উপকূলে চাহিদা বেড়েছে কদবেল গাছের

শ্যামনগর থেকে ফজলুল হক

একটি সময় উপকূলীয় অঞ্চলে সকল প্রাণ-বৈচিত্র্যে ভরপুর ছিলো, সব ধরনের ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছে দেখা মিলতো। কিন্তু কালের বির্বতনে বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষির চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও  মানুষের জীবন-জীবিকার ও প্রভাব ফেলছে।

মাটি ও পানির লবণাক্ততা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি , অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ, ঘনঘন প্রলয়কারী প্রাকৃতিক দুর্যোগ (সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুল, ফনী, ইয়াস ইত্যাদি) এই দুর্যোগ গুলোর ফলে  দূর্বল বেড়িবাঁধ ভাঙন, জলোচ্ছ্বাসের  কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষি জমিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে সব চেয়ে কৃষিসহ মানুষের জীবন জীবিকায় ক্ষতি সাধন হচ্ছে। তবুও নানান প্রকৃতিক দূর্যোগসহ মানবসৃষ্ট দূর্যোগ মোকাবেলা করে টিকে আছে উপকূলের মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনে সাথে সাথে খাপ খেয়ে টিকে থাকার কৌশল অবলম্বন করছে। তারঐ মধ্যে লবণাক্ততা সহনশীল কোন ফলজ, বনজ, ওষধি গাছগুলো রোপণ করলে উপকূলে টিকে থাকবে। 

এরই প্রেক্ষিতে ফলজ গাছের মধ্যে উপকূলীয়, অঞ্চলের রাস্তার পাশে সারী সারী এবং প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে কদমবেল গাছের দেখা মিলছে। 

সামাজিক বনবিভাগের কর্মকর্তা পিরামিন ইহছাকের কাছে উপকূলে বেশি বেশি কদবেল গাছ রোপণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কদবেল গাছটি লবণসহনশীল, অতিরিক্ত লবণ পানির মধ্যে দিয়েও গাছটি হয়। একটু বড় গাছ রোপণ করলেই দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফলন দেয়। আমরা সামাজিক বনবিভাগের পক্ষ থেকেও লবণাক্ততা সহনশীল কদবেল লাগাতে উৎসাহিত করছি।

দেখা গেছে প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলের পুষ্টিমান পানীয় অংশ ৮৫ দশমিক ৬ গ্রাম, খনিজপদার্থ ২ দশমিক ২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৯ কিলো ক্যালরি, আমিষ ৩ দশমিক ৫ গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ১ গ্রাম, শর্করা ৮ দশমিক ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫ দশমিক ৯ মিলিগ্রাম, লৌহ শূন্য দশমিক ৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি শূন্য দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ১৩ মিলিগ্রাম এবং  প্রতি ১০০ গ্রামের শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা ৪৯ কিলো ক্যালরি।

কদবেলের খনিজ উপাদান ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিসের আয়ূর্বেদী চিকিৎসায় কদবেল ব্যবহার হয়। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্নায়ুর শক্তি যোগায়, কদবেল উদ্দীপক ও মূত্রবর্ধক হিসেবে ব্যবহার করা হয় আয়ূর্বেদ শাস্ত্রে। এ ফল নিয়মিত খেলে কিডনি সুরক্ষিত রাখে। কদবেল যকৃত ও হৃদপিণ্ডের বলবর্ধক হিসেবে কাজ করে। কদবেল পাতার রস পানির সঙ্গে নিয়মিত পান করলে পেপটিক আলসার দ্রুত ভালো হয়। ব্রণ ও মেছতায় কাঁচা কদবেলের রস মুখে মাখলে বেশ দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। কদবেল পাতার নির্যাস শ্বাসযন্ত্রের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কদবেল রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। গুড় বা মিছরির সঙ্গে কদবেল মিশিয়ে খেলে শরীরের শক্তি বাড়ে এবং রক্তস্বল্পতা দূর হয়। কদবেল মহিলাদের হরমোনের অভাব সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে থাকে। এমনকি স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার নিরাময় করে থাকে। কদবেলের ট্যানিন নামক উপাদান দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া ও পেট ব্যথা ভালো করতে সাহায্য করে। কদবেল কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

স্থানীয় মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান উৎপাল জোয়ারদার বলেন, ‘এলাকায় রাস্তাঘাটের পাশাপাশি, প্রতিটি বাড়িতে কদবেল গাছ রোপণের হিড়িক পড়েছে। কদবেল গাছটি লবণসহনশীল হওয়ায় সব জায়গায় লাগানো যায়। লবণ পানির চিংড়ি ঘেরের রাস্তায়ও কদবেল গাছ হচ্ছে এবং কদবেল গাছের ফলের চাহিদাও অনেক বেশি।’

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক সুপ্রিয় বৈদ্য  বলেন, ‘কদবেল গাছ অনেক ঔষধি গুনাগুণ সম্পূর্ণ। গাছটির ফলটিও অনেক সুস্বাদু হওয়ার সকলের প্রিয় একটি খাদ্য। একটি পরিপক্ব কদবেল গাছ থেকে  বছরে ৩-৪ হাজার টাকা বিক্রয় করা যায়।’

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য গাছ বেশি বেশি গাছ লাগানো ছাড়া উপায় নাই। লবণাক্ততা সহনশীল এবং উপকূলের জন্য উপযুগি কদবেল গাছ লাগানোর উগ্যোগ জরুরী।

happy wheels 2

Comments