নেত্রকোনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
নেত্রকোনা থেকে শংকর ম্রং।।
নেত্রকোনায় সম্মিলিত যুবসমাজের আয়োজনে ও বারসিক এর সহযোগিতায় “নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গ্রাম ও নগরের নিম্ন আয়ের মানুষের প্রবেশাধিকার” বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা গত ২৯ মার্চ নেত্রকোনা উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নেত্রকোনা বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা, বয়স ও গোত্রের ৪৫জন নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা সুলতানা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সংগীতা ভুট্টাচার্য। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য ও বারসিক পরিচালিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ক কার্যক্রমের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বারসিক এর সহযোগী সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম। আলোচনায় বক্তারা সরকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ক নীতিমালা ও পরিকল্পনা তুলে ধরে জ্বালানিতে সাধারণ জনগোষ্ঠীর প্রবেশাধিকারের সুযোগ সৃষ্টিতে যুব সমাজকে অগ্রনী ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
প্রধান অতিথি সাবিহা সুলতানা তার বক্তব্যে বারসিক’র উদ্যোগের প্রশংশাা করে বলেন, “সকল এনজিও গতানুগতিক কাজ করে থাকেন, কিন্ত বারসিক ভিন্ন ধর্মী কাজ করছে।” পরিবেশ রক্ষায় তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং পাশাপশি বৃক্ষ রোপনের উপর গুরুত্ব দেন। তবে এক্ষেত্রে জ¦ালানির অপচয় রোধে সচেতন থাকতে এবং অন্যদেরকেও সচেতনকরার পরামর্শ দেন। তিনি অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎ, গ্যাস, বাতি, ফ্যান, টিভির সুইচ বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন। গৃহস্থালী কাজে সৃষ্ট ময়লাগুলোর মধ্যে যেগুলো পচঁনশীল এবং যেগুলো অপচঁনশীল সেগুলো পৃথক করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য এবং অপচঁনশীল ময়লাগুলো পুড়িয়ে ফেলার পরামর্শ দেন। ময়লা আবর্জনা ফেলার বিষয়ে তিনি সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন থাকা এবং অন্যদের সচেতন করতে ব্যাপকভাবে প্রচারণার জন্য সকলকে আহবান জানান।
আলোচকগণ নদী ও পুকুরের পানি দূষণ রোধে সকলকে সচেতন থাকতে এবং এ বিষয়ে অন্যদেরকে সচেতন করার ক্ষেত্রে অবদান রাখার আহবান জানান। আলোচনায় জ্বালানি কাজে বায়োগ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর চাপ কমানোর সমূহ সম্ভবানার কথা উঠে আসে। আর এজন্য এলাকায় গবাদী পশু-পাখি পালন বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেয়া হয়। সভায় বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানানো হয়। গ্রামে জ্বালানি হিসেবে গোবর ব্যবহার না করে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হলে রাসায়নিক সারের উপর চাপ কম হবে এবং সার উৎপাদন বাবদ পানি, বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন ও ব্যবহার ব্যবহার কমবে। সরকারের এ সংশ্লিষ্ট নীতিমালা বাস্তবায়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সেবাদানের পদ্ধতি দরিদ্র বান্ধব করে সাধারণ জনগোষ্ঠী নবায়নযোগ্য জ্বালানি সুবিধা সহজলভ্য করার প্রস্তাবনা উঠে আসে আলোচনায়।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজ গ্রাম পর্যায়ে উন্নতচুলা ব্যবহার বিষয়ে জোর প্রচারণা চালানো, গ্যাস, পানি, জীবাশ্ম জ¦ালানি ও বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি। নদী, পুকুর ও জলাশয় দখল ও দূষণমুক্ত করে মানুষের ব্যবহার উপযোগি করা এবং দূষণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া বৈচিত্র্যময় পরিবেশবান্ধব বৃক্ষ রোপণ করা, জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে প্রচারণা, উন্নত ও পরিবেশবন্ধব চুলা তৈরী ও ব্যবহারে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে সহায়তাসহ বিভিন্ন বিয়য়ে আলোকপাত করা হয়।
অনুষ্ঠানের শেষে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে এবং পরিবেশের উন্নয়নে বিভিন্ন অবদানের জন্য মো. আব্দুল হামিদ কবিরাজ, বৈচিত্র্যময় ঔষধী বৃক্ষ সংরক্ষণ ও বর্ধন, মো. গোলাম মোস্তফা, বৃক্ষ রোপন, মোছা. হেলেনা আক্তার, পরিবেশবান্ধব উন্নত চুলা (জ্বালানি সাশ্রয়ী ধোয়ামুক্ত), মো. গোলাম মোস্তফাকে (মধু- কেঁচো কম্পোষ্ট উৎপাদন) উত্তরীয় পড়িয়ে সম্মাননা জানানো হয়।