সোলারের সড়ক বাতিতে আলোকিত হচ্ছে জনপথ
সাতক্ষীরা থেকে আব্দুল কাদের
সোলারের সড়কবাতিতে আলোকিত হচ্ছে জনপথ। দূর হচ্ছে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মানসিক প্রস্বস্তি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে সোলার সড়কবাতির এই বিপ্লব ঘটেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায়। বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবহার ও নিরবচ্ছিন্ন আলো সরবরাহের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। এতে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ চলে গেলেও সড়ক বাতি নেভে না, অন্যদিকে সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে মানুষ।
সরেজমিনে সদর উপজেলার মাছখোলা ক্লাব মোড়, মাছখোলা বাজার, নতুন বাজার, শাল্যে, ব্রহ্মরাজপুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় রাস্তায় শোভা পাচ্ছে সোলারের মাধ্যমে পরিচালিত সড়ক বাতি। সুউচ্চ খুটির উপর স্থাপন করা হয়েছে লাইট। লাইটের উপর আছে ছোট্ট সোলার প্যানেল। সোলার প্যানেলের নিচে ও লাইটের পিছনের অংশে আছে ব্যাটারি। সারাদিন সূর্যের আলোয় ব্যাটারি চার্জ হয় এবং সারারাত লাইট জ¦লে। রোজ সন্ধ্যায় সূর্য ডোবার সাথে সাথেই জ¦লে ওঠে এসব লাইট, আবার সকালে সূর্যের আলো পড়লে নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছখোলা ক্লাব মোড়ের ভাই ভাই টি স্টোরের মালিক শের আলি জানান, সারারাত একটানা বিদ্যুৎ থাকে না, বিদ্যুৎ অফ থাকা সময়ে বাজারে চুরি হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সোলার লাইট সারারাত জ¦লে তাই চুরি হবার ভয় কমেছে। পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ না থাকলেও সোলার লাইট বন্ধ হয় না।
মাছখোলা বাজারের সরদার ইলেক্ট্রিকের মালিক মনিরুজ্জামান মনি জানান, বাজারে দুটি সোলার লাইট দেওয়া হয়েছে। সোলার লাইটের আলোয় পুরো বাজার এখন সারারাত আলোকিত থাকে। ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা এর সুফল পাচ্ছেন। আগে বাজারে সিকিউরিটি গার্ড থাকার পরেও বিদ্যুৎ চলে গেলে চুরি হতো। কিন্তু এখন সোলারের আলো থাকায় চুরি হয় না। তাছাড়া রাস্তা খারাপ হওয়ায় আগে রাতে বাজার এলাকায় ছোট খাটো দুর্ঘটনা হতো। কিন্তু এখন আর তেমন দুর্ঘটনা হয় না।
সাতক্ষীরা কলেজ মোড় এলাকার গাজী আসাদ বলেন, “রাস্তায় সোলার আলো থাকায় এখন আর তেমন চুরি-ডাকাতি হয় না। সবসময় রাস্তায় আলো থাকে। তাই আমাদের চলাচল করতে অনেক সুবিধা হয়। শহরের যে সকল এলাকায় সড়ক বাতি নেই, সেখানে সোলার বাতি স্থাপন করলে জনগণ উপকৃত হবে। সরকারের এ রকম উন্নয়ন কর্মকা-ে আমরা সাধুবাদ জানাই।”
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১২৪টি সোলার লাইট স্থাপন করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা যেরকম চাহিদা দিচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে লাইট স্থাপন করা হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইডকলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিসোর্স ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আরডিএফ) এই সোলার লাইট সরবরাহ ও স্থাপন করছে। প্রতিটি সোলার লাইটের জন্য ব্যয় হচ্ছে ৫৬ হাজার চার’শ নব্বই টাকা।
রিসোর্স ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের ডিভিশনাল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বলেন, “প্রথম পর্যায়ে আমরা সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৩০-১৩০ ওয়াটের ১২৪টি সোলার লাইট স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ১০৪টি লাইট স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি সোলার খুটি ২৩ ফুট লম্বা। আগামী এক মাসের ভিতর বাকি লাইটগুলো লাগানোর কাজ শেষ হবে।” সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, “সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলাকে আলোকিত করার জন্য সোলার লাইট স্থাপন করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে আমরা প্রায় দেড়’শ লাইট স্থাপনের কাজ শুরু করেছি।