লোকায়ত পদ্ধতিতে কাঁসুন্দি তৈরি
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে আল্পনা,শ্যাময়েল,সুবীর সরকার
কাঁচা আম, আমড়া, কামরাঙা, পেঁয়ারা, মুড়ি, পান্তা ভাতের স্বাদ বহু গুণ বাড়িয়ে দেয় কাঁসুন্দি। মুখরোচক এ খাবার তৈরিতে গ্রামের নারীদের, লোকায়ত জ্ঞান, প্রকৃতির উপকরণ ও দক্ষতার প্রয়োজন। আজও গ্রামের নারীরা তাদের লোকায়ত চর্চার মাধ্যমে স্থানীয় পদ্ধতিতে কাঁসুন্দি তৈরির সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখেছেন। বৈশাখ মাসের তেরদিন পর থেকে নারীরা কাসুন্দি ধোঁয়া ও তৈরি শুরু করেন। ২৮ বৈশাখ চতুর্থী তিথিতে কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্র ও জয়নগর গ্রামের নারীরা তাদের নিজস্ব লোকায়ত চর্চার মাধ্যমে কাঁসুন্দি ধোয়া ও তৈরির কাজ করেন।
গ্রামের প্রবীণ নারীরা তাদের লোকায়ত জ্ঞান ব্যবহার করে তাদের পুত্রবধু ও নতুন প্রজন্মদের নিয়ে কাঁসুন্দি ধোঁয়া ও তৈরির কাজ করে থাকেন। নারীদের নিজস্ব সংস্কৃতি কাঁসুন্দি ধোঁয়া ও তৈরিতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেন রাই সরিষা, আমপাতা, লেবু পাতা, কাঁঠালপাতা, পিপুলের মুতা, তেলাকুজের মুতা, টাকা খারকুনের মুতা, লবণ, গরম মসলা, তেজপাতা, জিরা, গুলমরিচের মসলা ইত্যাদি। সরিষাসহ মসলাগুলোকে নারীরা নদীতে বিভিন্ন নিয়ম করে ধোঁয়ার কাজ করে নদীর জল নিয়ে আসেন জল ফোটানোর জন্য। এরপর সরিষাসহ মসলাগুলোকে রোদে শুকিয়ে ঢেঁকিতে গুঁড়া করতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে জল ফোটানো হয়। জল ফোটানো হয়ে গেলে সেটাকে নারীরা বলেন (মধু)। এরপর নিয়ম করে (মধুর) সাথে সরিষার গুঁড়া মেশাতে হয়। পরে তাতে লবণসহ গুঁড়া করা মসলাগুলো পরিমাণমতো মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয় সুস্বাদু কাঁসুন্দি।
বাড়িতে সকলের খাবারের আগে “নুনের ঘটের হাড়িঁতে” কাঁসুন্দি ঘরের চালের সাথে ঝুঁলিয়ে রাখে এক বছরের জন্য। এর মাধ্যমে এক বছরের জন্য বাড়িতে কাঁসুন্দি তৈরির যাত্রা শুরু করেন। জয়নগর গ্রামের প্রবীণ নারী লক্ষী রানী সরকার ও নমিতা রানী সরকার বলেন, ‘আমি কাঁসুন্দি ধোঁয়ার নিয়ম শিখেছি আমার শাশুরীর কাছ থেকে।’ অনিমা সরকার ও কল্পনা সরকার বলেন, ‘আমরা বাড়িতে প্রতিবছর কাঁসুন্দি ধোঁয়া ও তৈরির মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখছি।’