বিনিময় ও সহভাগিতার মাধ্যমে কৃষকরা কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে পারেন
মানিকগঞ্জ থেকে গাজী শাহাদাৎ হোসেন বাদল
মানিকগঞ্জের পশ্চিম হাট বড়িয়াল একটি কৃষি প্রধান গ্রাম। এই গ্রামের একজন কৃষক মো. বিরাজ মিয়া। ছোটকাল তিনি থে কে কৃষিকাজের সাথে জড়িত। তিনি প্রতিবছর স্থানীয় জাতের সবজি, সরিষা, আখ এবং বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় জাতের ধান চাষ করেন। তবে জলায়ু পরিবর্তনের ফলে আমন মৌসূমে ধানচাষ আগের মত ভালো হয় না বলে তিনি জানান। বোরো মৌসুমে তিনি ব্রিÑধান আবাদ করলেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্যান্য আনুষাঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধির কারণে লাভবান হতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে বিরাজ মিয়া বেজায় হতাশ। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। এমন হতাশ পরিস্থিতিতে তিনি একদিন সবজি নিয়ে কৈতরা হাটে যান। সেখানেই পরিচতি হন আইরমারার কৃষক মো. হালিম খানের সাথে, যার সাথে আলাপচারিতায় তিনি তার হতাশা ঝেরে ফেলে আবার নব উদ্যমে ধান আবাদ করতে শুরু করেন।
কৃষক মো. হালিম খান স্থানীয় উপযোগী ধান পাওয়ার জন্য জাত গবেষণার সাথে জড়িত। তিনি ২২টি জাত নিয়ে তিন বছর যাবৎ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এই ২২টি জাতের মধ্য থেকে এলাকার জন্য তিনি কাইশ্যাবিন্নি, মকবুল ও গাজীসহ কয়েকটি জলবায়ু সহনশীল জাত পেয়েছেন। এ ধানে আবাদ করে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতিতে ভালো ফলন পেয়েছেন। হালিম খানের কথা শুনে বিরাজ মিয়া গবেষণা প্লট দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হালিম খানের গবেষণা প্লট পরিদর্শন করে অভিভূত কৃষক বিরাজ মিয়া। তিনি ওই ২২টি জাতের মধ্যে ধানের গোছা, শীষের ধরন, পানি কম লাগে, তাপমাত্রা ও জলবায়ু সহনশীল কাইশ্যাবিন্নি, মকবুল ও গাজী জাতের ধানের চারা সংগ্রহ করেন। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল এই দ’ুবছরের ওই তিনটি জাত আবাদ করে বিরাজ লক্ষ্য করেন যে, ব্রিধান ২৮, ২৯ এর চেয়ে এ ধানগুলোর ফলন বেশি।
কৃষক বিরাজ মিয়া ধান চাষের এই সফলতা তাঁর গ্রামের অন্য কৃষকদের সাথেও সহভাগিতা করেন মাঠ দিবস আয়োজনের মধ্য দিয়ে। ওই মাঠ দিবসে তাঁর এলাকার স্থানীয় কৃষক ও কৃষাণীরা অংশ নেন। কৃষক বিরাজ মিয়ার মাঠ পরিদর্শনের পর তাঁরা তাঁর কাছে মকবুল ধানের বীজ সংগ্রহ করেন। এভাবে বিরাজ মিয়া ইতিমধ্যে পশ্চিম হাটবড়িয়ালে ১০ জন কৃষককে এ ধানের বীজ দিয়েছেন। ওই কৃষকরা বোরো ও আমন মৌসমে প্রায় ৪ একর জমিতে এ মকবুল ধানের চাষ করছেন। মকবুল ধানের অধিক ফলন পাওয়ায় অন্য কৃষকরাও তাদের এলাকার অন্যান্য কৃষকদের সাথে এ বিষয়টি সহভাগিতা করেন এবং তাদেরকে বীজ প্রদান করেন। বর্তমানে কৃষক হালিম খান, বিরাজ মিয়াসহ আরও অনেক কৃষক এই স্থানীয় জাতের ধান চাষ করছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির মাঝেও তারা ভালো ফলন পেয়েছেন। এ ধান আবাদে তারা জমিতে রাসায়নিক সার কিংবা অতিরিক্ত সেচ দিতে হয়নি। সঙ্গত কারণেই তাদের উৎপাদন খরচ কম বলে এ ধান আবাদে লাভবান হচ্ছেন।
এভাবে কৃষকরা পরস্পরের সাথে বিনিময় ও সহভাগিতার মাধ্যমে কৃষির বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে যেমন সক্ষম হন ঠিক তেমনি কোন ধানে ভালো ফলন হয়, কোন ফসল চাষ করলে জমির মাটি ভালো থাকবে, কিভাবে ক্ষেতের পোকামাকড় ও রোগবালাই লোকায়ত পদ্ধতিতে দমন করা যায় সেই বিষয়টি কৃষক থেকে কৃষকে ছড়িয়ে পড়ে যা কৃষককে উপকৃত ও আশাবাদী করে তুলে। আমরা জানি, কৃিষকাজে কৃষক লাভবান হলে অনিবার্যভাবে কৃষিখাতও যে সমৃদ্ধ হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই!