বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছোট্ট স্বপ্ন’র পথচলা

:: রাজশাহী থেকে রাজু আহমেদ বাপ্পী

11825734_434136610127078_7116790901926066421_nআমাদের ক্ষুদ্র এই দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দখল করে আছে যুব সমাজ। এই দেশে অন্য যে কোন বয়সের মানুষের চেয়ে যুবকদের সংখ্যা বেশি। ফলে দেশকে আরো ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও তাঁদেরই অনেক বেশি। যুবকরা চাইলেই একটি সমাজের এবং একটি দেশের অনেক কিছুই পরিবর্তন করে দিতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, আগ্রহ, সাহস এবং উদ্যোগ। প্রাথমিক পর্যায়ে সেই উদ্যোগগুলো ছোট হতে পারে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে যদি ভালো কিছু করার আগ্রহ থাকে তাহলে নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে সেটিকে অনেক বড় করা যায়। এই ধরনেরই একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাহসী ও উদ্যোগী শিক্ষার্থী। তাঁরা শহরের নিম্ন আয়ের মানুষদের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। এই উদ্যোগটির নাম তাঁরা দিয়েছে “ছোট স্বপ্ন”। তাঁদের এই “ছোট স্বপ্ন”র মহৎ কাজটি চোখে পড়বে রাজশাহী শহরের ছোট বনগ্রাম বস্তিতে (ভদ্রা বস্তি) গেলেই। বিকাল সাড়ে ৪টা বাজলেই তাঁরা বস্তিতে হাজির হয়ে যান সেই সাথে হাজির হয়ে যায় বস্তির ছোট ছোট বাচ্চারা, যারা এখনো স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি। তবে ব্যতিক্রমও আছে, কেউ কেউ আছে যারা স্কুলে পড়ে কিন্তু গৃহ শিক্ষক রাখার সামর্থ্য না থাকায় এখানে এসে পড়া শিখে নেয়।

প্রথমদিকে তাঁদের এই কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু এখন এই কার্যক্রমের সাথে যুক্ত আছেন প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক। বর্তমানে বস্তির ৩০ জন শিশু শিক্ষার্থীদের কাছে পড়ালেখা শিখছে। পাঠদানকারী যুবকরাই তাদের বই, খাতা, চক, স্লেট, বোর্ড সরবরাহ করছেন। সেই সাথে সপ্তাহে ৩দিন শিশুদের জন্য খাবার (কেক, বিস্কুট, ফলমূল ইত্যাদি) দেওয়া হচ্ছে। এই সব খরচ চালানোর জন্য তাঁরা তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যদের থেকে প্রতিমাসে সর্বনিম্ন ১০ টাকা এবং শিক্ষকদের থেকে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা করে চাঁদা ধার্য করেছেন এবং সবাই নিয়মিত সেটি প্রদান করেন। এছাড়া বর্তমানে তাঁদের ৩০ সদস্য বিশিষ্ট্য একটি কমিটি এবং নিজস্ব গঠণতন্ত্র রয়েছে। শিক্ষকরা নিয়মিত তাঁদের এই কাজের খোঁজখবর নেন এবং কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন।

এখন পর্যন্ত তাঁদের এই মহৎ কাজে কোন বাধা আসেনি। অনেক মা বাবা আছেন যারা নিজের আগ্রহে তাঁদের সন্তানদের পাঠ গ্রহণের জন্য পাঠান। আবার কিছু অভিভাবক আছেন যাঁরা এ বিষয়ে সচতেন নয়। ফলে এই সমস্যাটি রয়ে গেছে যে, নিয়মিত সব শিশুকে পাওয়া যায় না! এটি একটি সাময়িক সমস্যা বলে তাঁরা মনে করেন। কারণ অভিভভাবকদের সাথে কথা বলে এটি যেকোন সময়ে সমাধান করা যেতে পারে। যুবকদের এই উদ্যোগ এখন পুরোদমে চলছে। কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগ শিশুই নিয়মিত পড়ালেখা করতে আসে।

যুবকদের এই মহৎ কাজের অনুপ্রেরণাটি আসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের “ইচ্ছে” নামের একই ধরনেরই একটি কার্যক্রম থেকে। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী সাজেদুল ইসলাম সম্রাট সুবিধা বঞ্চিত পথশিশুদের নিয়ে “ইচ্ছে” র কাজটি দেখেন এবং তাঁর শিক্ষক ও সহপাঠীদের সাথে সেটি সহভাগিতা করেন। তিনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করেন এবং প্রস্তাব করেন তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এই ধরনের কোন কাজ শুরু করার! তাঁর প্রস্তাবটি সবাই লুফে নেয়। এই উদ্যোগটি তাঁরা প্রথম শুরু করেন ছোট বনগ্রাম বস্তি বা ভদ্রা বস্তিতে বস্তীবাসীদের সাথে আলোচনা করে। বস্তিবাসীদের অনেকেই তাঁদের এই কাজকে স্বাগত জানান এবং সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। এভাবে “ছোট স্বপ্ন” উদ্যোগটির পথচলা শুরু হয় এ বছরের ১৮ এপ্রিল বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়ের উদ্বোধনের মাধ্যমে। যুবকদের এই উদ্যোগটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ একে স্বাগত জানায়। বর্তমানে যুবকরা সপ্তাহে ৬ দিন পাঠদান করছেন এবং বিভিন্ন দিন বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা এই পাঠদানে অংশ নেন।

এই যুবকরা ভবিষ্যতে তাঁদের এই কার্যক্রমটিকে আরো সম্প্রসারণ করতে চান। পাঠদানের জন্য নিজেদের পৃথক একটি ঘর তৈরি করতে চান। তাদের স্বপ্ন, যারা এখানে লেখাপড়া শিখছে তারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত গিয়ে সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। ওই পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনার যাবতীয় ব্যয়ভার তাঁরা বহন করবেন।

“ছোট স্বপ্ন”র নিজস্ব একটি ফেসবুক পেইজ আছে। তাদের সম্পর্কে জানার জন্য ভিজিট করুন-

https://www.facebook.com/-ছোট্ট-স্বপ্ন-পথ-শিশুদের-নিয়ে-সেবামূলক-একটি-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-375114409362632/

happy wheels 2

Comments