সাম্প্রতিক পোস্ট

রিকু রানী পাল এবং তার শিশু বিকাশ কেন্দ্র

বারসিক নিউজ ডেক্স:
রিকু রানী পাল, নেত্রকোণা জেলার বাখরপুর কুমার সম্প্রদায়ের একজন মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল পড়াশুনা করার। পড়াশুনা শেষে চাকরি করা। তার স্বপ্নের কথা শোনা যাক রিকু’র বয়ানে, “আমি স্কুলে পড়বো এবং কলেজে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশুনা করবো।” অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এবং নিজ পরিবার এবং সমাজের সাথে সংগ্রাম করে রিকু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. পাশ করেছেন। তার এই পড়াশুনা করার পথটা কখনোই সহজ ছিল না। পুরো পথটাই পাড়ি দিতে হয়েছে একা একা।

IMG_20171220_155246-W600সে যখন পড়াশুনা করেছে দেখেছে যে, পাল সম্প্রদায়ের অধিকাংশ ছেলে মেয়েই একদম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই ঝরে পড়ছে। তাদেরকে কেউ উৎসাহ এবং উদ্দীপনা দেয় না। কোন রকম সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া তো অনেক পরের ব্যাপার। সব সময় ভাবতো সে এবং তার সম্প্রদায়ের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যদি একটু খানি সহযোগিতা পেতো তাহলে অনেক কিছুই হয়তো তারা করতে পারতো। সে নিজেই ভাবতো এবং চেষ্টা কতো কিভাবে তাদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করা যায়। এমন সময় একদিন পরিচয় হয় বারসিক এর সাথে। বারসিক তার এই চিন্তাটাকে মূল্যায়ন করলো। পাশাপাশি বদলে দিলো চিন্তা গতিপথ। পরামর্শ দিল অন্যের জন্য বসে না থেকে তুমি নিজেই তো তোমার সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের সাহায্য সহযোগিতা করতে পারো। রিকুর ভাষায়, “ঠিক সেই সময় আ বারসিক এর পরামর্শ নিয়ে ভাবলাম যে কি করা যায়? আমি কি করতে পারি এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য? আমি কি কোনো রকম উপকারে আসতে পারি এই কুমার জনগোষ্ঠির জন্য?”

IMG_20171220_155813-W600পরবর্তীতে ২০১৫ সালে শুরু করে রিকু তার ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্র’। রিকু বলেন, “২০১৫ সালের জুন মাস থেকেই শুরু করলাম সেই ঝড়ে পড়ার আশংকাগ্রস্থ শিশুদের নিয়ে “শিশু বিকাশ কেন্দ্র”।” ১ম থেকে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত যে সকল শিশুরা ক্লাসের পড়া ঠিকমতো উপস্থাপন করতে না পারার কারণে স্কুলে যেতেই অনিহা প্রকাশ করতো। এমনকি তাদের ক্লাসের পড়াশুনা নিয়ে তাদের অভিবাবকদেরও নেই কোন মাথাব্যাথা। থাকবেও বা কিভাবে? তারা তো আর এই পড়াশুনা বিষয়ে কোন কিছু বোঝেনা। তাই নিজের সন্তানদের পড়াশুনাও কোন সাহায্য করতে আবার আলাদা শিক্ষক রেখে পড়াশুনা করাবে সেই সামর্থ্যও নেই পাল সম্প্রদায়ের অধিকাংশ পরিবারে। ফলে সেখানেই থেমে যেত তাদের শিক্ষা জীবন। রিকু’র ভাষায়, “ঠিক এই রকম ছোট শিক্ষার্থীদের নিয়েই আমার শিশু বিকাশ কেন্দ্রের পথচলা।” প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত শিশুদের নিয়ে বসা এবং তাদের একাডেমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, পৃথিবী, মহাবিশ^, দেশ, জাতি, প্রাণী, দেশের ইতিহাস, বিভিন্ন রকম খেলাধুলা, বিনোদন, কবিতা, গল্প ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো রিকু রানী পাঠশালায়।

IMG_20171220_160207-W600দুই বছরের যাত্রায় অনেকখানি সফল রিকু রানীর শিশু বিকাশ কেন্দ্র। সফলতার সেই গল্প শোনা যাক রিকুর কাছ থেকে, “আজ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস। আমি অনেক সাফল্যের সাথে বলতে পারছি যে, আমি সফল হয়েছি; যে সকল শিশুদের নিয়ে আমার শিশু বিকাশ কেন্দ্র সেখানকার সকল শিশুদের লেখাপড়ার মান উন্নয়ন হয়েছে। এখন আর কোনো শিশু বছরের পর বছর ফেল করে না। বরং তারা ভাল ফলাফল করে। প্রতিবছর ২-৩ জন পঞ্চম শ্রেণীতে ‘এ+’ এবং বৃত্তি পেয়েছে। যে সকল শিশুরা বছরে ৪০দিনও উপস্থিত থাকতো না; তারা এখন ৮০% উপস্থিত থাকে।”

IMG_20171220_160336-W600বর্তমানে এই কুমার সম্প্রদায়ের শিশুরা সমসাময়িক প্রায় সকল বিষয়ে অবগত। আজকে শিশুরা তাদের বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিয়োগিতায় অংশগ্রহণ করছে এবং বিভিন্ন পুরষ্কারও পাচ্ছে। এটি এই শিশুবিকাশ কেন্দ্রেরই সফলতা। রিকু রানী পালও অনেক খুশি। রিকু বলেন, “আজ আমি অনেক খুশি। আমি মনে করি এমন করে যদি এরকম পিছিয়ে পরা শিশুদের একটুখানি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া সম্ভব হতো তবেই তারা আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারতো। এবং তারাই হতো আগামী পৃথিবীর সূর্য। যাদের আলোয় আলোকিত হতো এই সোনার বাংলা। নিজের অবস্থান থেকেই যদি একটু ভাবা যেত তবে সত্যি হতো- “আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত’- এই স্লোগান।

happy wheels 2

Comments