চিত্রশিল্পী রফিক বইয়ের রাজ্য থেকেই একজন সাদা মনের মানুষ
নজরুল ইসলাম তোফা::
সারা বিশ্বের মনীষীদের বইয়ের নেশার প্রতি দৃষ্টি দিয়ে মানব জীবনকে এক দৃষ্টান্ত মূলক উক্তি দিয়েছিলেন টলস্টয়। সেটি ঠিক এমন যে, ”জীবনে মাত্র তিনটি জিনিসের প্রয়োজন বই, বই, এবং বই।” জ্ঞান অর্জনের প্রধান মাধ্যমই হচ্ছে বই। সুতরাং জীবনকে সফলতার আলোকে আলোকিত করার প্রধান উপায় হচ্ছে বই। তাই তো ভালো বই পড়েই জ্ঞান অর্জন করে যথাযথ প্রয়োগ ঘটিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক পরিবর্তনের চিন্তা করাটাই বাঞ্চনীয়। পৃথিবীতে যারা পুস্তক পড়ে বড় হয়েছেন এবং জগৎ বিখ্যাত সফল মানুষ হয়েছেন, তারাই তো অনেক বেশী বেশী জ্ঞানার্জনেই পুস্তক পাঠে সময় দিয়েছেন। সারা বিশ্বের বরেণ্য মনীষীর জীবন ইতিহাস ঘাঁটলে এমন কথার সত্যতা চোখে পড়বেই। বইয়ের পাতায় পাতায় ডুবে দিয়েই ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, যুবরাজ ফাতিক, আল রাযী, ইবনেসিনা, ইবনে রুশদ, মাদাম মেরি কুরি, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং কবি আল মাহমুদসহ বহুসংখ্যক জ্ঞান পিপাসুরাই পুস্তক পাঠে যেন ইতিহাস সৃষ্টি করে সবার জ্ঞাতার্থেই রেখেছেন। মহৎ জীবনের আলোকে আজও তেমনি ভাবেই বই পড়ুয়া অসংখ্য ব্যক্তির সৃষ্টি হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে।
বিশ্ব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ আলোকিত ব্যক্তির অধ্যায়ের মাঝে আর না গিয়ে বলতে চাই যে, শৈল্পিক চেতনার অধিকারী সত্য, সুন্দর ও মঙ্গলের দিক বেছে নিয়েই শৈশবের একাকিত্বে যে বলিষ্ঠ পুরুষ, পুস্তক পাঠের মধ্য দিয়ে আজও সহকারী অধ্যাপক পদে অবস্থান করে বইয়ের জগতে যুবরাজ হয়ে রয়েছেন। এমন এই মহৎ জীবনযাত্রার সামান্য খণ্ডচিত্র তুলে ধরারই প্রয়াস মাত্র। তিনিই বইপ্রেমিক, রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক বা চিত্রশিল্পী মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার। ডাক নাম রফিক।
বিস্ময়কর বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রফিক ছোট কাল থেকেই জ্ঞান পিপাসু ছিলেন। তিনি মানবতার কল্যাণে জ্ঞান সাধনার একটি বৃহৎ প্লাটফর্ম হিসেবে শিক্ষকতায় নিজেকেই নিয়োজিত রাখতে চান এবং সেখানেই তার চরম আনন্দ। তিনি বলেন, “যারা তাঁর সাহচর্যে এসেছে, কিংবা তাঁর খোঁজ রাখেন, তারাই জানেন যে, জ্ঞান আহরণে তাঁর কী আকুল আগ্রহ, কি তীব্র নেশা!” কিশোর কালেই যেন সকল কুচিন্তা দূর করে, সময় নষ্ট না করে শুধুমাত্র বইয়ের নেশায় ডুব দিয়েছিলেন, যখনই কোনো নতুন পুস্তক হাতের নিকট পেয়েছেন কিংবা কোনও সৎ, জ্ঞানী ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছেন তখনই নিজের অন্যান্য সব কাজ ফেলে দিয়ে আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে নিবিষ্ট মনে তাঁদের আদর্শে চলার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, “জ্ঞান সাধনার জন্য ছোটবেলা থেকে পুস্তক, পত্রিকা সংগ্রহ এবং পড়ার নেশাটি প্রকট ছিল।” যখন গ্রামে ডাকঘর ছিল না তিন কিলো দূরেই একটি ডাকঘরে গিয়ে পছন্দের দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা ডাকযোগে টাকা মার্নি অর্ডার করেই সংগ্রহ করতো। কারণ এই যে, সপ্তাহে