ পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তিতে এক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। ‘দেশকে জানো দেশকে ভালোবাসো’ শিরোনামে প্রতিযোগিতাটিতে মোট ২৩ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে যাদের মধ্যে ১৮জন মেয়ে এবং ৫জন ছেলে। এছাড়াও বারসিক এর পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর আলম, ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল এবং সুদিপ্তা কর্মকার অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন।

বস্তিতে নানা বঞ্চনা, না পাওয়ার মধ্যে থাকলেও এই সকল শিশুদের দেশের প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা, তারা তাদের ছবির মধ্যেই সেটা ফুটিয়ে তোলে। দেশকে ভালোবাসার কথা শুনে বেশিরভাগ শিশুই শহীদ মিনারের ছবি আঁকে। যদিও তারা ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে অনেককিছু না জানলেও এটা জানে যে, এই দেশের জন্য লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। তাদের জীবনের বিনিময়েই আমরা একটি স্বাধীন দেশে বাস করি। অনেকে সবুজ গ্রামের ছবি আঁকে, সবুজ গ্রাম এ দেশের প্রাণস্বরূপ। কেউ কেউ বাংলাদেশের পতাকা, জাতীয় মাছ ইলিশ, জাতীয় ফল কাঁঠালের ছবি আঁকে। অনভিজ্ঞ হাত এবং প্রাণভরা ভালোবাসা সব মিলে একটি সুন্দর স্বপ্নের ছবি তারা আঁকে।

54210433_575537749616112_8709398845345234944_n

এই দেশে তাদের জন্য, অন্যদের মত তাদেরও দেশের প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা, কিন্তু শুধুমাত্র বস্তিতে জন্ম বা বস্তিতে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত তারা বঞ্চনার শিকার হয়। তাদের কোমলমতি হৃদয়ে অন্যান্য শিশুদের মতই রয়েছে হাজারও স্বপ্ন, অনেক আশা এবং ইচ্ছে। কিন্তু তারা তাদের ন্যূনতম অধিকার থেকেই যেখানে বঞ্চিত সেখানে স্বপ্ন দেখা এবং তা পূরণের আশা করা তো অনেক দূরের বিষয়। ছোটবেলা থেকেই এই বিভেদ এর মধ্যে তারা বড় হচ্ছে। তাদের শৈশব ঘিরে শুধুই হতাশা। আমরা কি পারিনা তাদের স্বপ্নগুলোকে জাগিয়ে তুলতে? আমাদের একটু সহযোগিতাই পারে তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

54522122_555272544973848_8993396569881444352_n

প্রতিযোগিতা শেষে বারসিক’র প্রকল্প সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যত কষ্টই হোক না কেন নিজেদের মনের ইচ্ছেকে জাগিয়ে রাখতে হবে, আর পড়াশোনা করতে হবে। কারণ পড়াশোনাই পারে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ এনে দিতে।’ তিনি সকল শিশুকে স্কুলে যেতে বলেন। কারণ পড়াশোনার মাধ্যমেই নিজেদের অবস্থানের পরিবর্তন আনা যায়। তিনি সকল শিশুর মাঝে পুরস্কার হিসেবে সাবান তুলে দেন এবং শিশুদের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়ে শিশুদের মায়েদের নজর দিতে বলেন। কারণ অপরিস্কার থাকলে রোগবালাই বেশি হয় যা শিশুদের সঠিক বিকাশে বাধা তৈরি করে।

happy wheels 2

Comments