ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের শীত নিবারণে যুব সংগঠনের উদ্যোগ
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
এলাকাকে জানা, নিজস্ব সংস্কৃতিকে জানা, দেশকে জানাসহ নেত্রকোনার ঐতিহাসিক স্থান সর্ম্পকে নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় সংগঠিত যুব সংগঠনগুলো বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। যুব সংগঠনগুলো প্রতিবছর রাস্তার পাশে, স্কুল ও মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপণ, স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেয়ালিকা প্রকাশনা, এলাকার শতবর্ষী গাছ রক্ষায় প্রচারাভিযান, কবিরাজ ও মুক্তিযোদ্ধার মুখে ভেষজ ঔষধি বৃক্ষ এবং মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা, নেত্রকোনার নদ-নদী, হাওর, নেত্রকোনার সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের সর্ম্পকে জানা, পাখি রক্ষা, বিষয়ভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মা সমাবেশ ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা পরিচালনা করে আসছে। অন্যদিকে এ যুব সংগঠনের উদ্যোগে এলাকার কৃষি কেন্দ্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষক নেতৃত্বে ধানের জাত গবেষণা, ধানের জাত উন্নয়ন, এলাকায় ফসল বৈচিত্র্য বৃদ্ধি, প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় কেন্দুয়া উপজেলার দু’টি ইউনিয়নের ৮টি জনসংগঠন (কৃষক সংগঠন, যুব সংগঠন, নারী সংগঠন, প্রবীণ সংগঠন) ও ১৩টি গ্রামের প্রতিনীধিরা চলতি শীত মৌসুমে দরিদ্র প্রতিবন্ধি ও প্রবীণদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে এই যুব সংগঠন। সংগঠনের সদস্যরা সমন্বিতভাবে ১৩টি গ্রামের ১০৫ জন অসহায় প্রতিবন্ধী ও ৫৫ জন দরিদ্র প্রবীণদের তালিকা তৈরি করে। তালিকাভূক্ত প্রবীণ ও প্রতিবন্ধিদের জন্য জনসংগঠনগুলো স্থানীয় সামর্থ্যবান ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। জনসংগঠনগুলোর সদস্যরা সামর্থ্য অনুযায়ী এককালীন চাঁদা দিয়ে এবং বান্দনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক, নোয়াদিয়া একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হৃদয়ের কেন্দুয়া’ সংগঠনের আর্থিক সহযোগিতায় মোট ১৬০টি শীতবস্ত্র (কম্বল) ক্রয় করতে সক্ষম হয়।
উক্ত শীতবস্ত্রগুলো গত ১২ জানুয়ারি ১০৫ জন দরিদ্র প্রতিবন্ধী ও ৫৫ জন দরিদ্র প্রবীণ ব্যক্তিকে কেন্দুয়ার বান্দানাল স্কুল মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে বিতারণ করা হয়। শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রধান (ইউপি চেয়ারম্যান) এলাকার দু’টি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকবৃন্দ, কবিরাজ, কৃষক, কুমার, নারী, যুব সংগঠনের সদস্যরা এবং হৃদয়ের কেন্দুয়া সংগঠনের প্রধান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জনসংগঠনের আয়োজনে বান্দনাল স্কুল মাঠে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় অতিথিগণ যুব সংগঠনের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অতিথিগণ জনসংগঠনসমূহের উদ্যোগের সাথে শামিল থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন। স্থানীয় সরকার প্রধান চেয়্যাম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আজ গর্বিত যে, আমার পাশে আছে এলাকায় যুব সমাজ। যুবকরা সমাজের মানুষকে নিয়ে ভাবতে শিখেছে। অনেক যুবকের চাকরি নেই, তবু নিজের টাকা দিয়ে ও অন্যের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। আমি আজ সবার সামনের কথা দিচ্ছি, এই ছেলে-মেয়েরা কোন কাজের জন্য আমার ইউনিয়ন পরিষদে আসলে আমি তাদের কাজগুলো করে দেয়ার চেষ্টা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজে না পারলে তাদের পাশে থেকে উপজেলা ও সমাজসেবা অফিস বা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সহয়তা করার চেষ্টা করব। বারসিকের কাজগুলো আমার খুব ভালো লাগে। কারণ তারা যুবকদের পাশে থেকে তাদেরকে উৎসাহিত করছে। যুবকদের সঠিক ও সুন্দর পথে চলতে অনুপ্রাণিত করছে।’
নোয়াদিয়া একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদির বলেন, ‘আমাদের যুবকরা আগের তুলনায় অনেক ভালো কাজ করছে। প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে ছোট ছোট যুব সংগঠন গড়ে ওঠায় ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কাজ করার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বারসিকের সহয়তায় আর যুব সংগঠনের যুবকদের উদ্যোগে নতুন প্রজন্মের মধ্যে নতুন নতুন ভাবনার জায়গা তৈরি হয়েছে। স্কুলে তারা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানবৃদ্ধির জন্য বিষয়ভিত্তিক ক্লাশ, যেমন- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে ক্লাশ নিচ্ছে। এসব বিষয়ে আমরা শিক্ষকদেরও এত জানা ছিল না। আমরা পাঠ্য বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলাম। নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক ক্লাশ নেয়ার ফলে আমার স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক সচেতন।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামের যুবকরা এখন নিয়মিত বই পড়ে, শিক্ষকদের ও প্রবীণ ব্যক্তিদের সম্মান করে। আমাদের যুব সমাজ প্রতিবন্ধীদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে এটা ভাবতেই আমার খুব ভালো লাগছে। যুব সংগঠনের উদ্যোগগুলো এলাকার মানুষের কাছে প্রতিনিয়ত প্রশংসিত হচ্ছে।’
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন। ১৬০ প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।