নানা গুণে সমৃদ্ধ সুন্দবনের বুনো ফল কেওড়া
স.ম ওসমান গনী সোহাগ, শ্যামনগর থেকে:
কেওড়া সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান বৃক্ষ। সুন্দরবনের নদী ও খালের তীর এবং চরে এ গাছ বেশি জন্মায়। কেওড়া দ্রুত বর্ধনশীল। এর গড় উচ্চতা ২০ মিটার। এ গাছের পাতা চিকন, ফল আকারে ছোট ও গোলাকার, কেওড়া ফল টক বা অম্ল স্বাদের হয়। এই ফলের বাহিরের শ্বাস সাধারণত খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সুন্দরবন এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের কাছে এ ফল অনেক প্রিয়। লবণাক্ত মাটিতে জন্ম নেওয়া এই উদ্ভিদের শ্বাসমূল দেখা যায়। জোয়ার ভাটার পানিতে পুষ্ট সুন্দরবনে শ্বাসমূল এই গাছের বায়ুতে থাকা উপাদানগুলো গ্রহণ করতে সাহায্য করে। মিষ্টি পানির এলাকায় এই গাছ জন্মে না বললেই চলে। মানুষের চেয়ে কেওড়া গাছের পাতা ও ফল সুন্দরবনে থাকা হরিণ ও বানরের প্রিয় খাবার। এ গাছের নিচে হরিণ ও বানর দলের ঘোরাঘুরি বেশ চোখে পড়ে। কেওড়া গাছের কাঠ ঘরের বেড়া, দরজা-জানালা ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
কেওড়া সুন্দরবনের উঁচু গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম। কেওড়া গাছ ২.৫ থেকে প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।কেওড়া গাছ বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমারে বেশি জন্মে। পাতা সরল, বিপরীতমুখী, অখ- ও চামড়ার মতো। ফুল উভলিঙ্গ। ফল প্রায় গোলাকৃতির এবং ব্যাস ২-৩ মিলিমিটার। একটি ফলে বীজের সংখ্যা ২৫-১২৫। বাংলাদেশে প্যানেল বানানো, প্যাক করার বাক্স তৈরী, আসবাবপত্র ও জ্বালানির জন্য কেওড়ার কাঠ ব্যবহৃত হয়। গাছের ঘের নূন্যতম ৩০ সে.মি. হলে ২০ বছর বয়স্ক গাছ কাটা হয়। অনেকে নার্সারির মাধ্যমে এ গাছ বর্ষা মৌসুমে রোপণ করেন। সুন্দরবনের অন্যান্য গাছের তুলনায় কেওড়া গাছ দ্রুত বড় হয়।
কেওড়া ফলের ব্যবহার ও গুণ: কেওড়া ফলের আকৃতি ডুমুরের মতো। সবুজ রঙের ফলের ওপরের মাংসল অংশটুকু অম্ল স্বাদের। ভেতরে বেশ বড় বীচি থাকে। এটি সবচেয়ে বেশি উপাদেয় খাদ্য হরিণ আর বানরের। তবে বহু বছর আগে থেকে মানুষ ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এটি। এই ফল রান্না করে খাওয়া যায়। টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় কাঁচা লবণ দিয়ে খাওয়া যায়, অনেকে আচার হিসেবেও খেয়ে থাকেন। সম্প্রতি সুন্দরবন এলাকার মানুষের পাশাপাশি অন্য এলাকার মানুষের কাছে এ ফলের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে কেওড়া দিকে আচার, চাটনি তৈরি করে গ্রামের হাট বাজারে বিক্রি করে সংসার নির্বাহ করেন। কেওড়া সিদ্ধ করে রস পান করলে আমাশয় ভালো হয়ে যায়। এছাড়াও এ ফলটি পচে গেলে মৎস্য চাষীরা মাছের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন।
কেওড়া ফল বিক্রি সরকারিভাবে বৈধ না হলেও এ অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হতে দেখো যায়। অবশ্য অনেক দরিদ্র পরিবার এ ফল আহরণ ও বিক্রি করে স্বচ্ছল হয়েছেন। কেওড়া গাছ ও ফলের অনেক ঔষধিগুণ রয়েছে। এ গাছে ফাগুনের শেষে ফুল হয়। ফুল থেকে মধু আহরণ ও মৌচাকে সঞ্চয় করে মৌমাছি। সুন্দরবনের হরিণ, বানর ও অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণির প্রধান খাদ্য কেওড়া পাতা ও কেওড়া ফল। ফাগুনে ফুল ফোটে ও চৈত্র-বৈশাখে ফল ধরে এবং আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্র-আশ্বিন পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। কেওড়া ফল কিছুটা আমলকীর মতো দেখতে। কেওড়া ফলে আছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’। যা মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। কেওড়া ফল রক্তে কোলেস্টেরল কমায়। কেওড়া ফল শরীরের চর্বি (ফ্যাট) কমায়। এতে কিছু এনজাইম আছে। যা শরীরের হজমশক্তি বাড়ায়। ফলটির রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। চুলকানি ও পাঁচড়া প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে কেওড়া। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি কমায়।