দু’দিন হাটে যাওয়া হতো বলে তখনকার লোভনীয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা নেয়া হতো এই ভাবে। তখনকার দিনে প্রতি হাটবারেই ৩/৪টি করে পত্রিকা এক সঙ্গেই পেতেন। ৩/৪ দিন সময় লাগত ঢাকা থেকে ডাকযোগে পত্রিকাগুলো আসতে এবং ঐ খবরই তাঁর কাছে তখন টাটকা মনে হতো। এমন ভাবেই শুরু হয় তাঁর জ্ঞান চর্চার জগৎ। এমন সাদা মনের মানুষের নাম অবশ্যই স্বর্ণাক্ষরে লেখা হোক বা না হোক, বই পড়ে নিজস্ব কর্মকে অনেকাংশেই গুছিয়ে নিয়েছেন।
তিনি তাঁর শৈশবের স্মরণীয় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি অকপটে বলতে থাকেন। উল্লেখ করার মতো হচ্ছে, রেডিওতে স্বদেশ কিংবা বিদেশের খবর ছোট বেলা থেকেই তিনি শুনতে পছন্দ করতেন। যেমন: বি বি সি, ভয়েস অব আমেরিকা, কায়রো, পিকিং, আকাশ বাণী, টোকিও, তেহরান, জাপান, জার্মান ও রেড়িও মস্কোসহ আরও অনেক যা এখন তাঁর আর মনে পড়ছে না বলেই জানালেন। তিনি প্রত্যেক হাট বারে হাটে গিয়ে পরিচিত বইয়ের দোকানে দোকানে বই পছন্দ করতেন এবং জ্ঞান অর্জনের ভালো বই পেলেই ক্রয় করতেন। ছোটবেলা থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যেই শিশুদের মন এবং তাদের মেধাকে খুবই গুরুত্বের সহিত দেখতেন। তিনি তাদের বিভিন্ন আদর্শিক দিকটা চিন্তা করেই অজস্র পুস্তক সংগ্রহ করতেন। আজও সংগ্রহ করছেন মুক্তিযুদ্ধের উপর অনেক সচিত্র ইতিহাস।
তিনি জানান, শুধুমাত্র বই সংগ্রহেই ব্যস্ত ছিলেন না।বই সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিও করেছেন। ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রামে রউফাবাদ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মানসিক প্রতিবন্ধীদের প্রতিষ্ঠানে ইন্সটাকটর হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে অল্প কিছু দিন চাকুরি করার পরপরই ভালো না লাগায় রাজশাহীতে আবার চলে আসেন এবং ১৯৯৮ সালে বগুড়া মেডিকেল কলেজে দুই বছর চাকুরি করেই আবার সেখানেও ভালো না লাগায়, সেই চাকুরিটাও ছেড়ে দিয়ে রাজশাহীর নিজ বাড়িতে চলে আসেন।
বলে রাখি, এর আগেও তিনি বগুড়া আর্ট কলেজে ১৯৯৬ সালে যোগদানের পর সেখানেও কেন যে মন বসাতে পারছিলেন না। সে কথা তিনি প্রকাশ করেননি। তাছাড়াও তিনি ঢাকায় একটি মিনার্ভা অফসেট প্রিন্টিং এ বেশ কিছু দিন চাকুরি করে সেটিও ছেড়ে দেন। এতোগুলো প্রতিষ্ঠানে চাকুরি ছাড়ার পর তাঁর চাকুরি করার ইচ্ছেটা কিন্তু বলবত ছিল। পরে তিনি রাজশাহীর একটি জনপ্রিয় শিল্প ও সংস্কৃতির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয় এ গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের শিক্ষক হন। সেখানেই ২০০১ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করার পর এখনও তিনি পদোন্নতি নিয়েই সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আছেন।
