খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জলাশয়ের প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা জরুরি
নেত্রকোনা থেকে অর্পণা ঘাগ্রা, গুঞ্জন রেমা, খায়রুর ইসলাম অপু
ভৌগলিক অবস্থাগত কারণে কলমাকান্দা উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম খাল, বিল, নদী ও হাওর দ্বারা পরিবেষ্টিত। তাই এখানকার মানুষের জীবনের সাথে জল ও জলাশয়ের প্রাণী, উদ্ভিদ ও অনুজীবে সাথে রয়েছে পারস্পরিক আন্তঃনির্ভরশীল সম্পর্ক। জলাশয়ে জন্মানো শাপলা, শালুক, শিংড়া, কেওড়ালি ও কলমি শাকের মত উদ্ভিদ এখানকার মানুষের খাদ্য ও আয়ের উৎস। মানুষের পাশাপাশি শামুক, ঝিনুক, সাপ, কেঁচো, ব্যাঙ, কাঁকড়া, মাছ ও অন্যান্য পোকামাকরও জীবন ধারণের জন্য একে অপরের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া জলাশয়কে ঘিরে রয়েছে জলাধার সংলঘœ জনগোষ্ঠী ও মৎস্যজীবীদের জীবন, জীবিকা ও সমৃদ্ধময় সংস্কৃতি। কিন্তু বর্তমানে জলাশয়ের পরিবেশ ও বাস্তু সংস্থানের প্রাকৃতিক বিন্যাস বিনষ্ট হচ্ছে মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। যা জলাশয় নির্ভর মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য সার্বভৌমত্বকে বিপদাপন্ন করে তুলেছে। তাই জলাশয়ের প্রাণবৈচিত্র্যের বিপদাপন্নতা হ্রাসকরণার্থে কি ধরনের উদ্যোগ ও ভূমিকা গ্রহণ করা যায় কলমাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদ কক্ষে এক সংলাপের আয়োজন করা হয়।
সংলাপে আলোচনাকালেউপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. মোস্তফা কামাল চৌধূরী বলেন, “সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য জলাশয় ও জলাশয়ে খাদ্যও দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ এখন একেবারে বেশি পরিমাণে পেতে আশা করে। তাই জলাশয় থেকে যা কিছু সংগ্রহ করছে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে সংগ্রহ করছে। এই ব্যাপারে মানুষের মাঝে আরো সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।”
উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজ্জাক আহমেদ রাজু বলেন, “কলমাকান্দা উপজেলার ছোট বড় হাওরগুলোকে নিয়ে গবেষণা করা হউক। এনজিওরা যেভাবে জলাশয়ের প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষনে কার্যক্রম চালাচ্ছে সেইভাবে সরকারী ও স্থানীয় সরকারকেও ভূমিকা রাখতে হবে। বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক মঞ্জুরুল হক তারা বলেন, “যে কাজে মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত সে কাজেই উন্নয়ন সম্ভব। তবে সর্বপ্রথমে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয় ভাবতে হবে। জলাশয়গুলো মানুষের জন্য খাদ্যের যোগান দেয়। জলাশয়ের প্রাণবৈচিত্র্য যদি মানবসৃষ্ট কারণে নষ্ট হয় তাহলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। আর যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হয় তাহলে তা সংরক্ষণে বিকল্প চিন্তা করতে হবে।”
বিশারা আশার আলো নারী সংগঠনের সভানেত্রী আয়েশা খানম বলেন, “আমাদের গ্রামের পাশে উব্দাখালী নদীতে অনেক ঝিনুক আছে। মানুষ এখান থেকে ঝিনুক তোলে হাঁসের জন্য খাওয়ায়, আবার বিক্রিও করে। যারা ঝিনুক তোলে তাদের উচিত ঝিনুক তোলা বন্ধ করা। আর যদি তুলতেই হয় ছোটগুলা রাইখ্যা বড়গুলা তুলুক, যেন ধ্বংস হইয়া না যায়।”
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলেন, “পূর্বে পাহাড়ি ঢলের সাথে আসা যেসব পলি ফসলী জমিতে পড়ে তা দিয়েই হাওরঞ্চলের জমিগুলোতে বোরো ধান চাষ করা যেতো। এখন ঢলের সাথে বালির পরিমাণ বেশি হওয়াতে পলি কমে গেছে। তাই রাসায়নিক সার বেশি পরিমাণে ব্যবহার করছে। আর এই কারণেও শাপলা, শালুক, শিংড়ার মত খাদ্যের বীজ নষ্ট হচ্ছে। মাছের ডিমও নষ্ট হচ্ছে।”
সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাজ্জাদুল ইসলাম, ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ, ডিএসকে-র কর্মকর্তা মুক্তা পারভিন।
সংলাপে জলাশয়ের বিষয়ে ধারণা পত্র পাঠ করেন উদয় যুব সংগঠনের সম্পাদক সায়েম আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ গোলাম মৌলা।