সৌন্দর্যের আরেক নাম মাধবীলতা
সাতক্ষীরা থেকে এস.এম নাহিদ হাসান
মাধবীলতা। ফুলটি দেখলে চিনবে না এমন লোক খুব কম। মানুষ বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে মাধবীলতা গাছ লাগায়। বিশেষ করে বাড়ির প্রবেশ দ্বার, ছাদ, ফুল বাগানে, ঘরের চালে এ ফুলগাছ দেখা যায়। গাছটির ডালপালা ছোট ছোট হয়ে চারিদিক ছড়িয়ে যায় এবং ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়। পুরাতন গাছ হলে ধীরে ধীরে মূল লতাটি বেশ মোটা হয়ে যায়। মাধবীলতার সৌন্দর্য যেকোন মানুষকে মুগ্ধ করে।
লাল সাদা ফুলের মাধবীলতাকে অনেকে পুষ্পন্দ্রে কামী, অভীষ্টগন্ধক, অতিমুক্ত, বিমুক্ত, কামুক ও ভ্রমরোৎসব নামে ডাকে। সাতক্ষীরার মানুষ এ ফুলকে মাধবীলতা নামেই জানে। একদিন সাতক্ষীরার ভোমরা ইউনিয়নে বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার পথে কয়েকটি বাড়িতে মাধবীলতা দেখতে পাই। বৈশাখের তপ্ত দুপুরে মাধবীলতা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। তীব্র সুগন্ধযুক্ত সাদা রঙের ছোট্ট ফুলের মাঝখানে যেন হলুদ রঙা টিপ। গাছের থোকায় থোকায় অজস্র ফুল ফুটেছে।
মাধবী সাধারণত বৃক্ষারোহী লতা গাছ। এ গাছ অনেক দিন বাঁচে এবং ফুল দেয়। গাছের ডাল মোটা এবং ছাল মেটে রঙের হয়। কাঠ লালচে ও শক্ত হয়। এর পাতা বিপরীতমুখী, আয়তকার এবং বোঁটার দিক থেকে আগা ক্রমশ সরু হয়। মাধবীলতা সাধারণত ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। দেখতে অনেকটা চাঁপা ফুলের পাতার মতো। বাড়ি ও বাগানের সৌন্দর্যের জন্য মাধবীলতা লাগানো হয়। তবে এই লতা গাছটি খুব বেশি দেখা যায় না। শহরের মানুষ শখের বসে লাগায়। আর গ্রামে অযত্নে জন্মে।
মাধবীরলতা গুচ্ছবদ্ধ ও বিন্যাস সুসংবদ্ধ। মুকুলগুলো সূক্ষ্ম রোমে ভরা। ফুল সাদা রঙের, পাঁচটি পাঁপড়ি এবং তার মধ্যে পঞ্চম পাঁপড়ির গোড়ার দিক হলুদভাব। মাধবীলতা দেখতে তিল ফুলের মতো এবং বেশ সুগন্ধি। বসন্ত ও গ্রীষ্ম এই ফুলের ঋতু হলেও কখনো কখনো বর্ষা পর্যন্ত ফোটে। তবে প্রায় সারাবছরই এ ফুল দেখা যায়। এর ফুল থেকে ফল হয়,
মাধবীলতা ডাল দুই তিন বছর পরপর কেটে দিতে হয়। তারপর লতা যতই বাড়তে থাকে ততই নতুন নতুন ডালপালা গজায়। ফুলও বেশি ফুটতে থাকে। মাধবীলতার তেমন যত্ন লাগে না। এর বীজ থেকে চারা হয়। অনেকে ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রেখেও চারা তৈরি করেন।
সাতক্ষীরা চৌবাড়িয়া গ্রামের ছখিনা খাতুনের বাড়িতে মাধবীলতায় ঘরের চাল ভরে উঠেছে। রঙিন মাধবীলতা বাতাসে দোল খাচ্ছে। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি তীব্র মিষ্টি ঘ্রাণে ভরিয়ে রেখেছে চারপাশ। ডালের আগায় বড় বড় ঝুলন্ত থোকা। প্রতিটি থোকায় ১০ থেকে ১৫টি লাল সাদা ফুল। সবুজ পাতা লালা সাদা ফুল দূর থেকে দেখতে অসাধারণ।
ছখিনা খাতুন বলেন, “প্রায় সব সময় গাছে ফুল থাকে। শিশুরা ফুল নিয়ে খেলা করে। গাছের পাম দিয়ে হেটে গেলে হালকা মিষ্টি ঘ্রাণ পাওয়া যায়। শুনেছি মাধবীলতার পাতার রস পুরাতন বাতের ব্যথা সারতে বেশ উপকারী। তবে কখনো ব্যবহার করে দেখিনি।”
মাধবীলতা সম্পর্কে মুক্তকোষ উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, মাধবীর বোটানিক্যাল নাম Hiptage benghalensis (L.) Kurz., ফ্যামিলি Malpighiaceae। পুরানা বাত সারাতে মাধবীলতার পাতার রস, হাঁপানির শ্বাসকষ্টের জন্য পাতা ও ডালের রস উপকারী। মাধবীলতা গাছের শুকনো ছালের গুঁড়ো বিষাক্ত ঘা সারিয়ে তোলে।