সুন্দরবনের লোকসংস্কৃতি রক্ষা করি
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
বারসিক’র উদ্যোগে সুন্দরবনের লোক-সংষ্কৃতি নিয়ে গত ৩ আগস্ট অনলাইন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনায় সকলেই সুন্দরবন অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি সুরক্ষায় যুব সমাজসহ সকলের প্রতি আহবান জানানো হয়।
পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই বনাঞ্চলে সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, ধুন্দল, বাইন, খলিশা, গোলাপাতা, কালো লতা, গরান, কেওড়া, কাঁকড়া, হেতাল, জানা, বাউলে ইত্যাদি মূল্যবান গাছের সমাহারে আছন্ন ও নানান পরিবেশ, প্রতিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের এক বিশাল এলাকা। সুন্দরবনের অঞ্চলে জনজীবন, জাতিগোষ্ঠী, ভাষা-সংস্কৃতি, আদিবাসীসহ রয়েছে এক গভীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আর এই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জীবনধারার সাথে মিশে আছে সুন্দরবন অঞ্চলের লোক-সংস্কৃতি।
বারসিক এর অঙ্গ সংগঠন বিয়াস আয়োজন করে সুন্দরবনের লোক-সংষ্কৃতি নিয়ে এক আলোচনা সভা। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার, জেলাখালী গ্রামের একজন প্রখ্যাত চারণ কবি ও সাহিত্যিক চারু চন্দ্র মন্ডল উক্ত সভায় মূল আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন। বারসিক কর্মকর্তা মননজয় মন্ডলের সঞ্চালনায় উক্ত অনলাইন আলোচনায় সভায় বারসিক এর নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন, পরিচালক পাভেল পার্থ, তৌহিদুল আলম, বরেন্দ্র এলাকার আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, নেত্রকোনা অঞ্চলের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অহিদুর রহমান সহ ৫টি অঞ্চলের সহকর্মীবৃন্দ, যুব সংগঠন সিডিও ও সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিম, আমরা বন্ধু, সাতক্ষীরা শিক্ষা সংষ্কৃতি ও বৈচিত্র্য সুরক্ষা টিমের সদস্যবৃন্দ, বনজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি সহ অনেকেই যুক্ত ছিলেন। একই সময়ে উক্ত প্রোগ্রাম সরাসরি ফেইজবুক লাইভে সম্প্রচারিত হয়।
শুরুতে সকলের পরিচয় পর্ব শেষে বারসিক এর উপকূলীয় এলাকার আঞ্চলিক সমন্বয়কারী পার্থ সারথী পাল আলোচনার শুভসুচনা করেন। এরপরই মূল আলোচক চারন কবি চারু চন্দ্র মন্ডল সুন্দরবনের লোক-সংষ্কৃতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন।
চারু চন্দ্র মন্ডল প্রায় দুই ঘণ্টা যাবৎ সুন্দরবনের পরিচিতি, নামকরণ, বৈশিষ্ট, বৈচিত্র্য, নদ-নদী, আদিবসতি, লোকায়ত ভাষা ও চর্চা, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে সুন্দর ও সাবলীল আলোকপাত করে সকলকে সুন্দরবনের লোকসংস্কৃতি বিষয়ে একটি সম্যক ধারণা প্রদান করেন। তার আলোচনায় বলেন, ‘সুন্দরবনে জেলে, বাওয়ালী, মৌয়ালী, বাওয়ালী, চুনুরী, দুনুরী, মুন্ডা, মাহতো, ও বাগদী সম্প্রসায় সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষের বাস ছিল এখানে। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষিতে আজ অনেক পেশা ও সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে। ১৮ ভাটির পথ আজ আজ আর নেই।’
আলোচনা শেষে অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নত্তোর পর্ব এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। উক্ত আলোচনা শেষে সকলেই একমত পোষন করেন যে সুন্দরববন অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি সুরক্ষায় যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সবাইকে সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে।