চৈত্র সংক্রান্তিসহ বাঙালির সব ঐতিহ্যকে সুরক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে
মানিকগঞ্জ সিংগাইর থেকে রিনা আক্তার
বাংলা মাসের সর্বশেষ দিনটিকে সংক্রান্তির দিন বলা হয়। চৈত্রমাসের শেষ আর বৈশাখের শুরু। একদিকে পহেলা বৈশাখের আমেজ অন্যদিকে চৈত্র সংক্রান্তি । বাঙালির সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ন উৎসব পালিত হয় এই দুইদিনে। কিন্তু ্্্্উৎসবের তালিকায় দুইয়ের মধ্যে চৈত্র সংক্রান্তির পাল্লা ভারী ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে বাংলার মানুষ এইদিনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উৎসব পালন করে। ধর্মীয় বিশ্বাস, কখনো আবহমান বাংলার ঐতিহ্য আর লোক উৎসবের ধ্বনি পাওয়া যায় এইদিনকে ঘিরে ।
চৈত্র সংক্রান্তির দিনে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে এককালে শাকান্ন পালিত হতো। এইদিন সকাল বেলাতেই বাড়ির চারপাশের জলা, জংলা, ঝোপঝাড় থেকে বউ-ঝিয়েরা রকমারি শাক তুলে আনতেন। কিন্তু এই শাকগুলো চাষ করা হতো না সম্পূর্ণ অচাষকৃত শাক যেমন: হেলেঞ্চা, গুটা, ক্যাঁথা, বথুয়া, কলমিশাক, কচু শাক, নোনতা, কালকাশিন্দা প্রভৃতি। এমনই প্রায় ১৪-১৫ পদের শাক সংগ্রহ করা হতো আর এইটার নাম হলো তেরাবেরা। সেদিন কেউই মাছ, মাংস রান্না করতো না সকলেই এই শাক দিয়েই দুপুরে আহার হতো।
চৈত্র সংক্রান্তির দিনে গ্রামে গ্রামে গম-পায়রা ছাতু বানানো হয়। সেইসাথে খাওয়া হয় দইচিড়া, পাকাবেল এর প্রাণ জুড়ানো শরবত। বোনের হাতে ভাইকে ছাতুমাখা খাওয়ানোরও চল ছিল। এইদিনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় মেলা হয়। উচু গাছের নিচে শিরনি করার চল ছিল ্। তখন সবচেয়ে উচু গাছ হিসেবে তাল গাছকেই বেছে নেওয়া হতো। আর সেই তালগাছের নিচেই দুধ,গুড়, ও চাল দিয়ে শিরনি রান্না হতো । বিভিন্ন দূরদুরান্ত থেকে মানুষ সেই তাল শিরনি খেতে আসত। কিন্তু কালের বিবর্তনে অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো আর দেখা যায় না।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে এখনও চৈত্রসংক্রান্তির বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান লক্ষ্য করা যায়। তারা চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে ঢেঁকিতে ছাতু কুটে সেই ছাতু প্রথমে তারা না খেয়ে গাঙ্গে বা নদীতে অর্পণ করে তারপর সকলেই সেই ছাতু খান। শিশু-কিশোররা লালকাপড় পরিধান করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল তুলে। সন্ন্যাসীদের দেল নামাই অনুষ্ঠানটি হয় শিবঠাকুরকে মাথায় নিয়ে বাড়ি বাড়ি গান-বাজনা ও আলতি হয় সেইসাথে আজড়ার দিন চিত্রিকাস শিবঠাকরু পারবতী, কালি, দূর্গা প্রভৃতি সাজা হয়, আর রাতের বেলায় কাছ খেলা ও বরশি খেলা হয়। অনেকেই তাদের মনের আশা পূরণের জন্য বিভিন্ন মানতিও করে থাকে।
চৈত্র সংক্রান্তি আমাদের বাঙালির ঐতিহ্যের একটি অংশ। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে চৈত্র সংক্রান্তির গুরুত্ব বুঝানোর জন্য তাদের সাথে সম্মিলিতভাবে এই উৎসবগুলো পালন করা দরকার। আমাদের সকলের উচিত এই ঐতিহ্যকের্ ক্ষা করা।