পুঁথির সুরে প্রবীণের স্বপ্ন শৈশব
বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে শহিদুল ইসলাম
প্রবীণরা যখন খুঁজে পান তাঁর সেই চেনা সুরকথা আর জীবন আলেখ্যের ঘটনা ঠিক তখনই তাঁদের হৃদয় গহনে বেজে উঠে আনন্দ আর বাস্তব জীবনের অনুভূতি। পুঁথি সাহিত্য, পুঁথি গান আর কথা এমনই এক বাংলা লোক কবিতার বিলুপ্ত ধারা। সমসাময়িক ঘটনাবলীকে আশ্রয় করে পুঁথি রচনার শুরু হয়েছিলো ঊনবিংশ শতাব্দীর দিকে।
জানা যায়, প্রায় কয়েক শতাব্দী ধরে এই পুঁথি সাহিত্য মানুষের আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে লোক সমাজে সমাদৃত ছিলো। কালের বিবর্তনে এই জনপ্রিয় আনন্দের মাধ্যমটিও বর্তমান বিলুপ্তপ্রায়। বড়গাছির প্রবীণ পুঁথি গায়েন মজিবর রহমান বলেন,“এখন আর আগের মতো পুঁথি পাঠের আসর দেখা যায় না।” তিনি আরো বলেন-“ আগের দিনে হাট বাজার, বাড়ির উঠোন, গাছের তলায়, গ্রামের কোন অনুষ্ঠানে নিয়মিত পুঁথি পাঠের আসর বসত।”
লোক কবিরা সুরেলা কন্ঠে এই পুঁথি পাঠ করতো। পুঁথির মধ্যে দিয়ে জীবনের ছবি তুলে ধরতেন। জানা যায়, আশির দশকেও পুঁথি পাঠের আসর বসতো। সময় গড়িয়ে সেই মানুষগুলো এখন প্রবীণ হয়েছেন। যাঁদের সেই সময়ে আনন্দ বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিলো এই পুঁথি পাঠের আসর। পুঁথি পাঠকে কেন্দ্র করেই সমাজের মানুষের জমায়েত হতো। সুখ দুখের কথা হতো। কতো সমস্যা সমাধান হতো। নিজেদের মধ্যে বন্ধন, সম্পর্ক ও শ্রদ্ধাবোধ ঠিক থাকতো। এ প্রসঙ্গে প্রবীণ চাষী রহীমুদ্দিন সরকার বলেন,“এখনতো ঘরে বসেই একা একা বিনোদন করে, মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক কমে গেছে, তাই শ্রদ্ধাবোধও উঠে গেছে।”
বারসিকের দীর্ঘদিনের প্রবীণ সম্পর্ক এবং প্রবীণদের বিষয় জানতে পুঁথি পাঠের আসরের প্রতি প্রবীণদের আগ্রহের কথা জানা যায়। প্রবীণদের আগ্রহ এবং উদ্দীপনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বারসিক এবং বড়গাছি লোকসাহিত্য পরিষদ যৌথভাবে গত ১৯ এপ্রিল রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি বিএডিসি সাবসেন্টার হল রুমে পুঁথি পাঠ আসরের আয়োজন করেন। উক্ত পুঁথি পাঠের আসরে পুঁথি পাঠ করেন নুরুল ইসলাম (৬১) এবং মুজিবর রহমান (৬৪)। সোনাভান বিবির জীবন আলেখ্যে রচিত এই পুঁথি পাঠের আসরে শ্রোতা হিসেবে এলাকায় ৪৫ জন প্রবীণ অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও এলাকার নবীন প্রজন্মরাও এই আসরে শ্রোতা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। একইসাথে বড়গাছি লোকসাহিত্য পরিষদের সদস্য আব্দুল হাই, নুরুল হুদা, সামসুল হুদা লোকগান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বড়গাছি লোকসাহিত্য পরিষদের আহবায়ক জুয়েল আহমেদ। সেসময় বারসিকের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
পুঁথি পাঠ ও লোকগাণ শেষে প্রবীণগণ সিদ্ধান্ত নেন প্রতি বাংলা মাসের শেষ শুক্রবার কমপক্ষে একবার করে প্রবীণ বিনোদনের আয়োজন করা হবে। একই সাথে বড়গাছি বিএডিসি সাব সেন্টার হলের একাংশকে প্রবীণ চত্বর ঘোষণা করেন। আড্ডা এবং বিনোদনসহ সাার্বিক দিকগুলো নিয়ে এখানে প্রবীণরা নিয়মিত বসবেন। উক্ত প্রবীণ চত্বর উদ্বোধন ও ঘোষণা করেন জাতীয় কৃষিপদক প্রাপ্ত কৃষক চাষী রহিমুদ্দীন সরকার।