ভেষজ গুণ সম্পন্ন ধুতরা ব্যবহারে সতর্কতা আবশ্যক
চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু
ঝাড় জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ ধুতরা আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে পরিচিত। রাস্তা ঘাটে বন বাদারে অনাদর আর অবহেলায় বেড়ে ওঠে ধুতরা গাছ। সবুজ রঙের স্পষ্ট শিরা ও মধ্য শিরার এ গাছ গুলো উচ্চতায় প্রায় এক মিটারের মতো হয়। সাদা ও কালো এ দু’টি প্রজাতির গাছ চোখে পরে আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এর বড় বড় পাতাগুলো ত্রিকোনাকৃতির হয়ে থাকে। সাদা ধুতরার বোটা পাতা ও গাছ হালকা সবুজ রঙের আরো কালো ধুতরার পাতা বোঁটা ও গাছ অনেকটা বেগুনী রঙ বিশিষ্ট। ধুতরার বৈজ্ঞানিক নাম ডুটুরা মেটেল।
বিশেষত বর্ষা থেকে হেমন্ত প্রায় ৬ মাস ধুতরা গাছের শাখা প্রশাখার মাথায় মৃদু গন্ধ যুক্ত আকর্ষণীয় ফুল ফোটে। সাদা ধুতরা গাছে সাদা ফুল এবং কালো ধুতরা গাছে সাদা ও বেগুনী এ মিশ্র রঙের লম্বাকৃতির ফুল ফোটে। দিনে রোদের আলোয় ফুল কিছুটা সংকুচিত হয়। তিন চার দিন পর্যন্ত তাজা থাকার পর ধুতরার ফুল গাছ থেকে ঝরে পরে যায়। পুংদন্ড ও গর্ভমুন্ড ফুলের ভেতরে অবস্থান করে। ফুল ঝরে যাওয়ার পর গায়ে কাটা যুক্ত গোলাকার ফল হয়। পরিণত ফলের ভিতরে হয় বীজ। আর এ বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয় ধুতরার। ধুতরার পাতা ফুল ফল বীজ ভেষজ গুণ সম্পন্ন হওয়ায় আয়ুর্বেদিক ইউনানী ও হেকিমি শাস্ত্রবিদরা বহুকাল যাবৎ ধুতরার এ সকল অংশ চিকিৎসা কার্যে ব্যবহার করে আসছেন। ধুতরার পাতায় হ্যায়োস্যামাইন, বেলডোনা ও হেনবেন নামক ভেষজ উপাদান থাকে।
হাঁপানী, ব্রংকাইটিস, অনিদ্রা, শারীরের ব্যাথা নিবারণ, টাক মাথায় চুল গজাতে, মুখ থেকে লালাক্ষরণ দূর করতে সঠিক মাত্রায় ধুতরার বিভিন্ন অংশের ব্যবহার ফলদায়ক হয়। তবে একটি কথা প্রচলিত আছে, কেউ যদি ধুতরার ফল বীজ বা অন্য কোন অংশ খায় তবে সে পাগল হয়ে যায়। তাই ভেষজ গুণ সম্পন্ন হলেও প্রক্রিয়াজাত না করে এটির ব্যবহার ক্ষতির কবারণ হতে পারে। এটির ব্যবহারে আমাদের সতর্ক থাকা আবশ্যক।
ধুতরার বিভিন্ন অংশের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার স্নায়ুতন্ত্রকে নিষ্ক্রিয় ও বিকল ও দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করতে পারে। বমি ভাব হতে পারে, মাথা ঘুরতে পারে, স্মৃতি শক্তি বিলুপ্ত হতে পারে, মানুষ ধংসাত্মক আচরণ করতে পারে, মানুষের মধ্যে পাগলামীভাব হতে পারে। ধুতরার রস চোখে গেলে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ভেষজ গুণ সম্পন্ন হলেও ধুতরার ব্যবহারে সব সময় সচেতন থাকা আবশ্যক।
সম্প্রতি পাবনার চাটমোহরের মির্জাপুর-নিমাইচড়া ওয়াপদা সড়কের পাশ থেকে ধুতরা ফল তুলছিলেন নিমাইচড়া ইউনিয়নের সমাজ গ্রামের বাবা দাওয়াখানার মালিক ওয়াহাব ভান্ডারী। সমাজ বাজার ও মির্জাপুর হাটে কবিরাজি গাছ গাছরা লতা পাতা থেকে তৈরি ওষুধ বিক্রি করেন তিনি। ধুতরা ফল থেকে ব্যাথা বেদনানাশক মালিশ তৈরি করেন তিনি। ওয়াহাব ভান্ডারী বলেন, “দশ লিটার পানিতে তিন চার কেজি ধুতরা ফল দিয়ে কয়েক ঘণ্টা জ্বাল দেই। এভাবে তিন দিন জ¦াল দেওয়ার পর এর সাথে ২ লিটার সজনে ছালের রস, ৫শ’ গ্রাম রসুন, পরিমাণ মত কালোজিরা ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে আবার জ¦াল করি। সমস্ত মিশ্রণ যখন এক লিটারের মতো হয়ে আসে তখন এর মধ্যে ২ লিটার তীলের তেল দিয়ে ফের জ¦াল শুরু করি। মিশ্রণ কমে যখন দুই লিটার পরিমাণ হয় তখন নামিয়ে ফেলি এবং স্থানীয় হাট বাজারে ব্যাথা বেদনার উপশমক হিসেবে এ মিশ্রণ মালিশ হিসেবে বিক্রি করি।’