লেখককে জানান, বাকি জীবনটা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই থাকতে চান। তিনি আরও জানালেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি বহু প্রবন্ধ বইয়ের মাঝেই অনেক আনন্দ পান। প্রবন্ধের চাহিদা তাঁর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমন প্রিয় বই ছাড়াও যেমন: বিভিন্ন ভাষার অভিধান, পুরাকীর্তির কোষ, পরিভাষা, লৌকিক জ্ঞান, ভাষা বিজ্ঞাপন ও ভাষা বিষয়ক বই, জীব ও সাহিত্যকর্ম, রবীন্দ্রনাথের রচনা সমগ্র সহ রবীন্দ্র চিত্রাবলীর উপর প্রায় সকল গ্রন্থই তাঁর রয়েছে। জানা যায়, সেগুলোর মূল্য এক লাখ টাকারও বেশী। নজরুল বিষয়ক বই, বিবিধ প্রবন্ধ সংকলন, সাহিত্য গবেষণা ও সমালোচনা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসের কবিতার উপরে বই, মানব কল্যাণ কাব্য, নাটকের টেকনিক্যালের বই, একুশের উপর কবিতা অন্যান্য বহু বই, ফোকলোর, ইতিহাস,যোগ ব্যায়াম, খেলা ধুলা, ধর্ম, নাচ, সঙ্গীত, সংস্কৃতি, সমাজ কল্যাণ, সমাজ বিজ্ঞান, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, কাঠ বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, ভেষজ বিজ্ঞান, পশু ও মৎস বিজ্ঞান, কীট-পতঙ্গ বিজ্ঞান ও কীটতত্ত্বের বই, হোমিও চিকিৎসা ও ঔষধ বিজ্ঞান, পশু পালন ও পশু চিকিৎসাবিদ্যা, চিকিৎসার ইতিহাস, দর্শন ও মনোবিদ্যা, ভূপ্রকৌশন ও কারিগরি বিদ্যা, প্রাণী বিদ্যা, পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, উদ্যান তত্ত্ব, ভূগোল, গণিত, স্হলপথ জলপথ এবং আকাশ পথে উপর বই, সাংবাদিকতা, আইন, লোক প্রশাসন, শিক্ষা, চলচ্চিত্র ও চিত্রকলা, জীবনী গ্রন্থমালা, ভাষা আন্দোলন গ্রন্থামালা সহ বহু অফিস আদালত সম্পর্কিত পুস্তক রয়েছে।
ষড়ঋতুর উপর ছড়া কবিতা গানের বই, ছবির বই আলাদা আলাদাভাবে অনেক গুলো পুস্তক রয়েছে। রুবাইয়াত এর উপর প্রায় ৫/৬ টি বই রয়েছে। স্থাপত্য শিল্প, ভেষজ চিকিৎসাও ভেষজ গুনাগুনের বহু পুস্তক। সর্বোপরি বিভিন্ন মসলার গুনাগুন সম্পর্কিত বই, স্কাউট, শ্রবণ প্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, মানসিক প্রতিবন্ধীর উপরেও বই রয়েছে। ব্যাংক ও এনজিও উপর তাঁর সংগ্রহে রয়েছে অনেকগুলো বই। ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্পের উপর নানা ধরণের পুস্তকও সংগ্রহে রয়েছে। তাছাড়াও পদবীর উপর বেশ কয়েকটি বই রয়েছে। টেলিভিশনের সাংবাদিকতা, উপস্থাপনা ও কারিগরি দিক নিয়েও বই রয়েছে।
মোঃ রফিকুল ইসলাম তালুকদার নিজ বাসভবনেই কোমলমতী বহু শিশুদের ড্রইং এবং হাতের লেখা শেখান। সব বয়সী মানুষরা সে সুযোগ পেয়ে থাকে। তিনি জানালেন, প্রতেকটি ভাষার ও লেখার একটি ব্যাকরণ রয়েছে, যেটা লোকে জানে না। বিধায় বই দেখে তাঁরা ভালো লেখা লিখতেও পারে না। সুতরাং সংগৃহীত বই দেখিয়েই তিনি তাদেরকে যত্নের সহিত অনুশীলন করিয়ে থাকেন। তিনি চারুকলার শিক্ষক হওয়ায় চারুকলার সকল বিষয়ের উপরেই আলাদা আলাদা ধরনের অনেক বই রয়েছে। যেমন: পেন্সিল ড্রইং, পেন ড্রইং, পেন্সিল স্কেচ, পেন স্কেচ, মোম রঙ, প্যাস্টেল রঙের ছবির উপরে ওয়াটার কালার ছবি, তেল রঙের ছবির উপর, পোট্রেইটের উপর, বিখ্যাত ব্যক্তিদের পোট্রেট, শিশুদের পোট্রেট এবং বড়দের পোট্রেট। এছাড়াও তাঁর আছে সৌন্দর্য দর্শন অথবা নন্দনতত্ত্বের উপরে কমপক্ষে দু’শো মতো জনপ্রিয় পুস্তক ও ম্যাগাজিন।
তাঁর সুখী জীবনে জন্য ও সৎভাবে চলতে যা জানা প্রয়োজন রয়েছে তার প্রত্যেকটি বিষয়ের উপর বই সংগ্রহটাই আগে। বই সংগ্রহ করে পড়ার অভ্যাসটি বলা যায় নিত্যদিনের সঙ্গী। সেই ছোটবেলা থেকেই আজ অবধি বই সংগ্রহের পাশাপাশি তিনি অনেক আগের দিনের দেশীয় পয়সা সংগ্রহের নেশায় মত্ত ছিলেন। এমন ভালো লাগার অনেক পয়সা একবার তাঁদের ঘরে চুরি হওয়ায় সেই গুলো সংগ্রহে রাখতে পারেননি। তিনি জানালেন, যখন ভোটের সময় হয় তখন ভোটের কাগজ সহ পোস্টার সংগ্রহ করতেন এবং যত্ন সহকারে সেগুলো রেখে দিতেন। এভাবেই তিনি ছোট থেকেই সংগ্রহের নেশায় ডুব দিয়েছেন।
