অস্তিত্ব হারাচ্ছে ডায়ের বিলের খাল
সাতক্ষীরা থেকে মফিজুল ইসলাম
বদ্ধ স্লুইচ গেটের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় দিন দিন অস্তিত্ব হারাচ্ছে সদর উপজেলার মাছখোলার ডায়ের বিলের খাল। দখল হয়ে যাচ্ছে এই খাল ও খালের দু’পাশ। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের মাছখোলা গ্রাম ও পৌরসভার বদ্দীপুর কলোনীর কোলঘেঁষে ডায়ের বিলের খালটি সংযুক্ত হয়েছে বেতনায়। এই খাল দিয়েই বর্ষা মৌসুমে গোটা এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয়ে বেতনা নদীতে পড়ে। কিন্তু খালের মধ্যে বড় বড় বাঁধ মাছ চাষ করা হচ্ছে। কোথাও আবার চাষ করা হচ্ছে ধান। এভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে খালটি। এতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ফের জলাবদ্ধতার আশংকা দেখা দিয়েছে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খালটির দৈর্ঘ্য কমে ১০-১২ হাত রয়েছে। দামারপোতা স্লুইচ গেট বন্ধ থাকায় খালের সাথে নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন। খালের মধ্যেই কিছুদূর পরপর বাঁধ দেওয়া। ভরাট হয়েগেছে অনেকটা। ভরাট হওয়া অংশ দখল করে ধান চাষ করছে প্রভাবশালীরা। কেউবা করেছে মৎস্য ঘের। এতে দিন দিন অস্তিত্ব হারাচ্ছে ডায়ের বিলের খাল।
ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের মাছখোলা গ্রামের রফিকুল মোড়ল বলেন, “বছর দশেক আগেও খালটি ১৫-২০ হাত চওড়া ছিল। খালে জোয়ার-ভাটাও ছিল। এসময় চিংড়ি, গুলি, টেংরা, বেলি, ভেটকি, পুঁটিসহ কয়েক প্রকারের মাছও পাওয়া যেত। মাছ ধরেও অনেক মৎস্যজীবী জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন খালে মাছ পাওয়া যায় না। দখল হয়ে যাচ্ছে।”
ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের মাছখোলা গ্রামের কাশেম সরদার বলেন, “মাছখোলা, বদ্দিপুর কলোনি, নাথপাড়া, শেখপাড়া, কুলিনপাড়া, হরিনগরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বৃষ্টি ও বন্যার পানি ডায়ের বিলের খাল দিয়ে বেতনা নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু শুধুমাত্র বন্যার সময় ছাড়া বাকি সময়ে নদীর সাথে খালের সংযোগ না থাকার কারণে খাল অপেক্ষা নদী উঁচু হয়ে গেছে। তাই এখন আর বিলের পানি খাল দিয়ে তেমন সরে না। এজন্য বর্ষা মৌসুমে এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়।”
এতে এলাকার কৃষি-প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংসের মুখে পতিত হয়- যোগ করেন তিনি।
বদ্দীপুর কলোনী গ্রামের মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী ওয়াজেদ আলী বলেন, “আগে এ খালে চিংড়ি, ভোলা, গুলি, টেংরা ও পুটিসহ বিভিন্ন মাছ ধরতে দেখা যেত। এখন আর পাওয়া যায় না।”
স্থানীয়রা জানান, খালে নদীর পানি উঠা নামা করার জন্য দামারপোতায় একটা গেট আছে। কিন্তু গেটটি উন্মুক্ত না থাকায় চর জমে পানি নিষ্কাশনের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে এই চার-পাঁচ বছর বর্ষা মৌসুমে বন্যার কবলে পড়তে হয়।
স্থানীয়রা দামারপোতা স্লুইচ গেটটি উন্মুক্তকরণসহ ডায়ের বিলের খাল রক্ষায় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।