সন্তানের ভালোবাসায় বেঁচে থাকুক সকল বাবা
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
‘বাবাজান আমাদের একটা ময়না পাখি আছে না,সে আজকে আমার নাম ধরে ডেকেছে। কিন্তু এ কথাটা না মা কিছুতেই বিশ্বাস করছে না। কেমন লাগে বলো তো বাবা? আমি কি তাহলে ভুল শুনেছি, তুমি আজকে বাসায় এসে মাকে অবশ্যই বকে দিবে। আচ্ছা বাবা রাখি। তুমি তারাতারি চলে এসো কিন্তু!’
উপরোউক্ত কথাগুলো এক সমযের গ্রামীনফোণের জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের শিশু শিল্পী ছোট দিঘীর সংলাপ। সংলাপটিতে বোঝানো হয়েছে বাবা,মানে বিশ্বাস, আস্থা ও বাবা মানে নির্ভরতার জায়গা। বাবা মানে নির্ভরতা। বাবা নিখাদ আশ্রয়। উত্তপ্ত সূর্যের তলে সন্তানের শীতল ছায়া। বাবা মানে ভরসা। আবার বাবা শাশ্বত, বাবা চির আপন। বাবা মানে বটবৃক্ষের ছায়া। সেই বাবার প্রতি সম্মান জানাতে বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী বাবা দিবস উদযাপিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে ৫ জুলাই এই দিবস পালন করা হয়। এরপর ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। বাংলাদেশেও সরকারি বেসরকারি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নানাভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করে থাকে। বাবার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বারসিকও প্রতিবছর মাঠ পর্যায়ে দিবসটি পালন করে থাকে। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে সরকারি বিধি নিষেধ থাকায় ভিন্নভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
তারই ধারাবাহিকতায় বারসিক মানিকগঞ্জ পরিবার এ বছরর ও দিবসটি পালন করে। বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়ের উদ্যোগে বারসিক মানিকগঞ্জ পরিবার ও সকল বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জুম অ্যাপে ভার্চুয়াল যোগাযোগের মাধ্যমে সহকর্মীদের নিয়ে অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করে। বারসিক কর্মকর্তা শিমুল কুমার বিশ্বাসের সঞ্চালনায় আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়ের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নিতাই চন্দ্র দাস, শাহিনুর রহমান, বিউটি সরকার, শারমিন আক্তার, রাশেদা আক্তার, সুবীর সরকার, সত্যরঞ্জন সাহা, মাদক বিরোধী সংগঠন আলোর পথের সদস্য দিপ্ত সেন প্রমুখ। আলোচনা বক্তারা শৈশব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাবা সম্পর্কে নিজ নিজ স্মৃতিচারণ করে বাবা দিবসের আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘একটি শিশু যখন অপিরিচিত এই পৃথিবীতে, সম্পূর্ণ একা, তখন বাবাই দেন ভরসা। জীবনে চলার পথে বাবাই বলিষ্ঠ সাহচার্য দেন, দেন সঠিক পথের দিশা, একইসঙ্গে ভাল কাজে দেন অনুপ্রেরণা। আরও দেন জীবনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি। তাই বাবা শব্দটি নিরাপত্তা আর পরম নির্ভরতার প্রতীক।’ তারা আরও বরেল, ‘একটি শিশু জন্ম নেয়ার পর বড় হওয়ার সাথে সাথে তাকে কত কিছু না চেনাতে হয়। ঐ দূরের গাছগাছালি, বিশাল নীলাকাশ, আর চড়ুই-বাবুই পাখির কাহিনী আরও কত কী! কিন্তু কখনো তাকে শেখাতে হয় না এটা তোমার বাবা। প্রকৃতি তাকে চিনিয়ে দেয় পরম নির্ভরতার প্রতীক বাবাকে।
বক্তারা বলেন, ‘বাবাদের মন সন্তানের প্রতি সবসময়ই আদরে ভরপুর। কোনো বিপদ-আপদে বাবা সন্তানের জন্য দৌড়ে গিয়ে সাহস দেন।। বিপদ যতই পাহাড় হয়ে সামনে দাঁড়াক পরিবারকে রক্ষা করতে অকপটে ছুটে যান যিনি তিনিই বাবা ‘ সকল বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তারা আরো বলেন, ‘পরিবারে যার সহায়তায় বড় হলাম সে বাবারা অনেকেই আজ ভালো নাই। অবসর গ্রহণ করে কেউ জটিল রোগে ভুগছেন, কেউ সন্তানের আচরণে ব্যথিত আবার কেউ প্রিয়জন হারিয়ে পাগলপ্রায়। তবে অনেক বাবা এখনও ভালো থেকে সন্তানদের নিয়ে সুখ ভোগ করছেন। বাবার জন্য সন্তানের অনেক কিছু করার আছে। কিন্তু বাবারা তেমন কিছু চান না। শুধু চান তাঁর সাথে ভালো ব্যবহার। নাতি-নাতনি নিয়ে শুধু খেলে আনন্দ পেতে চান আমাদের বাবা। অধিকাংশ বাবা জানেন না তাঁদের ভবিষ্যৎ।’
যিনি সন্তানকে কোলে-পিঠে মানুষ করলেন সে বাবা অবশ্যই ভালো ব্যবহার প্রত্যাশা করেন। কাজেই দিবস কেন্দ্রিক ভালোবাসার মধ্যে আবদ্ধ না থেকে সন্তানের ভালোবাসায় বেঁচে থাকুক সকল বাবা।