মিষ্টি কুমড়ায়- মিষ্টি হাসি
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ ॥
মিষ্টি কুমড়া চাষ করে মানিকগঞ্জের কৃষকরা আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছে। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা, দরিদ্র কৃষকদের ঘরে এসেছে স্বচ্ছলতা। ফলে এখানে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মিষ্টি কুমড়ার চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দুই শতাধিক কৃষক মিষ্টি কুমড়া চাষ করে সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। অল্প সময়, স্বল্প খরচ আর ভালো ফলনে ওই অঞ্চলের কৃষকরা সত্যিই অনেক খুশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ঘিওরে প্রায় সাড়ে ৯শত হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। কৃষকরা কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ফুলকপির চাষ করে। একই জমিতেই মাসের মাঝামাঝি সময়ে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার ফলন পাওয়া যায়। অন্যান্য ফসলের সাথে কুমড়া আবাদ করায় এতে কৃষকদের আলাদা কোনো খরচ করতে হয় না।
সরজমিন দেখা গেছে, জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই কমবেশি মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। তবে ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া, চঙ্গশিমুলিয়া, মাইলাগি, বড়বিলা, নীলা, বাঙ্গালা, বালিয়াখোড়া, বরুরিয়া, পয়লা, কুইষ্টা গ্রামে উল্লেখযোগ্য হারে কুমড়ার আবাদ হয়।
এখানকার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া মানিকগঞ্জ কাঁচা বাজার আড়ত, আশুলিয়ার বাইপাইল সবজি আড়ত ও রাজধানীর কাওরান বাজারে পাইকারী দরে বিক্রি করছেন কৃষকরা।
চলতি বছরে ৯০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পুরাণ গ্রামের কৃষক মইজুদ্দিন মিয়া। তিনি জানান, কুমড়া চাষে জমিতে বিঘাপ্রতি খরচ প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘাতে কুমড়া বিক্রি করে লাভ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
পয়লা গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, “এক বিঘা জমি থেকে সবোর্চ্চ ১১শ’ থেকে ১২শ’ কুমড়া পাওয়া যায়। প্রতিটি কুমড়ার দাম আকার ভেদে ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ক্ষেত থেকেই পাইকারী ব্যবসায়ীরা কুমড়া কিনে নিয়ে যায়। তাই আমাদের বাড়তি কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।”
পাইকারী ক্রেতা মজনু বিশ্বাস জানান, অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানকার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া সুস্বাদু ও আকৃতিতে বড় হয় বলে চাহিদা বেশি। এবছর তিনি ৫ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া পাইকারী ক্রয় করেছেন। লক্ষাধিক টাকার ওপরে লাভের আশা করছেন তিনি।
ঘিওর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবীদ আশরাফ উজ্জামান জানান, কৃষকরা ফুলকপি, আলু, আখ চাষের সঙ্গে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করছে। কম খরচে ভালো লাভ পাচ্ছেন। তাই দিন দিন এখানকার কৃষকরা মিষ্টি কুমড়া আবাদে ঝুঁকে পড়ছেন। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে।