রঙ তুলিতে শহীদ মিনার
মানিকগঞ্জ থেকে শাহিনুর রহমান
রক্ত দিয়ে অর্জন করা বর্ণমালা ইতিহাস যেমন গৌরবের, অহংকারের তেমনি বেদনারও। বাংলা ভাষা অর্জনের জন্য রক্ত দিতে হয়েছে বাংলার অকুতোভয় ভাষা সৈনিক রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিঊলসহ নাম না জানা অসংখ্য তরুণ য়ুবকদের। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালি জাতির এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। রক্ত ঝড়েছে ভাষার জন্য রক্ত ঝরেছে স্বাধীনতার জন্য। বাঙালি জাতি পেয়েছে নিজ মাতৃভাষায় চর্চার অধিকার ও লাল সবুজের পতাকা।
বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের জনসাধারণ জাতির এই বীর সন্তানদের অবদান স্মরণ করার জন্য সবার মধ্যে সুপ্ত থাকা মনের ভাব যার যার মত করে মনের ভাব প্রকাশ করেন। জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করার জন্য কখনো তারা তৈরি করেন পাড়া মহল্লায় রঙিন কাগজের কলা গাছের শহিদ মিনার, সম্পন্ন করেন শহিদদের স্মরণে আলোচনা সভা, র্যালি, নাটক, রচনা প্রতিযোগিতা, কবিতা উৎসব, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতাসহ প্রভৃতি বিষয়।
এই প্রেক্ষাপটে জাতির সূর্য সন্তানদের অবদান ও সঠিক ইতহাস নতুন প্রজন্মকে জানানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন হুমায়ূন স্মৃতি কিন্ডার গার্টেন এর পরিচালনা কমিটি এবং শিক্ষকমন্ডলি। ভাষা শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ২৬ শে ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ইং তারিখে হুমায়ূন স্মৃতি কিন্ডারগার্টেন এবং বারসিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। পঞ্চম শ্রেণীর ৪০ জন কমলমতি শিক্ষার্থী নিজেদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে রঙ তুলিতে অঙ্কন করেন শহীদ মিনার।
চিত্রাঙ্কন শেষে প্রধান শিক্ষিকা কোহীনূর আক্তার এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওসমান গনি আসমানসহ আরো উপস্থিত ছিলেন বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়, বাঙ্গালা নব কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সভাপতি মো. তমেজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সেলিনা বেগম, হুমায়ুন স্মৃতি বিদ্যালয়ের জমিদাতা মো. রজ্জব আলী।
হুমায়ূন স্মৃতি কিন্ডারগার্টেনের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আফরিন বলে, ‘ভাষা শহিদ রফিক এর নাম শুনলে নিজের কাছে গর্ব লাগে। তিনি আমাদের ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন তাকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি আসমান বলেন,“ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি তাদের স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিল যার মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৈৗম রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল।” হুমায়ূন স্মৃতি কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষিকা কোহিনুর আক্তার বলেন, “শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার অংকনের মধ্যে দিয়ে নিজেদের দেশ প্রেম ও সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছে যা সুন্দর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে।”
বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, “এই শহীদ মিনার আমাদের মনের ভাব প্রকাশের প্রধান জায়গা। বাঙালি জাতিকে মর্যাদা আর গৌরবের আবস্থান এনে দিয়েছে শহীদ মিনার যার পুরো অবাদন ৫২’র বীর শহীদদের, যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন।