পারিবারিক কৃষিতে সফল কৃষাণি মঞ্জুযারা
মানিকগঞ্জ থেকে শিমুল বিশ্বাস
বাড়িকে প্রাণবৈচিত্র্যে ভরপুর কৃষি খামারে পরিণত করেছেন কৃষাণি মঞ্জুয়ারা। সিংগাইর উপজেলার সারারিয়া গ্রামের মঞ্জুয়ারা বেগম ৪৫। স্বামী বজলুল হক ওমান প্রবাসী। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তার বর্তমান সংসার। সংসারের কাজের পাশাপাশি নিজেকে যুক্ত করেছেন পারিবারিক কৃষিতে। ৩৫ শতাংশের বসতভিটাতে গড়ে তুলেছেন বৈচিত্র্যময় কৃষি খামার। এ খামারে উৎপাদিত খাদ্য ফসল তার পরিবারের পুষ্টির চাহিদা যেমন পুরণ করে, তেমনি আর্থিক মুনাফা অর্জনে ভুমিকা রাখছে বলে তিনি মনে করেন।
গাছ লাগানো মঞ্জুয়ারার শখ ও নেশা। চেরি ফল, রাম ভুটান, পিংকাঠাল, লটকন, আমড়া, লিচু, নোনাফল, জাম্বুরা, চালতা, কদবেল, পেয়ারা, আম, কাঁঠাল, পিচফল,গাব, করমচা, আমলকি, মাল্টা, কমলা, ছবেদা সহ নানাবিধ ফলমুলে ভরপুর তার বাড়ি। অন্যদিকে নিম, সাজনা, উলটকমল, কাটাকুমুরে, তুলশি, পাথর কুচি নানা বিধ ঔষুধি গাছও রয়েছে তার বাড়িতে। শুধু গাছ লাগানোই নয়। বৈচিত্র্যময় ফসল চাষেও রয়েছে যথেষ্ঠ আগ্রহ। ঘরের চালে, গাছের ডালে সবজি চাষ। পালানী জমিতে লালশাক, ডাটা, বেগুন, মরিচ সহ ছায়াযুক্ত স্থানে আদা হলুদ চাষ। বাড়ির উপর হাঁস, মুরগি, কবুতরের খামার। তিনি মনে করেন আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করলে কৃষিতে যথেষ্ঠ লাভ রয়েছে। তাছাড়া নিজে হাতে কৃষি কাজ করলে নিরাপদ খাদ্য পাওয়া যায়।
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোম্পানিনির্ভর রাসয়নিক কৃষিতে একদিকে উৎপাদন খরচ, অন্যদিকে খাদ্যে বিষক্রিয়ার মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধিতে জনদুর্ভোগ চরমে। এমতাবস্থায় কৃষকনিয়ন্ত্রিত পবিবেশ বান্ধব কৃষিতে স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করছে এলাকার কৃষক। এ প্রসঙ্গে কৃষাণি মঞ্জুয়ারা বলেন, “বর্তমানে বাজারে যে সব খাবার পাওয়া যায় তা নিরাপদ না। তাই নিরাপদ খাবার খেতে হলে নিজেকে উৎপাদন করতে হবে।” তিনি আরো বলেন সম্প্রতি বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক আমাদের প্রকৃতি নির্ভর কৃষি চর্চায় উপর বিভিন্ন ধরনের তথ্য জ্ঞান সরবাহ করেছে। যার ফলে আমি সহ আমার সংগঠনের কৃষক রাজ্জাক মিয়া, শারমিন আক্তার, জাফর মিয়া, দলু মিয়া, রিনা আক্তার, শাহিন আলমসহ অনেকেই পারিবারিক পুষ্টি তৈরি করেছি। বর্তমানে আমরা নিজেরাই সার, ঔষধ তৈরি ও বীজ সংরক্ষণ করতে পারি। ফলে আমাদের বাজার নির্ভরশীলতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া নিরাপদ খাদ্য সহ আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পেরেছি।”
মঞ্জুয়ারার ভাষ্যমতে, তিনি চলতি বছর গাছের ফল,বাগানের সবজি এবং পারিবারিক খামারের মাংশ ও ডিম নিজের পরিবারের চাহিদা পুরনের পরও বিশ হাজার টাকা আয় করতে পেরেছেন।