ঘিওরে প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষায় সবুজ সংহতি গঠন
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
বারসিক’র উদ্যোগে প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় নাগরিক ভাবনা ও সবুজ সংহতি বিষয়ক আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২৫ জুন বানিয়াজুরী আনন্দ বাজারে গণকেন্দ্র পাঠাগারের হল রুমে।
সভায় বানিয়াজুরী ইউনিয়নের নাট্যকর্মী গিনী আলম বলেন, পরিবেশবাদী এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে যেসকল সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের মধ্যে ঐক্য এবং পরিবেশ উন্নয়নে যৌথ সমন্বয় থাকা দরকার। এ লক্ষ্যেই ঘিওর উপজেলায় প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় একটি সবুজ সংহতি (গ্রীন কোয়ালিশন) প্রয়োজন। যার উদ্দেশ্য হতে পারে মানুষকে পরিবেশ-প্রতিবেশ বিনাশী কর্মকান্ড থেকে বিরত করা যাতে প্রকৃতিতে বসবাসরত সকল প্রাণ সুরক্ষিত থাকে।’ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, ‘মাটি, পানি, বায়ুসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণ বন্ধ করতে হবে। মানুষসহ সকল প্রাণের জন্য বাসযোগ্য একটি পুথিবী গড়ে তুলতে হবে এবং একইসাথে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয়, জাতীয় ও আঞ্চলিকভাবে সম্মিলিত সামাজিক জন-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
বানিয়াজুরী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য সাফিয়া বেগম বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় পবিবার থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। যাদের যেটুকু জায়গা আছে তার সঠিকভাবে উৎপাদনে আনতে হবে।’ নালী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য কামনা রানী সরকার বলেন, ‘আমদের সকলকে নিয়ে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। প্রভাষক আশীষ শিকদার বলেন, ‘খেলার মাঠ, পুকুর-খাল, খোলা জায়গার, বৃক্ষ,নদী, পাখি, প্রাকৃতিক জলাধারসহ নিজস্ব সংস্কৃতি সুরক্ষা করেই হোক সকল উন্নয়ন, মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্ব আজ চরম হুমকির মধ্যে।’ তিনি আরও বলেন, এত বিপন্নতার মধ্যেও প্রকৃতি বিনাশী কর্মকান্ড থেকে মানুষ এখনও বিরত হয়নি। তাই তো প্রতিদিন নতুনভাবে ও নতুন কৌশলে প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। এর সর্বশেষ ভয়াবহ পরিণতি পরবর্তী প্রজন্মকে বহন করতে হবে। তবে এ বিপন্নতার মাঝেও এখনও আশার আলো দেখা যায়। গ্রাম-শহরে এখনও অনেক প্রকৃতি-পরিবেশ দরদী সচেতন মানুষ, শিক্ষার্থী, যুবরা প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় জোটগত বা নিজ উদ্যোগে এগিয়ে আসছেন, আন্দোলন করছেন এবং পরিবেশ- প্রকৃতি সুরক্ষায় সচেতন করছেন।’
সভায় প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষা, খাদ্য সার্বভৌমত্ব এবং জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় ঘিওর উপজেলায় গ্রীন কোয়ালিশন গঠন এবং এ সম্পর্কি সমন্বিত নাগরিক কার্যক্রম এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন বক্তারা। সভায় অবঃ শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং যুগ্ম-আহবায়ক কামনা রানী সরকার ও প্রদীপ কুমার করকারকে নিয়ে সবুজ সংহতি (গ্রীন কোয়ালিশন) এর আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্যে বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায় বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ, কৃষিপ্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করা এবং জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা বর্তমান পরিবর্তিত সময়ে একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের সীমাহীন লোভের কারণে আজ প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টি (প্রাণি, বৃক্ষ, লতা-পাতা), পাহাড়, বন, নদ-নদী জলাশয়-জলাধার সবই ভয়াবহ বিপন্নতার পথে। প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল সৃষ্টির সেরা ‘জীব’ বলে দাবিদারদের একটি শক্তিশালী অংশ (অর্থ, বিত্ত, ক্ষমতায় দাপটে কোন কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দেশ) এই বিপন্নতা তৈরির জন্য দায়ী। দেশের কৃষকদের পক্ষে ঋতুভিত্তিক ফসল চাষ পঞ্জিকা অনুসরণ করে ফসল চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। বন্যা, খরা, কুয়াশা, নদীভাঙন, মত প্রাকৃতিক দুর্যোগকে প্রতিনিয়ত সামাল দিতে হচ্ছে। শুধু শহরে নয়, এর প্রভাব পড়ছে গ্রামেও পরিবেশ ও প্রতিবেশ দিনে দিনে মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।