কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদগুলো মানুষ ও বন্য প্রাণীর খাদ্য
রণজিৎ বর্মণ শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)
আমাশয় প্রতিরোধ করে ও রক্ত পরিস্কার থানকুনি পাতা, সর্দ্দি কাশি সারতে তুলসি পাতার তুলনা হয় না, সকাল সন্ধ্যা মাথা ব্যাথার বেশ উপকারি কপালি ভাঙ্গা গাছ এ সব কথা বলছিলেন রবিবার বিকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র আয়োজনে শ্যামনগর সদর ইউপির কাছরাহাটি গ্রামে কুড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলায় ৮৬ প্রকার উদ্ভিদ নিয়ে স্টল প্রদানকৃত বয়স্ক গৃহিনী বাসন্তি রানী (৬২)।
মেলায় স্টল প্রদানকৃত কাচড়াহাটি গ্রামের রেনুকা রানী বলেন, ‘শতমূলি এলাকা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাকৃতিক পরিবেশে এটি গড়ে উঠে, শতমূলি অনিন্দ্রা দূর করে।’ ‘বিশল্ল করণী গাছ সাপে কাটা রোগিদের জন্য ব্যবহার করা হয়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ব্রাক্ষ্রী শাক খুব উপকারী।’ এসব কথা বললেন সুমিত্রা মন্ডল (৪৬)। ‘কলমি শাক মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে, নাটা গাছ কৃমি নাশক, ঈশাণমূল বিষনাশক চিরবসন্ত গাছের পাতা ডায়াবেটিকস এর জন্য উপকারী’-এ কথা বললেন গৃহিনী কনিকা রানী,অর্চনা রানী ও অন্যান্যরা। এ রকম কয়েক শত অচাষকৃত বৃক্ষরাজি নিয়ে হাজির হয়েছেন কাছরাহাটি পাড়া মেলায় প্রায় এক কুড়ি গৃহবধু। মেলায় আসা দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে যেন তারা আনন্দ ভরপুর ছিলেন। প্রত্যেকের চোখে মুখে ছিল বিভিন্ন প্রকার ঔষধি বৃক্ষের গুনাগুণের ছাপ।
পাড়া মেলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইপিএলসি ফেলো গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদগুলো মানুষ ও বন্য প্রাণীর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গ্রামীণ অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও অন্যান্য বন্য প্রাণী সংরক্ষণের লক্ষ্যে অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা জরুরি।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার কাঙ্গয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইকোপিস লিডারশিপ সেন্টার যৌথভাবে একটি ফেলোশিপ প্রদান করেছে আমাকে। যেটিতে কুড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সনাক্তকরণ, শ্রেণিকরণ, সংরক্ষণ, ব্যবহার, বিকাশ ও জনগোষ্ঠির ব্যবস্থাপনায় অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয় অর্ন্তভুক্তি করা হয়েছে।’
পাড়া মেলায় সরজমিনে দেখা যায় স্বপন মন্ডল ও স্ত্রী অনিমা রানী ১২১ প্রকার, রেনুকা রানী ৮৬ প্রকার, সুমিত্রা মন্ডল ৪৭ প্রকার, অর্চনা রানী ৬৭ প্রকার, কনিকা রানী ৫৬ প্রকার কুড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত উদ্ভিদরাজি নিয়ে হাজির হয়েছেন । এছাড়া আরও হাজির হয়েছেন তুলসি মন্ডল, সবিতা গাইন, পাবর্তী বিশ্বাসসহ অনেকে।
মেলা শেষে প্রত্যেক গৃহিনীকে কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদরাজি সংরক্ষণে উৎসাহিত করতে বারসিকের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন ইপিএলসি ফেলো গবেষক পাভেল পার্থ, বারসিক শ্যামনগর অফিসের ইনচার্জ পার্থ সারথী পাল, সাংবাদিক ও শিক্ষক রণজিৎ বর্মণ, চ্যানেলআই পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর রিপোটার্স ক্লাবের সভাপতি গাজী আল ইমরান, অনলাইন নিউজক্লাবের সভাপতি মারুফ হোসেন মিলন, বারসিক শ্যামনগরের কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ জোয়ারদ্দার, বাবলু জোয়ারদ্দার, বিশ্বজিৎ মন্ডল, বিধান মধু, মফিজুর রহমান, মনিকা মন্ডল প্রমুখ।