জয়িতা নারী মুনিরা বেগম
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
“বিয়ে হয়ে যখন স্বামীর বাড়িতে আসি, দেখি একটি চেয়ার, শোয়ার জন্যে একটি চকি আর একটি মাটির বাড়ি ছাড়া কিছুই ছিলো না। তখনো স্বামী বেকার। অবশেষে স্বামী বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে অল্প বেতনে চাকরি পান। তা দিয়ে সংসার চলছিলো না। তখনই নিজে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই, আমারোও কিছু করা দরকার। শুরু হয় আমার অন্বেষণ। আমি শুধু একাই না। আমার সাথে আরো ৫৫ জন নারী আমরা শুরু করি নিজের উপার্জনেই নিজের উন্নয়ন।” উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের মোসাঃ মনিরা বেগম (৩৬) ।
অসামান্য সাফল্য অর্জনের জন্যে মুনিরা বেগম এবার জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ কার্যক্রমের আওতায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরীতে রাজশাহীর পবা উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মানের ভূষিত হয়েছেন। একমূখী কোন উন্নয়নের জন্যে তিনি এই অসামান্য সাফল্য পাননি। তিনি বহুমূখী কার্যক্রমের কারণেই আর্থিকভাবে উন্নয়নের পথ খোঁজার চেষ্টা করছেন। আর সেই সফলতার কারণেই তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরুষ্কারে ভূষিত হন।
মুনিরা বেগম তার নিজের বাড়িটিকে করে তুলেছেন প্রাণবৈচিত্র্যসমৃদ্ধ একটি আদর্শ বাড়ি। নিজে হাঁস ও মুরগি, গরু, ছাগল পালন ছাড়াও জৈব পদ্ধতিতে সবজি চাষ করেও আয় করেন। তার সবজি ভার্মী কম্পোস্ট দিয়ে তৈরি হওয়ায় এলাকায় তার সবজির কদরও বেশি। বাড়ির আনাচে কানাচে গড়ে তুলেছেন নানা জাতের উদ্ভিদ বৈচিত্র্য। বৃক্ষ লতাপাতার সমাহার আর সবুজে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে মুনিরা বেগম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আম, জাম, কাঁঠাল, পেঁয়ারা, সজনা, খেঁজুর, তাল, পিতরাজ, বড়ই, কামরাঙ্গা, ডালিম, পেপে, সোলা কুচু, বোম্বে কচু, মান কচু,ওল কচু, লেবু, শিমুল, বনকাঠাল, বাঁশ, পিপল ট্রি, কেদারের গাছ, মেহগনি, খোকশা, ভাইট, লাটাইয়ের গাছসহ প্রায় ২৭ ধরনের ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষের সমাহার তার বাড়িতে। এছাড়াও নিজে বাড়ির আশপাশে অচাষকৃত কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদবৈচিত্র্যগুলো তিনি সংরক্ষণে বিশেষভাবে অবাদান রাখছেন এবং একই সাথে নিজে খাদ্য এবং ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করেন এবং অন্যকেও ব্যবহার ও পরিচিতি করতে বাগান তৈরি করেছেন।
নিজে একটি সংগঠন তৈরি করে সেখানে গ্রামের নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করে থাকেন। নারীরা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে হাঁস ও মুরগি, কবুতর, গরু ছাগল এবং সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরাও গরু ও ছাগল পালনে উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। মুনরা বেগম নিজেই শুধু স্বালম্বী হচ্ছেন না পাশাপাশি তিনি তদার গ্রামের অন্যান নারীদেও স্বালম্বী করে তোলার জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন। পূর্বাশা নারী সংগঠনের মাধ্যমে নিজেরা মুঠির চাল তুলে সঞ্চয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
মুনিরা বেগমের সংসারে এখন সদ্য সংখ্যা ৫ জন। একজন আদর্শ ও সংগ্রামী নারী হিসেবে সংসারের সকল দিকভাল তিনিই করেন। ছেলেদের লেখাপাড়ার দায়িত্বটিও তিনি সঠিকভাবে পালন করেন। চলতি বছরে তার ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন। স্বামীকে ব্যবসার করার জন্যে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। নিজে হাঁস ও মুরগি, গরু, ছাগল পালনের পাশাপাশি তিনি সেলাইয়ের কাজও করে থাকেন।
মুনিরা বেগম স্থানীয় সরকারের সেবাসমূহ নিজে আদায় করেন এবং একই সাথে গ্রামের অন্যান্য নারীদেরও পেতে সহায়তা করেন। তিনি বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির একজন সদস্য হিসেবে এলাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নারীর সহায়ক উদ্যোগগুলো নিয়ে কাজ করছেন। দীর্ঘ পথ চলতে এই উন্নয়নের পথে তাঁর নানা বাধা বিপত্তিগুলো এসেছিলো। বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় সমস্যাগুলো সমাধানে তাকে সহায়তা করেছে।