নানা গুণে ডুমুর
সাতক্ষীরা থেকে মফিজুল ইসলাম
ডুমুর। দেখতে অনেকটা মার্বেলের মতো। গ্রামের শিশুরা ডুমুর দিয়ে মার্বেল খেলে, গাড়ি বানায়, মিছিমিছি রান্নাবান্না করে। ডুমুরের ফুল নিয়ে একটা পরিচিত উপমা রয়েছে। ‘ডুমুরের ফুল’ অর্থাৎ দুর্লভ বস্তু। কিন্তু ডুমুর আজ নিজেই অতিদুর্লভ।
আগের মত গ্রামের ঝোপঝাড়ে, বাড়ির উঠানে, রাস্তার পাশে, খেতের পাশে দেখা যায় না। সবজি হিসাবে ডুমুরের জনপ্রিয়তা অনেক।
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ডুমুরের বৈজ্ঞানিক নাম Ficus hispida। এটি গুল্ম লতা জাতীয় গাছ। এর আবরণ ভাগ খুবই পাতলা এবং ভিতরে ছোট ছোট অনেক বীজ রয়েছে। ডুমুর শুকনো ও পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এ গাছ জন্মে। বসন্তকাল ডুমুরের ফুলের জন্য উপযুক্ত। গুল্ম লতা জাতীয় গাছটির কান্ড ও শাখার বাকল ফেটে অগণিত মার্বেলের মতো গুটি বের হয়। সেটার নাম ডুমুর। ডুমুরের ফলের ভিতর ফুল থাকায় ফল না কাটলে ফুল দেখা যায় না।
ডুমুরের ভেতর অনেক সময় পিঁপড়ে বা ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ ঢুকে পড়ে বাসা বানায়। এজন্য ডুমুরের অন্য নাম ‘জন্তুফল’। ডুমুর গাছে দুধের মতো সাদা এবং একটু ঘন রস হয়। এই রসের জন্য একে ‘ক্ষীরীবৃক্ষ’ও বলা হয়। প্রচলিত নাম যজ্ঞডুমুর বা জগডুমুর, সংস্কৃতে ‘উদম্বুর’, ফারসিতে ‘আঞ্জির’, আরবিতে এরই নাম ‘ত্বীন’। পবিত্র আল-কুরআনে সূরা ত্বীনে এই গাছের নাম উল্লেখ আছে।
ডুমুর পৃথিবীর প্রচীনতম ফলগুলোর মধ্যে একটি। জগডুমুর শাখা-প্রশাখাময় বিশালাকার বৃক্ষ। পাতা বড়, ডিম্বাকৃতির ও অমসৃণ। এর বাকল পুরু। বসন্তের শুরুতে ফুল আসে। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি থেকে ফল পাকতে থাকে। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে টুকটুকে লাল। আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডুমুর গাছ জন্মে। কাঁচা ফল হিসেবে এটা অতি উন্নত সবজি। শুধু ডুমুর বা অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিলিয়ে রান্না অথবা এর ভর্তা খুবই সুস্বাদু। এছাড়া ছোট মাছের সঙ্গে ডুমুর রান্না করা যায়। পাকা ডুমুর অল্প মিষ্টি হয়।
আমাদের দেশে বন বাদারে বেশি জন্মে কাকডুমুর। গাছ তুলনামুলক ছোট ও পাতা অত্যন্ত খসখসে। এই পাতা দিয়ে গ্রামাঞ্চলে অনেকে পাঙ্গাশ, শিং, মাগুরজাতীয় মাছ কাটার আগে ঘষে পিচ্ছিলতা পরিষ্কার করে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে বাড়িতে গবাদিপশু জবাই করার পর মাংসে পশুর লোম লেগে গেলে এই পাতা ঘষে সেই লোম ছাড়ানো হয়।
ডুমুর খুবই উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। অনেক মানুষ সকালে কাঁচা ডুমুর খেয়ে থাকে। তাদের দাবি ডুমুর ডায়েবেটিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এ প্রসঙ্গে রাজার বাগান পূর্বপাড়ার ফিরোজা বেগম বলেন, “ডুমুর চিংড়ি মাছ দিয়ে রান্না করলে অনেক ভালো লাগে। আগে মাসে এক-দুইবার করে ডুমুর রান্না করতাম। কিন্তু এখন গাছে তেমন ডুমুর হয় না। এজন্য আগের মত ডুমুর খাওয়া হয় না।”
শহরের মিলবাজারের বাসিন্দা ও পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দস রনি বলেন, “ডুমুরের অনেক ঔষুধি গুণ রয়েছে। শহরের মানুষ ডুমুর খেতে পছন্দ করে। ডুমুর গুটি বসন্ত, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি ও স্নায়ু দুর্বলতা, স্মৃতি শক্তিবৃদ্ধি, সর্দিকাশি, ফোড়া ও স্ত্রী রোগের চিকিৎসায় ডুমুর কার্যকর।”