বাহারী কলা অগ্নিসাগর
::দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূল অঞ্চল::
[su_carousel source=”media: 619″ limit=”0″]
কলা দারুণ সুমিষ্ট সুস্বাদু ফল। বছরজুড়েই সহজলভ্য কলা। সস্তা ও সহজলভ্য কলা আমাদের দৈনন্দিন অনেক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। কলা উপকারী ফলের মধ্যে বিশেষ খাদ্যপ্রাণ। দেশে নানান ধরনের কলা পাওয়া যায়। তার মধ্যে সাগর কলা, সবরি কলা, কাঁঠালি কলা, চিনি চাপা কলা, আনাচ কলা ও অগ্নিসাগর উল্লেখ্যযোগ্য। এত কলার জাতের মধ্যে আনাচ কলা কেবল সবজি হিসেবেই উপাদেয়। আর বাহারী নামের অগ্নিসাগর সব কলার মধ্যে আলাদা ধরনের। আগুন রঙে বর্ণিল এ কলা বেশ দৃষ্টিনন্দন। আমাদের দেশে কলার পরিকল্পিত বাণিজ্যিক আবাদ রয়েছে। ফলে কলা চাষে একটা অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিদ্যমান। এত জাতের কলার মধ্যে অগ্নিসাগর কলার তেমন বাণিজ্যিক আবাদ মেলেনা।
নজর কাড়া রঙের রেড বানানা বা লাল কলা নামে পরিচিত অগ্নিসাগর কলার খোসার রঙ হলুদাভ কমলা, গাঢ় কমলা, লাল এবং লালচে বেগুণী হয়ে থাকে। এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশে জন্মে এই কলা। ভেতরটা প্রচলিত জাতের কলার মতোই হালকা ঘিয়া রঙের, তবে কখনো কখনো গোলাপি আভাও থাকে। এ জাতের কলায় ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি-এর পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়া অগ্নিসাগর কলা অনেকসময় নানা রোগের বনাজি ঔষধে ব্যবহৃত হয়। এ কলার চাহিদা আছে। তাই দামও অন্য কলার তুলনায় বেশি; তবে সহজলভ্য নয়।
উপকূলীয় পিরোজপুর ও বরগুণা অঞ্চলে পরিকল্পিত কলার আবাদ আছে। কান্দি ও বেড় পদ্ধতিতে কলার আবাদ হয়ে থাকে। এ দুই জেলার সব উপজেলাগুলোতে কমবেশি কলার আবাদ চোখে পড়ে। তবে পিরোজপুরের জিয়া নগর, মঠবাড়িয়া , ভান্ডারিয়া ও বরগুণার আমতলি, বামনা ও বেতাগীতে কলা চাষের বাণিজ্যিক প্রসারতা রয়েছে। এসব অঞ্চলে সব ধরনের কলা চাষ হয়ে থাকে।
দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় অগ্নিসাগর কলার বাণিজ্যিক চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। পিরোজপুরের কাউখালীতে বাণিজ্যিকভাবে অগ্নিসাগর কলার আবাদ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। এ জনপদের অর্থকরী ফসলের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এ অগ্নিসাগর কলা। স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, বছরদশেক আগে এ উপজেলায় হাতেগোনা দু-তিনটি অগ্নিসাগর কলার ক্ষেত থাকলেও সম্প্রতি অগ্নিসাগর কলার চাষ সম্প্রসারণ ঘটেছে। স্থানীয় কৃষকরা নিজেদের লোকায়ত কৃষি জ্ঞান ও কৌশল কাজে লাগিয়ে অগ্নিসাগর কলার আবাদ সম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন। স্থানীয় চাষীদের দেখে বেকার যুবকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অগ্নিসাগর জাতের কলা চাষে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে কাউখালীর রঙিন কলা অগ্নি সাগর।
এই প্রসঙ্গে শিয়ালকাঠি গ্রামের কলা চাষী মো. আবদুল হক জানান, অন্য সব কলার পাশাপাশি কাউখালীতে অগ্নিসাগর কলা চাষে ইদানিং চাষীরা ঝুঁকছে। কলা বিক্রি করার জন্য তাদের দূরে কোথাও যেতে হয় না। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বাগান থেকেই পরিপক্ক কলা কিনে নিয়ে যায়। প্রতি হালি (চারটি) অগ্নিসাগর কলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রয় করে থাকেন। এ কারণে এ কলায় কৃষকের লাভের অংকটা বেশি।
কাউখালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অপূর্ব লাল সরকার জানান, এ বছর কাউখালীতে শিয়ালকাঠী, বিড়ালজুরি, জোলাগাতী, চিরপাড়ায় অগ্নিসাগরের চাষ হয়েছে। এ ছাড়া এলাকায় ২৫ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়। এখানকার মাটি কলা চাষে বেশ উপযুক্ত হওয়ায় উপজেলায় এটি একটি অর্থকরী কৃষিজ পণ্য হিসেবে জনপ্রিয়তা পাবে বলে স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেন।
কলা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। কলা খেলে আমাদের বিষন্নতা দূর হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয়েছে, প্রতিদিন ব্যায়াম করার আগে ২টি কলা খেলে শরীরে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। পেশী গঠনে ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে কলা বেশ উপকারী। রক্তশূন্যতা দুর করে শরীর ও মনে প্রশান্তি আনে পাকা কলা। কলায় প্রচুর ফাইবার বিদ্যমান থাকায় পাকা কলা খেলে পায়খানা নরম হয়। এছাড়া কাচকলা সবজি হিসেবে ডায়রয়িা’র সময় উপকার পাওয়া যায়। প্রচুর আয়রণ যুক্ত কলা মন শরীরে উপকারী খাদ্য প্রাণ। এতে আপলেরে চাইতে কলায় দ্বিগুণ কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, তিনগুণ ফসফরাস আছে, পাঁচগুণ ভিটামিন ও আয়রন রয়েছে।