সাম্প্রতিক পোস্ট

গাছ আমাদের ছায়া দেয়, অক্সিজেন দেয়

নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
‘প্রতিবছর বজ্রপাতের ফলের আমাদের দেশের শতাধিক কৃষক, গাছপালা ও প্রাণীসম্পদ মারা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের দেশে বাড়ছে বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট দুযোর্গ। যার মধ্যে অন্যতম হল বজ্রপাত। এক সময় বজ্রপাতকে সাধারণভাবে দেখা হত, কিন্তু কালক্রমে এটি একটি আপদের রূপ ধারণ করেছে। হাওর এলাকা বা খোলা মাঠ এলাকায় বজ্রপাতের পরিমাণ বেশি হয়। অধিক মূনাফার আশায় আগ্রাসী বিদেশী প্রজাতির বৃক্ষ রোপণের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনশীল ও দুর্যোগ প্রতিরোধী স্থানীয় গাছের সংখ্যা দিন দিন বিলুপ্তির পথে। এছাড়াও কৃষি ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিমাত্রায় ব্যবহারে দিন দিন হারিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের জানা-অজানা অনেক প্রাণ। দুর্যোগের ফলে আমাদের দেশে প্রতিবছর জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও মানবসৃষ্ট কারণ যেমন-নদী/জলাশয়/হাওর/ছড়া ভরাট, অবাধে বৃক্ষ নিধন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ড, বিলাসী জীবনযাপন, জীবাশ্ম জালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডল দিন দিন উত্তপ্ত হচ্ছে এবং এর ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে অস্বাভাবিক গতিতে। তাই প্রকৃতি মাঝে মধ্যেই আমাদের সাথে বিরূপ আচরণ করছে, যা প্রাণীকূলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ¡াস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে বিগত কয়েক বছর যাবৎ যুক্ত হয়েছে বজ্রপাত। প্রতিবছর বজ্রপাত দূর্ঘটনার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে এবং মারা যাচ্ছে মানুষসহ অসংখ্য প্রাণ। সময়ে অসময়ে বজ্রপাতের ফলে গ্রামীণ জনপদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ছে। নিরাপদ জনজীবন সুনিশ্চিত করতে তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সকলকে সাংগঠনিক বা ব্যক্তিক অবস্থান থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী দুর্যোগ সহনশীল ও প্রতিরোধী বৃক্ষ রোপণ এবং বায়ু দূষণ রোধে ভূমিকা রাখতে হবে।


ঘাতক বজ্রপাত দুর্যোগ থেকে রক্ষায় সারা দেশের ন্যায় নেত্রকোনা অঞ্চলের সরকারি/বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/স্বেচ্ছাসেবী জনসংগঠন ও জনগোষ্ঠীর ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিবছর বৈচিত্র্যময় বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সহযোগিতায় দরুন বালি গ্রামের তিনটি জনসংগঠনের উদ্যোগে (অক্সিজেন যুব সংগঠন, ফুল পাখি কিশোরী সংগঠন, রাখাল বন্ধু কৃষক সংগঠন) বজ্রপাত মোকাবেলায় দরুন বালি গ্রামের নতুন রাস্তার দু’পাশে ৩০০টি তালের বীজ রোপণ করা হয়েছে। তাল বীজ রোপণ কর্মসূচিতে কাইলাটি ইউনিয়ন দুর্যোগ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির দু’জন সদস্যসহ তিনটি জনসংগঠনের মোট ৩৪ জন যুব, কিশোর-কিশোরী ও কৃষক-কৃষাণী অংশগ্রহণ করেন। নেত্রকোনা সদর উপজেলার আর্তমানবতার সেবক, পরিবেশ বন্ধু ও বৃক্ষ প্রেমিক কবিরাজ আব্দুল হামিদ কর্মসূচিটি বাস্তবায়নে ২০০টি তাল বীজ দিয়ে সহযোগিতা করেন এবং ১০০টি বীজ সংগঠনের সদস্যরা সংগ্রহ করেন।


যুব সংগঠনের সদস্য ও কর্মনূচির অন্যতম উদ্যোক্তা পরাগ আহমেদ তাল বীজ রোপণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, ‘স্থানীয় জাতের বৈচিত্র্যময় গাছের সংখ্যা আশংকাজনক হারে হ্রাস পাওয়ার ফলে প্রাকৃতি তার ভারসাম্য দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। বজ্রপাতের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে, আর এর ফলে প্রতিবছর নেত্রকোনা অঞ্চলে অনেক মানুষ ও প্রাণীসম্পদ বজ্রপাত দূর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসমাম্য নষ্ট হওয়ায় এলাকায় বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সম্মূখীন হতে হচ্ছে বারবার। তাই আমরা সংগঠনের সদস্যরা প্রত্যেকে কমপক্ষে ২টি করে বৈচিত্র্যময় গাছের চারা ও তাল বীজ রোপণ করে পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি।’


তাল বীজ রোপণ কর্মসূচির অন্যতম সহযোগি আর্তমানবতার সেবক, পরিবেশ বন্ধু ও বৃক্ষ প্রেমিক কবিরাজ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর যে পরিমাণ গাছ কাটছি তার অর্ধেকও গাছ লাগাই না। আমাদের এলাকায় এখন আর উঁচু গাছ নাই বললেই চলে। তাই আমাদের প্রত্যককে তাল, খেজুর, সুপারি ও নারিকেল জাতীয় গাছ রোপণের দিকে নজর দিতে হবে। কেননা উচু গাছ বজ্রপাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। তাই আসুন আমরা সকলে মিলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাল গাছ রোপণ করি ও বজ্রপাত থেকে বাঁচি।’
গাছ পরিবেশের অন্যতম উপাদান, গাছ মানুষ তথা প্রাণীকূলের পরম অন্যতম বন্ধু। গাছ সকল ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের জানমাল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গাছ আমাদের ছায়া দেয়, বেঁচে থাকার রসদ অক্সিজেন দেয়, ঝড়, বজ্রপাতসহ নানান ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করে। তাই সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাল বীজসহ বৈচিত্র্যময় গাছের চারা রোপণে এগিয়ে আসলে এলাকার পরিবেশ যেমন সুরক্ষিত হবে তেমনি বজ্রপাতসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও আমরা সুরক্ষিত থাকবো। আর এক্ষেত্রে আমাদের নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।

happy wheels 2

Comments