অচাষকৃত উদ্ভিদগুলোকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার

ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার ও শ্যামুয়েল হাসদা
মানিকগঞ্জের ঘিওরে অচাষকৃত খাদ্য ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পুষ্টি সচেতনতায় গ্রামীণ পাড়ামেলা ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি। ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী জেলে সম্প্রদায়ের নারীদের আয়োজনে ও বারসিক’র সহায়তায় আয়োজিত মেলায় গ্রামের কৃষক-কৃষাণী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বারসিক কর্মকর্তাবৃন্দসহ অংশগ্রহণ করেন।


মেলায় ২২ জন গ্রামীণ নারী তাদের নিজ নিজ এলাকা রাস্তার ধার, জমির আইল, পুকুর ধারে, পতিত জায়গা থেকে ৪৮ ধরনের অচাষকৃত উদ্ভিদ সংগ্রহ করে নিয়ে প্রদর্শনী করেন। প্রদর্শনীতে এ সকল উদ্ভিদের প্রাপ্তিস্থান, গুণাবলী, ব্যবহার, কোন মৌসুমে বেশি পাওয়া যায়, কোনটি কি দিয়ে রান্না করা হয়, কোনটি মানুষ ও প্রাণীর ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার হয় এসব বিষয় তুলে ধরেন প্রদর্শনকারীরা।


মেলায় অংশগ্রহণকারী-দূর্গা রাজবংশী, আলো রাজবংশী, মেঘলা রাজবংশী, শিল্পি কর্মকার, মায়া কর্মকার জানান, প্রতিনিয়ত নানান ধরনের দুর্যোগ (বর্ষা, খরা,বৃষ্টি, বন্যা) মোকাবেলা করে আমাদের টিকে থাকতে হয়। আর দুর্যোগের ফলে এলাকা থেকে নানান ধরনের উদ্ভিদের বৈচিত্র্য বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও জমিতে কীটনাশক ব্যবহারে এগুলোর জন্মানো কমে যাচ্ছে।


মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী ঝন্টু দাস (৫৫) বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এতো ধরনের আপনজালা শাকসবজি আছে তা এই মেলার মাধ্যমে দেখতে পেলাম। সাথে সাথে এগুলোর গুণাবলী সম্পর্কে যেমন জানতে পারলাম, তেমনিভাবে আমাদের ছেলেমেয়েরাও জানতে পেরেছে।’ সমাজকর্মী সৈয়দ আল-আজাদ বলেন, ‘আমাদের অনেক পরিবারের খাদ্য চাহিদা ও পুষ্টির গুণাবলি মিটিয়েছিলাম এসমস্ত কুড়ানো শাক দিয়ে। এগুলো আমাদের সকলের উদ্যোগে টিকিয়ে রাখতে হবে। বারসিক’র এমন সময় উপযোগী উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানাই।”


মেলায় বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় জানান, গ্রামের মানুষ ও শহরের মানুষের মধ্যে এখনো খাবারের মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। নতুন প্রজন্মদের কাছে অচাষকৃত উদ্ভিদের গুনাগুণ সম্পর্কে জানাতে হবে। জমিতে কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে আপনজালা উদ্ভিদ টিকিয়ে রাখতে হবে। তাহলে আমাদের পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতি ভালো থাকবে।


মেলায় ৪৮ প্রকার আপনজালা উদ্ভিদ প্রদর্শনী করে প্রথম হন দূর্গা রাজবংশী। ৪০টি উদ্ভিদের প্রদর্শন করে ২য় হন আলো রাজবংশী এবং ৩২টি উদ্ভিদ প্রদর্শন করে ৩য় হন রাধা রানী রাজবংশী।

happy wheels 2

Comments