সাম্প্রতিক পোস্ট

পদ্মার চরে মিষ্টি কুমড়া চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষক

হরিরামপুর মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় জেগে উঠা লেছড়াড়ঞ্জ ইউনিয়ন। প্রায় ১৫ বছর ধরে জেগে উঠা চরে বসতি শুরু করলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের পিছু ছাড়েনি। প্রতিবছর বন্যা, খরা আর নদী ভাঙ্গন পদ্মা তীরে বসবাস করা মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশেষ করে প্রতিবছর নদী ভাঙনের কারণে জমি নদী গর্ভে বিলীন হয় অপরদিকে বন্যার ফলে আবাদী দোআঁশ মাটি বেলে মটিতে পরিণত হয়। তাই চরাঞ্চলের কৃষকদের প্রতিবছর তাদের শস্য চাষ পুঞ্জিকা পরিবর্তন করে চলতে হয়। এক বছরে একটি ফসল চাষ করলেও পরের বছরে জমির মাটির ধরন পরিবর্তন হওয়ায় ভিন্ন ফসল চাষ করতে হয়। প্রতিনিয়তই তাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা নতুন নতুন অভিযোজন কৌশল গ্রহণ করতে হয়।


হরিরামপুর পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষ মাটির ধরন, উপযোগি পরিবেশ, আবহাওয়া পানি ব্যবস্থাপনা সবকিছু বিবেচনা করে এলাকার কৃষকদের আগ্রহ থেকে ২০২০ সালে বারসিক চরাঞ্চলের লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রামচর গ্রামে কৃষক মাইনুদ্দিন বাড়িতে পাটগ্রামচর খরিয়াচর নটাখোলা হালুয়াঘাটা চারটি গ্রামের ১৫ জন কৃষককে বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষে প্রশিক্ষণ প্রদান, বীজ সহায়তা ও কারিগরি পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতার মাধ্যমে মিষ্টি কুমড়া চাষ শুরু হয়। প্রথম বছর ২০২০ সালে পাটগ্রামচর, নটখোলা, গঙ্গাধরদি, হরিহরদিয়া গ্রামে কৃষক লুৎফর, রহমান আলামিন, মাইনুদ্দিন, লোকমানসহ ৭ জন কৃষক ১ একর ৬৬ শতক জমিতে চাষ করেন।


তারই ধারাবাহিকতা পদ্মার চরে অনেক কৃষক মিষ্টি কুমড়া চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ী ও আজিমনগর ইউনিয়নে গঙ্গাধরদি নটাখোলা হরিহরদিয়া পাটগ্রামচর বসন্তপুৃর চরদুবাইল গ্রামে ২৫ জন কৃষক ২৫ বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে চলতি বছরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করছেন।


নটাখোলা গ্রামে যুব কৃষক সেলিম হোসেন জানান, ‘আমি চলতি বছর ৬৬ শতক জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। জমি তৈরি সেচ ব্যবস্থা, বালাই ব্যবস্থা, আগাছা পরিস্কার ও জমি তৈরি বাবদ মোট খরচ হয় ১০ হাজার ৩০০ টাকা। আমি প্রথমবার বিক্রি করেছি ৩০ হাজার টাকায়। আরো ৩ বার আমি বিক্রি করতে পারবো। আশা করছি ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে পারবো।’ তিনি আরও জানান, ‘মিষ্টি কুমড়া চাষে তেমন ঝামেলা নাই। জমি তৈরি করে সারিবদ্ধ করে গর্ত করে গোরব সার দিই। তারপর বীজ লাগাই এবং প্রয়োজন মত সেচ দিই এবং আগাছা পরিস্কার করি। বালাই দমনের জন্য বিষটপ ফেরোমিন ফাদ ব্যবহার করি। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে জমিতে খড় বা কাইশা নলখাগড়া বা ধনছা ডালপালা বিছিয়ে দেই।’


হরিরামপুর পদ্মার চরে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রামচর নটাখোলা হরিহরিদিয়া গঙ্গাধরদি জয়পুর গ্রামে ২৫ জন কৃষকের মধ্যে লুৎফর রহমান রাজ্জাক মোল্লা রাসেল আলামিন সেলিম কাশেমসহ অনেক কৃষক মিষ্টি কুমড়া চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন। চরের চাষকৃত মিষ্টি কুমড়া এলাকায় ক্ষুদ্র পাইকর এসে কিনে নিয়ে যায়। আবার ফরিদপুর কানাইপুর হাট মানিকগঞ্জ ঝিটকা এবং ঢাকায় বিক্রি করতে নিয়ে যায়। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতিমণ মিষ্টির কুমড়া বাজার ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা বিক্রি করা হয়।


চরাঞ্চলে কৃষকরা মাঠের জমিতে বড় আকারে চাষ করছে যেমন লাভবান হচ্ছে। অপরদিকে গ্রামের নারীরা ২ শতক ৩ শতক ৫ শতক যার যেটুকু বসতবাড়ির আশে পাশে আলান পালানে পতিত জায়গায় মিষ্টিকুড়া চাষ করে নিজ পরিবারের খাবারের চাহিদা পূরণ করছেন। তার মধ্যে হরিহরদিয়া গ্রামের শিলা আক্তার বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে ২ শতক জায়গা ছিল। সারাবছর এমনি পড়ে থাকত। এ বছর আমি ১০টি গর্ত করে মিষ্টি কুমড়া লাগাইছি কোন আমার খরচ নাই। যে মিষ্টি কুমড়া ধরছে তাতে নিজেরা খাওয়ার পর বাজারে বিক্রি করতে পারবে। আমার মত অনেক নারীরা বাড়িতে লাউ শিম চালকুমড়া মিষ্টি কুমড়া চাষ করছে।’


হরিরামপুর উপজেলা উপসহকারি কৃষি অফিসার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘হরিরামপুর চরাঞ্চলে মিষ্টি কুমড়া চাষে অনেক লাভবান হচ্ছে। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকি এবং যাতে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারে সে বিষয়ে সহায়তা প্রদান করি।’

happy wheels 2

Comments