বিজয় উৎসব উদ্যাপন করলো নগরের স্বল্প আয়ের মানুষেরা
ঢাকা থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলম
ঢাকা শহরের স্বল্প আয়ের মানুষদের উদ্যোগে এবং বারসিক’র সহায়তায় ২৪-৩০ ডিসেম্বর এক সপ্তাহব্যাপী মোহাম্মাদপুর থানার অন্তর্গত পাইওনিয়ার বস্তিতে বিজয় উৎসব ২০১৯ পালিত হলো। উক্ত বিষয় উৎসবের উদ্দেশ্য হলে বস্তিবাসী শিশু, কিশোর, যুব, নারী এবং পুরুষদের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহীদ, আহত ও বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের মাতৃভূমির জন্য দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ বস্তিবাসী সকল বয়সী মানুষকে জানানো। যাতে অংশগ্রহণকারীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারে এবং তাদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়, দেশকে ভালবেশে দেশের উন্নয়নে কাজে নিজেদেরকে শামিল করতে পারে।
বিজয় উৎবের শুরুতে উক্ত বস্তিতে বসবাসরত শিক্ষার্থী এবং যুবদের নিয়ে পাঁচটি চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় যেখানে মোট ১০২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা শেষে প্রতিটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের কাছে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের নির্দেশে পাকিস্তানী শোষকদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মুক্তিপাগল বাঙালিরা দীর্ষ নয়মাসের যুদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে তারা দেশকে স্বাধীনতা এনে দেন, এনে দেন একটি নতুন দেশ, এনে দেন একটি লাল সবুজের পতাকা। বিনিময়ে আমাদেরকে হারাতে হয়েছে ৩০ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা, ২ লাখ মা বোনের ইজ্জ্বতকে।
আলোচনায় বলা হয়েছে, যাদের রক্তের বিনিময়ে, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ আমরা পেয়েছি তাদের জন্য আমাদের হৃদয় নিংড়ানো ও কৃতজ্ঞতা থাকতে হবে। এই জন্য আমরা জাতির পিতার পাশাপাশি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হৃদয় দিয়ে স্মরণ করতে চাই সারা বছরের পাশাপাশি এই ডিসেম্বরে। কারণ এই ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস, এই ডিসেম্বর আমাদের পাকিস্তানি শোষকদের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার মাস। সপ্তাহব্যাপী এই বিজয় উৎসবে বস্তিবাসী নারীদের জন্য চারটি বালিশ খেলা ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয় এবং সবাইকেই তাৎক্ষণিকভাবে সান্তনা পুরস্কার প্রদান করার আগে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানানো হয়।
পুরস্কার বিতরণীর আগে মোহাম্মাদপুর থানার সব-ইনেস্পেকটর খায়রুল বাসার জীবন বলেন, ‘আমি প্রায় দুই বছর এই থানাতে কাজ করছি এবং প্রতিদিনই আমি এই বস্তির মধ্যে দায়িত্বের কারণে আসতে হয়। আমি কখনও আপনাদের হাসি মুখ দেখিনি। আপনাদের এতগুলো হাসিমুখ একবারে দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। আমি জানি আপনারা অনেক কষ্ট করে এই বস্তিতে থাকেন। আপনারা এই শহরের জন্য অনেক ভালো কাজ করছেন। দেশ এখন অনেক উন্নতি করছে। দেশের উন্নয়নের জন্য আপনাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।’
বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ^াশ বলেন, ‘আমি পরিবেশ নিয়ে কাজ করি প্রায় বিশ বছর ধরে। এখানকার পরিবেশ আরো ভালো থাকলে আমার ভালো লাগতো। বারসিক যে আয়োজন আপনাদের জন্য করেছে তা আপনাদের জন্য অনেক আনন্দের, একই সাথে মুক্তযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক কিছু শেখার ও জানার সুযোগ করে দিয়েছে। কারণ আপনারা জানেন অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দেশ পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা যেটা এখনও আমরা করতে পারি নাই। যার কারণে এই ঢাকা শহরে আপনারা বস্তিতে অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করছেন। আপনাদের এই কষ্ট লাঘব করার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি আপনাদের নিজেরও। আপনাদের আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে, কোথায় আপনাদের জন্য সরকার সুয়োগ তৈরি করেছে সেগুলো জেনে সেটা গ্রহণ করতে হবে। আপনারা যদি ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করতে পারেন তবে তারা আপনাদের মতো এত কষ্ট করবে না। তাই সবার আগ হলো ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা।’
গতকাল তিনটি কিশোরী সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে তিন বালিশ খেলা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে এক সপ্তাহ ধরে চলমান এই উৎসবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, মোহাম্মাদপুর থানার সব-ইনেস্পেকটর খায়রুল বাসার জীবন, বারসিকের পরিচালক সৈয়দ আলী বিশ্বাস, সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম, সহসমন্বয়ক ফেরদৌস আহমেদ, সহযোগি কর্মসূচী কর্মকর্তা সুদীপ্ত কর্মকার, গোপাল কুমার দাস প্রমূখ।