স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে
ঢাকা থেকে সুদিপ্তা কর্মকার
এ বছরের শুরুতে সারা বিশ^ পরিচিত হয়েছে এক নতুন মহামারীর এর সাথে, ’করোনা ভাইরাস’। আজ পর্যন্ত পুরো বিশে^ কয়েক কোটি মানুষ এই ভাইরাস এ আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করে কয়েক লাখ মানুষ। ভীষণভাবে ছোঁয়াচে এই রোগে বিস্তার রোধে পুরো বিশ^ স্তব্ধ হয়ে যায়। বয়স্ক এবং বাচ্চাদের ঘরে থাকার জন্য বলা হয় এবং খুব প্রয়োজন না হলে সবাইকে ঘর থেকে বের হতে না করা হয়েছে। ঘরে আটকে থাকা শিশুরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বস্তিতে থাকা শিশুদের অবস্থা আরো বেশি খারাপ। করোনায় লকডাউন এর কারণে নি¤œআয়ের মানুষের অনেকের আয় বন্ধ হয়ে যাবার কারণে এই শিশুদের মধ্যে যেমন দৈনন্দিন পুষ্টির অভাব তৈরি হচ্ছে তেমনি স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের ভবিষ্যৎ অনেক বেশি অনিশ্চিৎ হয়ে পড়ছে, শিশুশ্রম এবং বাল্যবিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিশুদের মানুসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হবে এবং ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চিয়তার দিকে এগিয়ে যাবে।
কথা হচ্ছিল পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তির কিশোরী তানজিলা সাথে, বলছিল, ‘করোনার মধ্যে আমরা অনেক কষ্টে আছি, আমরা যেমন খাওয়ার কষ্ট করছি তেমনি আমাদের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’ মিশু বলে, ‘করোনা আমার শিক্ষক হবার স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। এই বস্তির সব বাচ্চারা অনেক দুঃখ কষ্টে রয়েছে।
করোনাকালে বস্তিতে থাকা এই শিশুদের স্বপ্নগুলোর কথা জানতে এবং মাঝে কিছুটা আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করতে এবং তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে বারসিক’র পক্ষ থেকে পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তির শিশু কিশোরের মাঝে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতার আয়োজনের করে। করোনাকালে শারিরীক দূরত্বের কথা বিবেচনা করে ২৪-৩০ নভেম্বরের মধ্যে ধাপে ধাপে শিশুদের সাথে এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাটি করা হয়। ছবি আকাঁর জন্য শিশুদের আগেই সরঞ্জাম দেওয়া হয় যেন তারা বাসায় বসে ছবি আকঁতে পারে। গত ২৪ এবং ২৫ নভেম্বর যথাক্রমে ৪০ জন করে মোট ৮০ জন শিশু কিশোর (মেয়ে: ৫৫, ছেলে: ২৫) এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
প্রতিযোগিতা শেষে একটি পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান সকল প্রতিযোগিকে মাস্ক পড়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। বারসিক’র পক্ষ থেকে সকল প্রতিযোগিকে উপহার স্বরূপ স্কুল ব্যাগ প্রদান করা হয়। বারসিক’র পক্ষ থেকে সুদিপ্তা কর্মকার প্রতিযোগিতাটি সমন্বয় করেন এবং পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তির ভলান্টিয়ার রিয়াজ রাজু প্রতিযোগিতা আয়োজন সহযোগিতা করেন।এছাড়াও বারসিক’র সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম, সহযোগী সমন্বয়কারী ফেরদৌস আহমেদ, এবং বস্তিবাসী নেত্রী ঝুমুর বেগম উপস্থিত ছিলেন।
চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘করোনা মহামারী পুরো বিশ^কেই এক বিশাল কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। মানুষ এখন এর থেকে বাঁচার উপায় খুঁজছে এবং আমরা আশা করি খুব তাড়াতাড়ি এই ভাইরাস এর ওষুধ বের হবে এবং মানুষ এর অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। ততদিন পর্যন্ত আমাদের লড়াই করে যেতে হবে। আমাদের সকলকে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে এবং সেইসাথে সাথে পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের বড় হবার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’
ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘বিপদ আসবে কিন্তু আমাদের ভয় পেলে চলবেনা। আমাদের মনোবল শক্ত করতে হবে আর লেখাপড়াটা চালিয়ে যেতে হবে।’