করোনার নিও নরমাল সময়ের সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন
ঢাকা থেকে সুদীপ্তা কর্মকার
কর্মকারপরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর (কাপ) এবং বারসিক’ এর উদ্যোগে করোনা মহামারীতে ‘নিও নরমাল সময়ের বর্জ্য ব্যবপস্থাপনা’ শীর্ষক এ নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোভিড বর্জ্য, চিকিৎসা বর্জ্যরে দ্বারা পরিবেশ দূষণ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ, প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিতকরণের জন্য দাবি উত্থাপন করে আজ জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
নাগরিক সংলাপে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারসিকের নগর গবেষক মো: জাহাঙ্গীর আলম। বারসিকের ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় এবং পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন কাপের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সান-ইয়াট, প্রকৌশলী আবদুস সোবহান, কুমুদিনী হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা’র) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ^াস, পরিবেশবিদ আবুল হাসনাত, বারসিক’র পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম, সুদিপ্তা কর্মকার, বস্তিবাসী নুরুজ্জামান, কুলসুম বেগম, হাসিনা বিবি, নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাকিল রহমান, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় পরিবেশ সংসদের সভাপতি আবু সাদাত মো: সায়েম প্রমুখ।
সংলাপে বক্তারা বলেন, ‘বর্জ্য উৎপাদন একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। কিন্তু করোনা মহামারীতে বর্জ্য উৎপাদন বহুগুণ বেড়েছে। এই সকল বর্জ্য মানুষ, পরিবেশ ও প্রতিবেশকে ধ্বংস করবে। মেডিকেল বর্জ্য অপসারণের জন্য আধুনিক উপায়ে ব্যবস্থাপনার করতে হবে। কিন্তু করোনার বর্জ্য আমাদের দেশে রাস্তা-ঘাটে সয়লাব হয়ে গিয়েছে। কোভিড বর্জ্য আলাদা আলাদা বিনে না ফেলে, সাধারণ বিনে ফেলা হচ্ছে। এ থেকে জাতি আরও বড় হুমকির মুখে পড়ছে। পরিবেশ-প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে। নাগরিকদের সচেতন হতে হবে।’
বক্তারা আরো বলেন, ‘অনেকেই করোনার এই সব সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের পর রাস্তাঘাটে ফেলে দেওয়ার কারণে এগুলো বৃষ্টির পানিতে ধুঁয়ে চলে যাচ্ছে ড্রেনে, ড্রেন থেকে নদী ও সাগরের তলদেশে গিয়ে নষ্ট করছে জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশ। করোনা থেকে রক্ষা পেতে মানুষের ব্যবহৃত মাস্ক ঝুলছে রাজধানীর বিভিন্ন গাছে, শহরের অলি-গলিতে, ড্রেনে পড়ে থাকছে। শুধু মাস্ক নয়, হাতের গ্লাভসও যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। একজনের ব্যবহৃত মাস্ক-গ্লাভস পা দিয়ে মারিয়ে যাচ্ছেন অন্য কেউ। করোনা সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের পর রাস্তাঘাটে ফেলে দেওয়ার ফলে বাড়ছে দূষণ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। এছাড়া কিছু হাসপাতাল ক্লিনিকের বর্জ্যও যুক্ত হচ্ছে এই দূষণে।’
সংলাপে বক্তারা মানুষ যাতে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী যত্রতত্র না ফেলে রাখে তার জন্য সরকারিভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা, প্লাষ্টিক দিয়ে তৈরি মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার বন্ধ করে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার বাড়ানের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন, ডাম্পিং এর সাথে যুক্ত পেশাজীবীদের পর্যাপ্ত জীবন সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে, কেন্দ্রীয়ভাবে মেডিকেল ওয়েষ্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য একটি সেন্ট্রাল ফ্যাসিলিটি তৈরি করা এবং তেমনি এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, তদারকি, পরীবিক্ষণ ও তথ্য প্রচার করা এবং সবার জন্য বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার জন্য জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পরিকল্পিত উপায়ে বর্জ্যকে ব্যবস্থাপনা করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, রাজধানীর দুই সিটিতে প্রতিদিন প্রায় ৮০০০ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। করোনাকালে এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিপুল পরিমাণ পরিত্যক্ত সুরক্ষা সামগ্রী। করোনার প্রাদূর্ভাবের বর্তমান পর্যায়ে এসে সুরক্ষা সামগ্রীই যেন গলার কাঁটা হচ্ছে নগর জীবনে। ব্র্যাকের এক গবেষণার তথ্যে জানা যায়, দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত চিকিৎসা বর্জ্যের মাত্র ৬.৬ ভাগের সঠিক ব্যবস্থাপনা হয়, বাকী করোনা চিকিৎসা বর্জ্যের ৯৩ ভাগই ব্যবস্থাপনাহীন। তাদের গবেষণায় আরো দেখা গেছে, সারা দেশে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মাত্র ৩৫ টন (১৪.১ ভাগ) সঠিক নিয়মে ব্যবস্থাপনার আওতায়। এর অধিকাংশই আবার রাজধানী শহর ঢাকায় সীমাবদ্ধ এবং মাত্র একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অপসরণ এবং শোধন করা হয়। তাছাড়া বর্জ্য আলাদা করার ব্যবস্থাপনা থাকলেও তা বিনষ্ট বা শোধন করার নিজস্ব ব্যবস্থাপনা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে নেই।