এসো মুক্তিযোদ্ধার গল্প শুনি-২

                                        মা- বাবাকে চিঠি লিখে পালিয়ে যুদ্ধে যায় নন্দ দুলাল গোস্বামী

 

আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ ॥

“বাবার গচ্ছিত ১৫০ টাকা থেকে ৫০ টাকা চুরি করে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করি। একটা সময় গেছে মুক্তিযোদ্ধের সনদ লুকিয়ে রেখেছি। আর সে সময়টা পরিবর্তন হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী বাড়াতে এখন ভুয়া মুক্তাযোদ্ধারাও মুক্তিযোদ্ধা সাজতে চায়। স্বাধীনতার ৪৬ বছর এসে আমাদের সংবর্ধনা দেবার সময় একটি প্রাইজ বন্ড হাতে তুলে দেওয়া হয়। যা এখনও ভাঙ্গাতে ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।” এমনটাই ক্ষোভের সময় কথাগুলো বলছিলেন মানিকগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা নন্দ দুলাল গোস্বামী।

1 (1)
দুলাল গোস্বামীর বাড়ি মানিকগঞ্জ ও ঢাকার ধামরাই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বালিয়াটী গ্রামে। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটী গ্রামের মৃত বীরেন্দ্র কুমার এর পুত্র নন্দ দুলাল গোস্বামী মহান ১৯৭১ সালে বালিয়াটী ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। এর আগে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণ সরাসরি শুনেছেন। ২৫ মার্চ এর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এর পর ২৭ শে মার্চ বালিয়াটীতে একটি মিছিল হয়। এসব দেখেই যুদ্ধে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।

মূলত তিনি বালিয়াটী ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন অংকের শিক্ষক নূরুল আফসার খান স্যারের অনুপ্রেরণায় মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “স্যার আমাদের ব্যাচ থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের এ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাঝে ১৪ জনের একটি তালিকা করে। তিনি আমাদের যুদ্ধে যাবার অনুপ্রেরণা দেন। নূরুল স্যার আর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণই আমাকে ঘরে বসতে থাকতে দেয়নি।”

দুলাল গোস্বামী বলেন, “২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা হলেও আমরা ৭১ এর সেপ্টেম্বর মাসে আমার বাবার গচ্ছিত ১৫০ টাকা থেকে ৫০ টাকা চুরি করি। এরপর মা-বাবাকে একটি চিঠি লিখে পালিয়ে যুদ্ধে চলে যাই। আমরা টাঙ্গাইলের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বাহিনীর ১নং সেক্টরে রিক্রোট হই। আমাদের নাগরপুর উপজেলার লাউহাটি মাঠে আমাদের ২১ দিন ট্রেনিং শেষে আমরা যুদ্ধে নেমে পড়ি। আমরা অনেক সন্মুকযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করি। যুদ্ধের পর আমরা অস্ত্র জমা দেই। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার পর, পরবর্তী সরকার আসার পর, আমাদের মুক্তিযোদ্ধের সনদ লুকিয়ে রাখতে হয়েছে।”
এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় তিনি আরো বলেন, “সাটুরিয়া জাহাঙ্গীর আলম নামে এক মুক্তিযোদ্ধা সাটুরিয়া হাটে সবজি বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়।” তিনি বলেন, “কয়েক বছর আগে বিজয় দিবসে আমাদের সম্মাননা দেওয়া হয় তখন উপজেলা প্রশাসন আমাদের ৩০০ টাকার প্রাইজ বন্ড হাতে তুলে দেন। তা আজও ভাঙাতে পারিনি।”

1 (2)

মুক্তিযোদ্ধা দুলাল গোস্বামী জানান, বছরে দুই দিবসের দিন তাঁদের সম্মান দেওয়া হয়, এ যেন শোপিচ আচরণ, পরের দিন যদি সরকারি অফিসে যান তাদের বসতে বলা হয় না। এ মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন, তাঁরা সবাই যদি মনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ধারণ করতে পারতেন তাহলে অনেক বেশি উপকৃত হতে পারতেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও অনেক ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা অনলাইনে আবেদন করেছেন, খুব কষ্ট হয় এতটা বছর কতবার যাছাই বাছাই গেলে তখন আসল না, এখন কেন আসছেন।” সরকার যেন সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের অর্ন্তভুক্ত করেন তার দাবি করেন।

এ মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন বর্তমান সরকার ৯৬ সালে প্রথম ৩০০ টাকা করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী নির্ধারণ করেন। বর্তমানে ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন যা সত্যিই প্রসংসনীয়। কিন্তু আমলারা যেন তাঁদের একটু মন থেকে সম্মান করুক এটাই কামনা করেন।

নন্দ দুলাল গোস্বামী দাবি করেন তার উপজেলায় সাটুরিয়া থানার সামনে একটি গণকবর আছে, যা ৪৬ বছরেও উদ্ধার করা যায়নি। এটি তিনি দাবি করেন।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে রাষ্ট্র কোন জিনিসটা বেশী টানে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন , আমার মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে এটিই সবচেয়ে বেশী দামী।

happy wheels 2

Comments