আজও পুরোপুরিভাবে পুস্তক সংগ্রহের নেশায় উঠে পড়ে লাগেন। বলা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ছাত্র অবস্থা থেকেই আজ অবধি অনেক বেশি পুস্তক সংগ্রহ করেছেন।
১৯৭৩ সাল হতে বই সংগ্রহ এবং পড়ার মধ্য দিয়েই বহু জ্ঞান পিপাসু ব্যক্তির সান্নিধ্য পেয়েছেন। পড়ার ঘরেও নামিদামি ব্যক্তির সান্নিধ্যসহ অনেক উপদেশ গ্রহণ করেছেন। তাঁর কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী ভালো লাগার জায়গা ছিল পুস্তক পড়া শুনার ঘর।তিনি শৈশর থেকে আজঅবধি এমন ঘরে যেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তিনি জানালেন, তাঁর বাবা মোঃ বিরাজ উদ্দিন তালুকদার, মাতা সালমা বেগম ইসলাম ধর্মের আদর্শে পরিপূর্ণ জীবন পরিচালিত করেছেন। এমন এই আদর্শিক বাবা-মার সুসন্তানকে যেন কখনোই বই ক্রয় ও পাড়ায় নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেনি। শৈশবে শিক্ষা জীবনে তাঁর বাবা মায়ের সৎ এবং আদর্শ জীবন ধারাকে কর্মে প্রতিফলন ঘটিয়ে ধর্মীয় বই পড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই তিনি শৈশবেই ধর্মীয় বই সংগ্রহ পড়তেন এবং আজও পড়ছেন। এ ধারার সংগৃহীত মূল গ্রন্থের মধ্যেই কোরআন শরীফ ও সহীহ হাদিস উন্নতম।
তাছাড়াও আরও ইসলামী ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন বই। যেমন: বোখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ী, ইবনেমাজাহ্, আবুদাউদ, মুয়াত্তা ইমাম মালেক এর সব খন্ডই রয়েছে। তাঁর কাছে সব ধারার অনেক বই সংগ্রহে রয়েছে। এই গুনী ব্যক্তির শিশু ও কৈশোর কাল কেটেছে গ্রামের বাড়ি হরেক রকম বইয়ের মধ্যে। ছোটবেলায় খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তিনি জীবনে কখনোই খেলা ধুলা বা গান বাজনা করবেননি। বলা যায়, খেলা ধুলায় তাঁর মন বসতো না। ছোট বেলায় তাঁর অনেক বন্ধুই ছিল কিন্তু পরবর্তীতে একটি বইয়ে যখন পড়েছিল- ‘যার বন্ধু যত বেশী তার শত্রু ততই বেশী’। তাই ঠিক সে সময় সে জ্ঞানের আলোকে নিজেকেই গুটিয়ে নিয়ে একাকিত্বে চলতে চেষ্টা করেছেন। বই সংগ্রহে তিনি যেন অন্য লোকের চেয়ে একটু আলাদা এই কারনে যে, তিনি মনে করতেন, ভালো বই শুধু যে জ্ঞান চর্চা বা গবেষণার জন্য উপযুক্ত হবে তা কিন্তু নয়, চরিত্র গঠনের জন্যেও ব্যতিক্রমী ভালো বইয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি জীবনের শুরুতে পড়াশোনা করেছেন, জয়পুর হাট জেলার আঁকলাস, শিবপুর, শ্যামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং হাই স্কুল নবম শ্রেণী পর্যন্ত। তার পরেই মর্ত্তুজা পুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপরে রাজশাহী এসে রাজশাহী চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে বি, এফ, এ (প্রাক) ডিগ্রীতে ভর্তি হন। সেখান থেকে বি, এফ, এ এবং এম,এফ,এ (গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ) থেকে সম্মানের সহিত ২য় বিভাগে পাস করেন। তিনি বলেন, শিক্ষাজীবনে সকল ক্লাসে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাশ করেন। উল্লেখ্য যে, তিনি রাজশাহী চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পরবর্তীতে সেই প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ এবং অনুষদ হয়েছে। সার্টিফিকেট অনুসারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বই প্রেমী ছাত্র।
