খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরে তরুণদের মতামতগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
আমাদের চার পাশে যা কিছু আছে সবকিছুকে গুরুত্ব দিয়েই খাদ্য উৎপাদন, বিপণন, মজুত, পরিবহন, ক্রয় -বিক্রয় ও পরিবেশনসহ খাদ্য ব্যবস্থার সবদিকগুলো নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে পরিবেশ, বৈচিত্র্য ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থায় তরুণদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ ভাগ তরুণ যুবসমাজ। দেশের খাদ্যব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন ও রূপান্তরে এই যুবশক্তিই ভবিষ্যত খাদ্যনিরাপত্তার ভিতকে মজবুত করতে পারে।
আর্ন্তজাতিক যুব দিবস-২০২১ উপলক্ষে আজ ৮ আগস্ট উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এবং বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের ২২টি সদস্য সংগঠনের যৌথ আয়োজনে খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর ও যুব সমাজের সক্রিয় ভূমিকা শীষক বরেন্দ্র অঞ্চল সংলাপ ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। অনলাইন ভিত্তিক এই সংলাপে বরেন্দ্র অঞ্চলের ৪৫ জন তরুণ যুব উদ্যোক্তাসহ, কৃষক, ভোক্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, গবেষক, সংবাদ ও উন্নয়নকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
সংলাপে তরুণরা নিজেদের উৎপাদনমূখী উদ্যোগগুলোর কথা বলেন। নিরাপদভাবে খাদ্য উৎপাদন করলে তারা বিপণনসহ সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। এছাড়াও সরকারের নীতিনির্ধারণী জায়গায় তরুণদের চাহিদার দিকগুলো আরো গুরুত্ব দেবার দাবি করেন তাঁরা। জৈবভাবে উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারিগড়ি দক্ষতাসহ বাজারে তাদের প্রবেশাধিকারের বিষয়গুলোতে তারা আরো বেশি সহযোগীতা প্রত্যাশা করেন।
তরুণ উদ্যোক্তা ও অর্গানিক আম চাষী তামিম আহমেদ বলেন- ‘জৈবভাবে আম উৎপাদন করলে অনেক সময় সঠিক বাজার মূল্য পাননা। জৈবভাবে উৎপাদন পণ্য খুব বেশি চকচকে না হওয়ার কারনে ভোক্তাগণ কিনতে চায়না।’ তিনি মনে করেন মার্কেটগুলোতে আলাদাভাবে জৈব পণ্যের ক্রয় বিক্রয়ের স্থান করতে হবে। এ ছাড়াও সঠিক জৈব পণ্য নির্বাচনে সরকারে মাঠ পর্যায়ে কারিগড়ি দিকের উন্নয়ন করতে হবে।
নওগাঁর তরুণ জয়নাল আবেদিন সবুর বলেন- ‘আমি নিজে জৈবসার তৈরি করি, অনেক সময় বিক্রি করতে আমার সমস্যা হয়। আবার বাজারে এটা বিক্রি করতে বৈধ কাগজপত্রের দরকার পড়ে। তরুণদের আর্থিক অবস্থা এতোভালো না যে তারা অনেক টাকা দিয়ে এসব লাইসেন্স করতে পারবে। ” তিনি দাবি করেন এসব জায়গায় সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা গুলো আরো বাড়াতে হবে।
কৃষিতে তরুণদের অনাগ্রহের কারন হিসেবে তরুণ সুজন আহমেদ বলেন, ‘কৃষিতে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি আবার কৃষি পেশাকে আমাদের সমাজে এখনো সম্মানের চোখে দেখে না, তাই কিছু তরুণ কৃষি পেশায় যেতে অনাগ্রহ দেখায়।’
সংলাপে অংশগ্রহণ করেন রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী, রাজশাহী পরিবেশ সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মাহবুব টুংকু, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, কৃষিবিদ এবিএম তৈৗহিদুল আলম, বারসিকের নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেনসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
সমাপনী বক্তব্যে বারসিকের নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন বলেন, ‘আমাদের বৈচিত্র্যকে সুরক্ষা করেই আমাদের সকল ধরনের উৎপাদন করতে হবে। এর সাথে আমাদের পরিবেশ, জীবন ও স্বাস্থ্য জড়িত। তাই এই নিরাপদ উৎপাদন ব্যবস্থাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’
রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, বিপণনে তরুণদের সমস্যাগুলো যৌথভাবে সমাধান করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন- রাজশাহী জৈব পণ্যের বাজার তৈরীতে জেলাপ্রশাসনসহ আমরা সকলে মিলে কাজ শুরু করতে পারি।’
উক্ত মতবিনিময় ও সংলাপে সভাপ্রধান হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখে বরেন্দ্র যুব সংগঠন ফোরামের সভাপতি রুবেল হোসেন মিন্টু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা ও ধারনাপত্র পাঠ করেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী মো. শহিদুল ইসলাম ।