বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব

রাজশাহী থেকে সুলতানা খাতুন ও ব্রজেন্দ্রনাথ

রাজশাহীর পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের ছিন্নছড়া একটি গ্রাম হচ্ছে প্রসাদ পাড়া। এলাকার মানুষেরা জানান, এই গ্রামে নানা প্রকারের খাবার প্রসাদ পাওয়া যায় বলে এই গ্রামকে প্রসাদপাড়া বলা হয়। সম্প্রতি এই প্রসাদপাড়া গ্রামেই প্রসাদপাড়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামের সকল শ্রেণীর ও পেশার নারী ও পুরুষদের নিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।


অনুষ্ঠানে ৩১জন নারী পিঠা তৈরী করেন এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসবে প্রতিযোগী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতামূলক এই অনুষ্ঠানে প্রসাদপাড়া, নদীকান্দা ও দর্শনপাড়ার নারী ও পুরুষেরাও অংশগ্রহণ করেন। গ্রামীণ নারীরা তাদের হাতের তৈরি ঐতিহ্যবাহী ৪৫ প্রকার পিঠা প্রদর্শন করেন। এসব পিঠাগুলোর মধ্যে রয়েছে: চাষি পিঠা, ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, খেজুর পিঠা, জামাই পিঠা, কুসলি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, গোল কুসলি, পাটি সাপটা, নকশি পিঠা, নয়ন তারা, পাতা পিঠা, লাভ পিঠা, বিস্কুট পিঠা, রোল পিঠা ইত্যাদি।


অনুষ্ঠানে প্রতিযোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৫ প্রকারের বৈচিত্র্যপূর্ণ পিঠা তৈরি ও প্রদর্শন করে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন প্রসাদ পাড়া গ্রামের গৃহিনী মোসা তাজেমা বেগম। এই প্রসঙ্গে মোসা তাজেমা বেগম বলেন, ‘আমার মা যখন পিঠা তৈরি করতেন তখন আমি খেলনার মতো করে পিঠা তৈরি করতাম এবং সাথে সাথে পিঠার নাম জানতে চাইতাম। তখন মা আমাকে এই সব পিঠার নাম বলে দিতেন। সব নাম মনে রাখতে পারতাম না তবে এখন প্রায় যত প্রকারের পিঠা তৈরি করতে পারি সব পিঠাগুলোর নাম বলতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেশীদের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসলে অনেকে আমাকে পিঠা তৈরি করার জন্য নিয়ে যায়। তাতে করে আমি তাদের কাছে টাকা নেই না। এই কাজ করতে পেরে ভালো লাগে এবং গর্ববোধ হয়। আজকের অনুষ্ঠানে আমি প্রথম স্থান অধিকার করে আমার ভালো লাগছে এই জন্য যে আমি ৪৫ প্রকারের পিঠা তৈরি করতে পারি এবং সেট সবাইকে প্রদর্শন করতে পেরেছি।’


বরেন্দ্র অঞ্চলের পিঠা উৎসবে পুরষ্কার বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন দর্শনপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রমজান আলী, তেতুঁলিয়াডাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন ও রেজাউল হক। সাবেক চেয়ারম্যান প্রতিযোগীদের মাঝে পুরুষ্কার তুলে দেন। গ্রামবাসীরা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব সর্ম্পক স্থাপন করতে পেরেছেন। তাছাড়াও নিজেদেরকে অন্ততঃ দর্শনপাড়া ইউনিয়নের বৈচিত্রময় পিঠা তৈরীকারী গ্রাম হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছেন বলে তারা গর্ববোধ করেন।

happy wheels 2

Comments