তারুণ্যের দেশ বাংলাদেশ
:: ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল::
আমাদের তারুণ্য আর আমাদের স্বপ্নের কথা সবসময়ই বলতে ইচ্ছে করে। বাংলাদেশ নামক দেশটার নামের সাথেই স্বপ্নের একটি দারুণ যোগাযোগ রয়েছে। এককথায় তারুণ্যের স্পর্ধিত আকাঙ্খা থেকেই এই দেশ-স্বাধীনতা আর তার পথচলার শুরু। কেমন আছে আজকের বাংলাদেশ আর তার তারুণ্যই বা কি ভাবছে?
আমরা একবিংশ শতাব্দির এই প্রান্তে এসে পৌছেছি। বিশ্ব এগিয়েছে তার আপন শক্তিতে। এই শক্তির একদিকে যেমন ধ্বংসের দামামা রয়েছে অন্যদিকে রয়েছে সৃষ্টির। হাজার-লক্ষ মাইল দূরত্বকে মানুষ জয় করেছে তার দারুণ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা দিয়ে। আমরা পৃথিবীর যে প্রান্তে থাকি না কেন নিমেষেই পৌছে যেতে পারি আফ্রিকার ঘনবনের পাশে বা সাহারার মরুময়তায়। আমরা যেমন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন বৃক্ষকে চোখে দেখতে পারি তেমনি আমরা আমাদের ভাবনাকে সহভাগিতা করতে পারি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে। এই যোগাযোগ আমাদের আজ একটি গ্রামে পরিণত করেছে। আমরা আর কোন একটি মাধ্যমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নই! তাইতো আমরা দেখি যখন কোন দুর্যোগ হয় বা কোন ধ্বংস সংগঠিত হয় আমরা বিশ্ববাসী এক হয়ে যেতে পারি নিমিষের একটি বার্তায় বা টুইটে।
বাংলাদেশের তারুণ্য আর তাদের স্বপ্নের রেখাচিহ্ন
বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহর সর্বোত্র আজ প্রযুক্তির জয় জয়কার। এই সুবাদে গোপালগঞ্জের ভেন্নাবাাড়ি সম্মিলিত উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথী হালদার বলে উঠে দেশ ও জাতির জন্য ভালো কিছু করতে চাই। আবার রংপুরের কাউনিয়ার শাহীন একটি বাল্যবিবাহ ঠেকানোর জন্য ফেইসবুকে ক্যাম্পেইন শুরু করে দেয়। কখনও একজন জয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষকে উৎসাহিত করে বৃক্ষরোপণ করা কেন জরুরি আবার একজন নীলা নারীদের আরো এগিয়ে আসার জন্য বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে পৃথিবীর দেশে দেশে মালালাদের কাহিনী নিয়ে। একজন মুস্তাফিজ সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসে ক্রিকেটের বিশ্ব দরবারে।
সাতক্ষীরার দুই মেধাবী যুবক দোকানদার তৌহিদুর রহমান বাবু মল্লিক ও ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মিজানুর রহমান মিজান এক দশকের প্রচেষ্টায় আবিস্কৃত হয়েছে জ্বালানি খরচ ছাড়া বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট। যা সার্কিট, ব্যাটারি, মোটর ও জেনারেটর দিয়েই তৈরি হয়েছে। এভাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলজুড়ে তরুণরা আবিস্কার করছে নিজেদের ভিন্নভাবে-ভিন্ন রঙ এ সাজাচ্ছে এই দেশকে। ড্রোন আবিস্কার আর তার ব্যবহার নিয়ে এদেশের তরুণরা প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে। নিত্য নতুন গাড়ী-বাড়ীর মডেল আর অভিনবত্য যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণদের অধিকারে। এই দেশকে আসলেই কি আটকিয়ে রাখতে পারবে?
আগামী বাংলাদেশ তারুণ্যের
আগামী বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের স্বপ্নগাঁথায়। একজন জোলাস নামের ছেলে আজ ঘরে বসেই বিশ্বব্যাপী আউট সোর্সিং করে আয়ের পথ করে নিচ্ছে এবং তার অধীনে কাজ করছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। এভাবে সজীব, ফাহাদ, নকিবরা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ধনবাড়ি নামের একটি সাধারণ উপজেলায় আজ তারুণ্য পৌছে গেছে প্রযুক্তির আলো নিয়ে। নেত্রকোনার সম্মিলিত যুব সমাজ এগিয়ে এসে বলছে ভাটি অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে, একইভাবে সুন্দরবন সলিডারিটি টিম সুন্দরবনকে রক্ষার শপথ নিচ্ছে। দুর্নীতিকে হত্যা করে স্বাপ্নিক স্বদেশ গড়ার প্রত্যয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করছে সততার মেলা। সততাকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে তারা নৈতিকতার শিক্ষা, আদর্শের চর্চা আর দেশপ্রেমে মানুষকে জেগে উঠার আহবান জানাচ্ছে। তারা স্কুলকে পরিচ্ছন্ন যেমন করছে ঠিক একইভাবে শিক্ষা নিচ্ছে এ দেশকে পরিচ্ছন্ন করে-দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য।
সততার মূল মন্ত্রে উজ্জীবিত তরুণরা
বাংলাদেশের তরুণরা আজ কেবল নতুনকে গ্রহণ আর সৃজন করছে না তারা অভিজ্ঞজন বা প্রবীণদেরকেও পাশে নিচ্ছে এগিয়ে যাবার শক্তি হিসেবে। নতুন আর পুরানোর সম্মিলনকে আজকের তরুণরা এক করে নিয়ে এগিয়ে যাবে। সবকিছুর পর এই দেশের সামনে আজ যত সম্ভাবনার দোয়ার উন্মুক্ত হয়েছে তা কেবল তারুণ্যের ছোঁয়ায়। এই তারুণ্য আগামীতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আর লাখ শহীদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।