স্বপ্নপ্রত্যয়ী অর্চনা রানীর সংগ্রাম

সাতক্ষীরা থেকে ফাতিমা আক্তার

নারীরা পৃথিবীর জন্ম লগ্ন থেকেই পুরুষের সহযোগি হিসেবে কাজ করে আসছেন। সেই সূত্র ধরে পারিবারিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা ও অগ্রণী ভুমিকা পালন করে। গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি আর্থিক উন্নয়নের জন্য নারীরা নানা ধরনের আয়মূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকেন। তেমনই একজন উদ্যোগী ও সংগ্রামী নারী অর্চনা রানী।

অর্চনা রানীর বাড়ি শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটি গ্রামে। দুর্গাবাটি গ্রাম একটি নদীর বাঁধ ভাঙন কবলিত এলাকা। প্রায় প্রতিবছর এখানে দুর্যোগ হয়, লবণাক্ততা, সুপেয় পানির অভাব, যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক বেশি অনুন্নত থাকায় এখানে বসবাস করা বেশ কঠিন। অনেক কষ্ট করে বাস করে এলাকার মানুষ। অনেকের সাথেই এই গ্রামে পরিবারসহ বাস করেন অর্চনা রানী (৪৫)। স্বামী কালিপদ মন্ডল (৫১)। বড় ছেলে অচিন্ত্য মন্ডল (২৮) ভারতে চলে গেছেন। একটি মাত্র মেয়েকে বছর আগে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলে বিএ অনার্স এ পড়াশুনা করে। ছোট ছেলে চিরঞ্জীত ও স্বামী কালিপদকে নিয়ে অর্চানা রানীর সংসার। দুজনই দিনমজুরি দিয়ে সংসার নামক চাকাটা সচল রাখে এবং চিরঞ্জীত এর পড়াশুনার খরচ যোগায়। তবুও অর্চনা রানীর খুব কষ্ট হয়ে যেত ছেলের পড়াশোনার খরচ যোগাতে। এভাবেই চলছিল তার দিনগুলো।

২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে অর্চনা রানী প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক আলোচনায় সভা, প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ধারাবাহিক অংশগ্রহণ করে আসছেন। দলে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসাবে তাকে ২টি ছাগল ও ৬টি হাঁস-মুরগি সহযোগিতা করা হয়। এছাড়াও তাকে একটি কদবেল ও ছবেদার চারা, কিছু বর্ষাকালীন বীজ সহযোগিতা দেওয়া হয় প্রকল্প থেকে।

প্রশিক্ষণ ও সম্পদ সহযোগিতা পাওয়ার পর অর্চনা রানীর উদ্যোগ বেড়ে যায় বহুগুণ। তিনি বাইরের কাজের পাশাপাশি খুব যতœ করে ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন। এখন অর্চনা রানী ১১টা ছাগল ও ১২টি হাঁস মুরগির মালিক। প্রতিমাসে তিনি ৫০০ টাকার ডিম বিক্রি করেন। কিছুটা পরিবারে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারেন। আগের চেয়ে তিনি এখন অনেক ভালো আছেন। এখন তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন বলে তিনি জানান। অর্চনা রানী বলেন, ‘আমার ছেলে চিরঞ্জীতকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার বড় স্বপ্ন দেখি আমি। সে স্বপ্ন এখন মনে হয় পূরণ করতে পারবো। ধন্যবাদ বারসিক পরিবেশ প্রকল্পকে পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য।’

happy wheels 2

Comments