নানান প্রতিকূলতার মাঝে উদ্ভিদ বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল ও মনিকা পাইক
বারসিক’র উদ্যোগে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনিয়নের ঝাপালি গ্রামে স্বেচ্ছাসেবক টিম কোষ্টাল ইয়ুথ নেটওয়ার্ক ও ঝাপালি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহায়তায় উপকূলীয় এলাকায় অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে উদ্ভিদের ব্যবহার, গুণাবলী, প্রাপ্তি স্থান সম্পর্কে পরিচিতিকরণের জন্য “অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল।
মেলায় ঝাঁপলি, কাশিমাড়ি, খেজুরিয়া গ্রামের কৃষক-কৃষাণী, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক টিম ও বারসিক কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
মেলায় ১৫ জন গ্রামীণ নারী, শিক্ষার্থী তাদের নিজ নিজ এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ৭৫ ধরনের অচাষকৃত উদ্ভিদ সংগ্রহ করে নিয়ে প্রদর্শন করেন। প্রদর্শনীতে এসকল উদ্ভিদের প্রাপ্তিস্থান, গুণাবলী, ব্যবহার, কোন মৌসুমে পাওয়া যায়, কোনটি রান্নার কাজে বা ঔষধি কাজে ব্যবহার হয় সেসব বিষয় তুলে ধরেন।
মেলায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘প্রতিবছর নানান ধরনের দুর্যোগের সন্মূখিন আমরা। সে জন্য দিনে দিনে এলাকা থেকে অচাষকৃত উদ্ভিদসহ প্রাণবৈচিত্র্য বিলুপ্তের পথে। এখন এলাকাতে কৃষিজমি কমে লবণ পানির চিংড়ি ঘেরের পরিমাণ বেশি। এছাড়াও রাসায়নিক বিভিন্ন ধরনের সার কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা তো এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে কোন কিছু জানতে পারছে না। কারণ তারা চোখে দেখলে তো শিখবে। ছেলেমেয়েদের শিখানো বা এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য এরকম মেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আজ এক জায়গায় অনেক ধরনের উদ্ভিদ বৈচিত্র্য দেখতে পেলাম। এগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে।’
অংশগ্রহণকারী অতিথিবৃন্দরা জানান, ‘আমাদের চারপাশে নানান ধরনের উদ্ভিদ বৈচিত্র্য আছে। সেগুলো চিনে সঠিক কাজে ব্যবহার করতে হবে। আমরা এখন ঔষদের উপর নির্ভর কিন্তু আমরা জানিনা এসকল ঔষধ কি দিয়ে তৈরি। প্রকৃতির সকল উপাদানে কোন না কোন উপকার আছে। আমাদের গ্রাম অঞ্চলের মানুষের পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় অধিকাংশটা এসকল অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য দিয়ে। তাই এসকল উদ্ভিদ বৈচিত্র্য এর গুণাবলী আমরা নিজেরা যেমন জানবো পাশাপাশি আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। কারণ তারাই সচেতন হলে এগুলো টিকে থাকবে।’
মেলায় এককভাবে ৬১ প্রকার উদ্ভিদ প্রদর্শন করে ১ম হন কৃষাণী জামিলা বেগম, ৪৬ প্রকার নিয়ে ২য় হয় কৃষাণী নাছিমা বেগম এবং ৩৬ নিয়ে ৩য় হন শিক্ষার্থী তানিয়া।
সমাপনীতে মেলায় অংশগ্রহণকারীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কোস্টাল ইয়থ নেটওয়ার্কের রাইসুল ইসলাম স্বপন দাস, সিডিও’র ইমরান, ইউপি সদস্য, বারসিক’র পরিচালক লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার বিশ্বজিৎ মন্ডল, মফিজুর রহমান, বাবলু জোয়ারদার, বরষা গায়েন, প্রতিমা চক্রবর্তী, লিপিকা, রুবিনা, চম্পা, মনিকা রানীসহ প্রমুখ।