হারিয়ে যাচ্ছে গাব গাছ!
সাতক্ষীরা থেকে আসাদ রহমান
সাতক্ষীরা জেলা সদরসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে ঔষধি সমৃদ্ধ ও উপকারি ফল গাব গাছ ও গাব ফল দিন দিন বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। মানুষের বিভিন্ন কল্যাণে এটি দারুণ কাজে আসলেও গাব ফলের কল্যাণে মানুষের কাজ যেন থমকে গেছে।
মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, গাব গাছ সর্বোচ্চ ৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর কান্ড কালচে, যার ব্যাস ৭০ সে.মি. পর্যন্ত হতে পারে। গাব পাকলে এর রঙ হয় গাঢ় লাল। খোসার উপরটা মখমলের মত। ফলের ভেতরটা সাদা। আপেলের আকারের এই ফলগুলো গোলাকার হয় প্রায় ৩-৪ ইঞ্চি লম্বা ও ২-৪ ইঞ্চি ব্যাসযুক্ত এবং ওজনে ১০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। এটি বহুল পরিমাণে বাজারজাত করা হয় এবং জনপ্রিয় একটি ফল। দেশি গাব নামে অন্য একটি ফল রয়েছে যা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক প্রজাতি। গব ফল থেকে ট্যানি জাতীয় আঠা তৈরি করা হয়। টেকসই করতে এই আঠা মাছ ধরার জালে, পশুর চামড়ায় এবং নৌকায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিশেষ প্রক্রিয়া গাব ফলের রং দিয়ে জালের রংসহ অন্যান্য রং-এর প্রলেপ দেয়া যায়, যেটা খুবই দীর্ঘস্থায়ী। দেশি গাবের ফল গোলাকার। খেতে হালকা মিষ্টি ও কষযুক্ত।
চলতি মৌসুমে এলাকার কিছু কিছু গাছে সল্প পরিমাণে গাব দেখা গেছে। সেগুলো পাঁকতেও শুরু করেছে। সবুজ ফল পাকলে হলুদবর্ণ ধারণ করে। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য চিরঞ্জীব বনৌষধিতে গাবের বিভিন্ন ভেষজ প্রয়োগের কথা উল্লেখ রয়েছে। পরিপক্ক একটি গাব গাছ ৩০-৩৫ মিটার লম্বা আর ৬৫-৭০ মিটার ব্যাসের হয়ে থাকে। কিন্তু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের ফলে, বসতবাড়ি তৈরির ফলে, মনুষ্যসৃষ্টির ফলে ও অন্যান্য কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই গাব গাছ।
শহরের রাজার বাগান এলাকার হাসিনা খাতুন বলেন, “কয়েক বছর আগেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমাণে গাব গাছ দেখা যেতো। গাব গাছ নিয়ে মানুষের মাঝে রয়েছে ভীতিও। কিছু সহজসরল মানুষের ধারণা গাব গাছে নাকি ভূত-পিচাশ বাস করে। এর সত্যতা পাওয়া না গেলেও ঘন পল্লবের গাব গাছকে নিরাপদ মনে করে পেঁচার মতো প্রাণী বাস করতো। আর রাতে পেঁচাকে ভূত-পিচাশ ভেবে ভয় পেতো কেউ কেউ।’ তিনি আরও বলেন, ‘কালের বিবর্তনে লোকালয়ের চাপে ঝোপঝাড় ধ্বংস আর অবাধে বৃক্ষনিধনের ফলে গাব গাছ বিলীন হতে বসেছে।’
সচরাচর দেখা না গেলেও সদর উপজেলার রাজার বাগান এলাকার আব্দুল কাদেরের বাড়িতে দেশীয় গাব ফলের গাছ দেখা গেছে। গাব ফল দিয়ে ভেষজ ঔষধসহ নানান উপকার হয় মানুষের। কাজে লাগে তার কাঠও। বন ও পরিবেশ অধিদফতর থেকে প্রকৃতির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ঔষধি ফলগাছ হিসেবে গাবকে গুরুত্ব দিতে সচেতন মহল দাবি করেছেন।