বাড়ির আঙিনায় সবজি দেখলে বেশ ভালো লাগে
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
‘বাড়িতে নানান ধরনের সবজি থাকলে খুব ভালো লাগে। বাড়ির চারিপাশে বিভিন্ন ধরনরে সবজি দেখা যাবে। এ সবজি যখন মন চাইবে তখন তুলতে পারবো। ক্ষেতের সবজি তুলতে বেশ ভালোই লাগে। বাড়িতে যে সবজি হয় তা আমার দাদা মাঝেমধ্যে গ্রামের পাশে যে বাজার আছে সেখানে বিক্রি করতে নিয়ে যেতেন। আমাগো গ্রামের অনেক লোক এসে আমাগো বাড়ি থেকে সবজি কিনে নিয়ে যেতেন। তাই বাড়িতে সবজি থাকলে যেমন দেখতে ভালো লাগে তেমনি তুলতেও ভালো লাগে।’
উপরোক্ত কথাগুলো বলেছে শ্যামনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুন্দরবন গুচ্ছ গ্রামের শতবাড়ির প্রবীণ কৃষক আব্দুল গণির ৩য় শ্রেণীতে পড়া নাতনী সাদিয়া খাতুন। বিগত সময়ে মাঠ পর্যবেক্ষণে শতবাড়ির উৎপাদিত সবজির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সাদিয়া খাতুনের সবজি উঠানো দেখে তার সাথে কথা হয়।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/11/pic-3..jpg)
ছোট সাদিয়ার কাছে তাদের বাড়িতে কি কি সবজি লাগানো হয় বা এখন কি কি সবজি ক্ষেতে আছে তা জানতে চাইলে সাদিয়া বলে, ‘আমাগো বাড়ির পাশে চুনা নদীর পানি নোনা। এই নোনা পানিতে তেমন সবজি হয় না। তারপরও আমার দাদা অনেক দিন ধরে বাড়িতে মেলা ধরনের সবজি চাষ করেন। বর্ষার সময় লাউ, ঝিঙে, তরুল, ভেন্ডি, শসা, বেগুন, পুইশাক লাগায়। এখন লালশাক, পালনশাক, ওলকপি, মুলা, পুইশাক, বেগুন, ঝাল এসব চাষ করে। আমিও মাঝে মধ্যে দাদা ও আম্মুর সাথে ক্ষেতে কাজ করি।’
সাদিয়া আরো বলে, ‘আমার টাকা লাগলে আমাগো গ্রামের যে কয়টা বাড়ি আছে তাদের বাড়িতে সবজি দিযে এসে টাকা নিয়ে আসি। মাঝে মধ্যে টাকা আগে নিয়ে আসি পরে সবজি দিই।’
এ বিষয়ে সাদিয়ার আম্মা লতিফুন্নেছা বলেন, ‘কাছে তো আর সব সময় টাকা থাকে না। তাই বাচ্চাদের খাবার খাওয়া টাকা সব সময় দিতে পারিনা। তাই ওরা ক্ষেতে যে সবজি হয় তা বিক্রি করে মাঝে মধ্যে নিজেদের প্রয়োজন মিটায়। এছাড়া আমার সংসারে শ্বশুর শ্বাশুরী, তিন মেয়ে ও আমরা স্বামী স্ত্রী মিলে ৭ জনের পরিবার। নিজেদের জমি জমা বলতে চুনা নদীর চরে ১৫ শতক জায়গা। সেখানে আমরা বারোমাস বিভিন্ন সবজি চাষাবাদের চেষ্টা করি। একটি পুকুর আছে সেখানে বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ হয়। সাথে হাঁস-মুরগি, গরু ও ছাগলও পালন করি। প্রতিবছর আমরা স্বামী স্ত্রী মিলে ৬ মাসের জন্য ভাটার কাজে যাই। বাড়িটায় পুরো দেখেন আমরা দুই মেয়ে ও শ্বশুর শ্বাশুরী। মেয়েরা পড়াশুনার পাশাপাশি সংসারের কাজ ও ক্ষেতের কাজে সহায়তা করে।’
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/11/pic-2..jpg)
তিনি আরো জানান, ‘বর্তমান করোনাকালীন সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়েদের এ কাজে বেশি যুক্ত করেছেন। তাদের বয়স কম হওয়াতেই যাতে বাইরের কোন খারাপ কাজে যুক্ত না হয় সেজন্য বাড়িরে ক্ষেত খামারে কাজে তারা বেশি সময় দিচ্ছে। শ্বশুরের সাথে সবজি চাষ করতে তারা যেন আনন্দ পায়।’
বর্তমান করোনা মহামারী কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে। যে কারণে ছেলে মেয়েরা নানান অসামাজিক কাজে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও অনেক পরিবারের আয়ের পথ বন্ধ থাকায় পারিবারিক নানান ধরনের মনমালিন্য তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য প্রতিটা পেশার মানুষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অবিরাম। সেদিক থেকে ছোট সাদিয়ার মতো প্রতিটা পরিবারের শিশুদের পড়াশুনার পাশাপাশি কৃষিকাজসহ অন্যান্য ছোট ছোটা কাজে যুক্ত করলে তারা যেমন শিখতে পারবে ঠিক তেমনি নিরাপদও থাকবে।