তাঁর সংগৃহীত পুস্তক বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রীদেরকে উচ্চ শিক্ষার জন্য পড়তে দিতেন। এমন বইগুলো পড়ে অনেকেই এম ফিল ও পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এতেই তাঁর নাকি অনেক আনন্দ। তাঁর আরও আনন্দিত হওয়ার অনেক দিক রয়েছে। তিনি বলেছেন, ২০১৩ সালে রমজান মাসে ঈদের পরে যে সোমবার দিন ছিল, সেই দিনে চাঁপাই নবাবগঞ্জের সোনা হাটির সকল প্রাথমিক ও মাধ্যম বিদ্যালয়ের প্রধানদেরকে নিয়ে হাতের লেখার উপর সেমিনার এবং ওয়ার্কশপ এর আয়োজন হয়ে ছিল।তিনি সেখানে অনেকের উপস্থিতির মাঝেই সম্ভবত ছিলেন,সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব মজিবুর রহমান, হাইকোর্টের বিচারপতি, জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসার। সেখানে বহু সুনামের সহিত হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্ট হিসেবে এই ব্যাকরণ বিদ্যার অধিকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তালুকদারকে নিযে যান। তিনি বলেন, সেখানেই তাঁকে খুব সম্মান করেছিলেন। এমন এ সম্মান আজীবন মনে রাখার মতো।
তিনি স্বপরিবারকে নিয়ে নিজ পরিকল্পনায় শৈল্পিক চেতনায় নির্মিত বাসা ভাটপাড়ায় থাকেন। রাজশাহী শহরের পশ্চিমে ঐতিহ্য পূর্ণ চিড়িয়াখানার উত্তরেই সুফিয়ানের মোড়ে, বাড়ি নম্বর ৯৬, আরও পরিস্কার ভাবে ঠিকানা বলেছেন, ডাকঘর- রাজশাহী জি, পি, ও, থানা- রাজ পাড়া, রাজশাহী। জানা দরকার তাঁর স্হায়ী জন্মস্থান। গ্রাম- শিবপুর, ডাকঘর- শিবপুর, উপজেলা- ক্ষেতলাল, জেলা- জয়পুরহাট। এস এস সি সার্টিফিকেট অনুসারে তাঁর জন্ম তারিখ ২০ মার্চ ১৯৭১ সাল। প্রকৃত পক্ষে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১১ অক্টোবর ১৯৬৫ সালের সোমবার দিন। ১৯৯৭ সাল ৩ এপ্রিল মুসলিমা খাতুনকে সহধর্মিণী করেছিলেন। তিনিও একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী। দীর্ঘদিন পর ২০১০ সালের ২০ জানুয়ারীতে তাঁর এক মাত্র মেয়ে রিসতা ইসলামের জন্ম হয়। তিনি সন্তানকে নিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ নিজস্ব বইয়ের ঘরেই পড়েন। শুধু জুম’আর নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়েন। অবসরেও মেয়েকে নিয়ে টিভিতে খবর, টক শো, গান এবং শিক্ষা মূলক অনুষ্ঠান দেখে আনন্দ উপভোগ করেন। আর বাঁকি যতটুকু সময় থাকে সেসময় টুকু শুধুই বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকেন। সুন্দর জীবন গড়তে পুস্তকের কোনো বিকল্প নেই। সুদক্ষ এমন এ চিত্র শিল্পী ও বই পড়ুয়া কিংবা বইপ্রেমিক মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার মনে করেন যে, ‘ভালো পুস্তকেই ভালো জ্ঞান, খারাপ পুস্তকে খারাপ জ্ঞান।’ অভিজ্ঞ লেখকগণের অনেকগুলো পুস্তক পড়ে সর্বজ্ঞানে জ্ঞানানীত হয়ে যথাযথ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, “পড়, পড় এবং পড়, পড়েই জীবন গড়।”