ঘিওরে এলাকা উপযোগি খেসারি চাষবাদ

ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে শ্যাময়েল হাসদা
বাংলাদেশে খেসারি ডাল পরিচিত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এই ফসলের চাষ দিন দিন কমছে। খেসারি শীতের ফসল, বাংলাদেশে শীত মৌসুমে এই ফসলের চাষ হয়। খেসারি প্রথমে শাক, তারপর ডাল, খেসারির ভূসি গরুর খাদ্য, জ¦ালানি ও জমির জৈবসার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খেসারি কলাই উৎপাদনে বিশেষভাবে পরিচিত মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা ঘিওর উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন চক (জমি)। বিশেষ করে কুন্দরিয়া হেলাচিয়া, ঘোস্তা-মান্তার ও বরুনার চকসমূহে খেসারি উৎপাদিত হয়।


হেলাচিয়া ও কুন্দরিয়া এলাকা গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা খেসারি কলই উঠানো, মলন ও পালা দেওয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ খেসারি মাথায় নিয়ে বাড়ির উঠানে নিচ্ছে, কেউ মাঠের ভিতর পালা দিচ্ছে, কেউ ক্ষেত থেকে খেসারি তুলছেন। মাঠে খেসারি তোলা নিয়ে ব্যস্ত কৃষক।


কৃষকরা আমন মৌসুমের ধান থাকা অবস্থায়ই কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে কাদাময় জমিতে খেসারি বীজ ছিটিয়ে দেন। তারপর আমন মৌসুমের ধান কাটার পর খেসারি কলাই বেড়ে উঠে। চৈত্র্য বৈশাখ মাসে তাদের জমি থেকে খেসারি কলাই সংগ্রহ করা হয়। এর জন্য বাড়তি কোনো সার কিংবা কীটানাশক ব্যবহার করতে হয় না। খেসারি উৎপাদন খরচ একেবারেই কম। এতে কৃষক বেশি লাভবান হয়।


হেলাচিয়া গ্রামের কৃষক মোঃ ইউসুফ ফকির (৫০) বলেন, ‘আমার ২.৫ পাখি (বিঘা) জমিতে খেসারি বুনেছি। এবার মোটামুটি ফলন ভালো হয়েছে। আর খেসারিতে তেমন কোনো সার দিতে হয়নি। জমিতে এমনিই সার হয়। আমি বাপ দাদার আমল থেকে এই চাষাবাদ করে আসছি। আমরা খেসারির সাথে চৈতাসরিষা ও মইসন্যা চাষ করি।’
হেলাচিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম (৫৫) বলেন, ‘খেসারি চাষে শ্রম খুবই কম। ক্ষেতে বুনা আমন মৌসুমের ধানের মাঝে খেসারি ছিটিয়ে দেয়া হয়। আমন মৌসুমের ধান কাটার পর আস্তে আস্তে খেসারি বেড়ে উঠে কোনো যতœ নিতে হয় না।


কুন্দরিয়া কৃষক-কৃষাণীর সংগঠনের সভাপতি সুবোল সরকার বলেন, ‘আমাদের কৃষি পদ্ধতি চিরায়ত কৃষি-কৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত। আমাদের এ অঞ্চলে গভীর জলের ধান ও খেসারির চাষ পদ্ধতি চলমান আছে। এখানে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে কীটনাশক ও সার ব্যবহার হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খেশারির ও আমন মৌসুমের ধানের বীজ প্রতিবছর বাড়িতেই রাখি। খেসারি ও আমন মৌসুম ধানের চাল আমাদের দেহের জন্য খুব উপকারী। আমন মৌসুমের ধানের চাল খাবার কারণে আমরা সুস্থ আছি।’

happy wheels 2

Comments