অস্তিত্ব রক্ষায় বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা
মুহাম্মদ শামসুল
ইসলাম
সাদিক
প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ উপহার বৃক্ষ। সৃষ্টিকর্তা মানুষের জন্য ভূপৃষ্ঠের প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ হিসেবে ফলবান বৃক্ষরাজি ও সবুজ-শ্যামল বনভূমির দ্বারা একে সুশোভিত ও সৌন্দর্যমন্ডিত করেছেন। বনাঞ্চল, বনজাত গাছপালা দ্বারা ভূমন্ডলের পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৌন্দর্যলীলার মধ্যে বৃক্ষরাজি অন্যতম, বৃক্ষ ছাড়া প্রাণিকুলের জীবন-জীবিকার কোনো উপায় নেই। মানুষ না থাকলে গাছের কোনো অসুবিধে হতো না, কিন্তু বৃক্ষ না থাকলে পৃথিবীর মানব জাতির অস্তিত্ত্বই বিলীন হয়ে পড়ত। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী বৃক্ষের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভশীল। বৃক্ষ পরিবেশ ও প্রকৃতির পরম বন্ধু। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বৃক্ষ। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অতিব জরুরি অক্সিজেন আসে বৃক্ষ থেকেই। বৃক্ষ মানুষের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
বন
আমাদের
জাতীয়
ঐতিহ্য,
জাতীয়
অর্থনীতি, আবহাওয়া এবং
জলবায়ু
সহ
প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়
বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। বন্যা,
জলোচ্ছ্বাস, খরা,
ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও
খরা
প্রতিরোধে বৃক্ষের ভূমিকা
অনস্বীকার্য। মানুষের জন্ম
থেকে
মৃত্যু
পর্যন্ত বৃক্ষের অবদান
অপরিসীম। বৃক্ষ
ছাড়া
পৃথিবীতে বসবাস
চিন্তা
করা
যায়
না।
পৃথিবীতে মানুষের খাদ্য,
ঔষধ,
বস্ত্র,
ঘরবাড়ি
তৈরি,
মাটির
ক্ষয়রোধ, আবহাওয়া ও
জলবায়ু
সঠিক
রাখা,
পরিষ্কার পানি
প্রবাহ
নিশ্চিত করা,
কৃষি
জমির
উৎপাদন
বৃদ্ধি
করা,
কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ
সাধন
ও
বেকারত্ব দূর
করা
ক্ষেত্রে বৃক্ষ
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন
করে।
গাছ
না
থাকলে
পৃথিবীর মধ্যে
বন
ও
বন্যপ্রাণী থাকতো
না।
বৃক্ষছাড়া যেকোনো
দেশ
ও
জাতির
জন্য
অভিশাপ
স্বরূপ।
গাছ
ও
পরিবেশের মধ্যে
একটা
নিবিড়
সম্পর্ক অন্তর্নিহিত। গাছ
আমাদের
পরম
বন্ধু;
কিন্তু
বন্ধুর
প্রতি
কতটুকু
যত্নশীল? আমরা
কোনো
কারণ
ছাড়াই
অথবা
সামান্য কারণে
বন
উজাড়
করি।
অথচ
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়
বৃক্ষ
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গাছপালা শুধু
কার্বন
ড্রাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং
অক্সিজেন ত্যাগ
করে
উপকারের পরিসমাপ্তি ঘটায়,
তা
না।
বড়
বৃক্ষ
বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা
রাখে।
পরিবেশ
বিপর্যয়ের জন্য
প্রতিদিন বজ্রপাতে মানুষ
মারা
যাচ্ছে। দেশে
বজ্রপাত, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ধস, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব
দিন
দিন
বৃদ্ধিই পাচ্ছে। তাই
ইচ্ছেমতো গাছ
কাটা
ও
বনভূমি
উজাড়
করা
ঠিক
নয়।
বনাঞ্চল না
থাকলে
প্রাকৃতিক পরিবেশ
হয়ে
উঠত
উষ্ণ,
পৃথিবী
হয়ে
উঠত
মরুভূমি এবং
মানুষের অস্তিত্ত্ব হতো
বিপন্ন।
প্রকৃতি ও পরিবেশরক্ষায় বনায়নের বিকল্প নেই। আধুনিক সুরম্য অট্টালিকা আর ইট-কাঠের নগরজীবন সত্ত্বেও বনাঞ্চল ছাড়া মানুষের বাঁচতে পারে না। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ অপরিহার্য। পৃথিবীতে লাখ লাখ প্রাণী ও উদ্ভিদের বসবাস হলেও গাছ কাটার কারণে গহিন অরণ্যের জীববৈচিত্র্য লোপ পাচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত করার জন্য মানুষই একমাত্র দায়ী। কিছু স্বার্থপর ব্যক্তি বন-জঙ্গল উজাড় করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য মানুষের ঘরবাড়ি, চাষাবাদ ও শিল্পায়নের জন্য প্রচুর জমিজমা লাগছে। তাই বন-জঙ্গল কেটে প্রয়োজন মেটানো হচ্ছে। ফলে পশুপাখি অন্ন ও বাসস্থান হারা এবং অন্য জীববৈচিত্র্য লোপ পাচ্ছে। পরিবেশ ভারসাম্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা বাড়ছে। ফল-ফসল ও প্রাণহানি ঘটছে। এমন মহাবিপর্যয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে সামাজিক বনায়ন একান্ত জরুরি।
জনসংখ্যার চাপে
বনভূমি
ক্রমশই
হ্রাস
পাচ্ছে। উত্তর
পশ্চিমাঞ্চলে বনভূমির পরিমাণ
নেমে
আসায়
বিরূপ
প্রতিক্রিয়া পড়ছে
আবহাওয়ায়। বৃক্ষ
নিধনের
ফলে
বাতাস
দূষিত,
মাটি
ক্ষয়
ও
পরিবেশ
সংকটময়
হচ্ছে।
পর্যাপ্ত বনভূমি
না
থাকায়
অনাবৃষ্টি এবং
নেমে
যাচ্ছে
ভূগর্ভস্থ পানির
স্তর।
হারিয়ে
যাচ্ছে
অতুলনীয় সবুজ
সৌন্দর্য। মানুষ
ও
প্রাণীর অস্তিত্বের অনুকূল
পরিবেশ
তৈরিতে
সবুজ
বৃক্ষরাজি ও
বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। বনাঞ্চল একদিকে
নিসর্গে শোভা
বাড়ায়,
অন্যদিকে প্রকৃতি ও
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়
অসাধারণ ভূমিকা
পালন
করছে।
বনভূমি
বায়ুমন্ডলকে বিশুদ্ধ ও
শীতল
রাখতে
সাহায্য করে।
যেখানে
গাছপালা ও
বনভূমি
বেশি,
সেখানে
ভালো
বৃষ্টিপাত হয়।
ফলে
ভূমিতে
পানির
পরিমাণ
বাড়ে,
চাষাবাদ ও
ফসল
ভালো
হয়।
বৃক্ষ
মাটির
উর্বরতা বাড়ায়,
ভূমির
ক্ষয়রোধ, ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যা
প্রতিরোধেও সহায়তা
করে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ
সংরক্ষণ, দূষণমুক্ত পরিবেশ,
অর্থনৈতিক উন্নয়ন,
দারিদ্র্য বিমোচনে বৃক্ষরোপণ ও
বনায়ন
রক্ষা
এবং
পরিকল্পিত একটি
বাগানই
হতে
পারে
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসযোগ্য সুন্দর
পৃথিবী
গড়তে
গাছ
নিধন
নয়,
সৃজনই
হোক
লক্ষ্য।