প্রজন্মের স্বপ্নযাত্রাকে বেগবান করার প্রত্যয়ে অনুষ্ঠিত হলো নেত্রকোনা যুব স্বপ্ন উৎসব-২০১৫
“একা একা খেতে চাও দরজা বন্ধ করে খাও” এই ব্যক্তিকেন্দ্রীক চিন্তা আজ খুবই পরিকল্পিত ভাবে তরুণ সমাজের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে অথচ রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘সকলের তরে সকলে আমরা- প্রত্যেকে মোরা পরের তরে” এই মন্ত্রে মানবতার জয়গান গাইতে হবে। আমাদের প্রজন্মকে এই ভয়ংকর গ্রাস থেকে রক্ষা করতে হবে আর মানবতার জয়গান তুলে দিতে হবে তাদের কন্ঠে-গত ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ৭ পৌষ ১৪২২ এ নেত্রকোনার প্রজন্মের স্বপ্নযাত্রা শীর্ষক যুব স্বপ্ন উৎসবের উদ্বোধনী বক্তব্যে এই কথাগুলো বলেন দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী লেখক অধ্যাপক যতীন সরকার। বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বারসিক, নেত্রকোনা সম্মিলিত যুব সমাজ ও সমকাল সুহদ সমাবেশ এর যৌথ উদ্যোগে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। তিনি তার উদ্বোধনী বক্তব্যের আগে একটি ক্যানভাসে লিখেন, “ প্রকৃতিই সংস্কৃতির জননী, প্রকৃতিকে প্রকৃত রাখতে হবে।”
উদ্বোধনী নৃত্য , যতীন সরকারের লেখা ও বক্তব্যের মাধ্যমে এই যুব উৎসবের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে নেত্রকোণা পাবলিক হলে এসে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। বারসিক নেত্রকোনার আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রণী খান। উদ্বোধনী আলোচনায় বক্তব্য রাখেন নেত্রকোণা জেলা সমকাল সুহৃদ সমাবেশ সমন্বয়ক অধ্যাপক তপত সাহা, সম্মিলিত যুব সমাবেশের সমন্বয়ক তপতী শর্মা, বাউল নুরুল ইসলাম, জানমা মংস সংগঠনের সভাপতি যোগেশ বর্মন, হাবাদা সংগঠনের সভাপ্রধান হাওয়া আক্তারসহ প্রমূখ যুব নেতৃবৃন্দ।
দিনব্যাপী এই যুব উৎসবে ছিল গান, কবিতা, নাটক, কৌতুক, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, টক শো, পালাগান, বাউল গান, কত্থক নাচ, আলোচনা সভাসহ নানান অনুষ্ঠানমালা। নেত্রকোনার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৫ টি যুব সংগঠনের প্রায় ৪ শতাধিক যুবক এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। বিশাল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান চলে প্রায় রাত অবধি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি হায়দার জাহান চোধুরীর সভাপতিত্বে সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নেত্রকোনা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. আব্দর রহিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মতিন্দ্র সরকার, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো: আফতাব হোসেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মিজানুর রহমান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো: শহীদুল্লাহ প্রমূখ। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন বারসিকের সমন্বয়ক ফেরদৌসী আক্তার রিতা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আব্দুর রহিম বলেন, একটি উন্নয়ন সংগঠনের কাজই হলো মানুষের ভেতরের শক্তিকে জাগিয়ে তোলা। তিনি বলেন, তরুণ সমাজই পারে সমাজটাকে পাল্টে দিতে। তিনি, এই যুব-তরুণদের যেকোন উদ্যোগে পাশে থাকা ও সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। আলোচন সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বারসিকের সমন্বয়কারী সৈয়দ আলী বিশ্বাস, কর্মসূচী কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, আলমগীর হোসেন, হেপী রায়, পার্বতী সিংহ, রোকসানা রুমী প্রমূখ। উৎসবে নেত্রকোনা সম্মিলিত যুব সমাজের পক্ষ থেকে ১৫ দফা দাবি তুলে ধরেন সমন্বয়ক তপতি শর্মা। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো ছিল জেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র, ক্যারিয়ার ভিত্তিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, কলেজে হোস্টেল ও কেন্টিন স্থাপন, নেত্রকোণা বাইপাস সড়ক নির্মাণ, লাইব্রেরীতে পর্যাপ্ত বইয়ের ব্যবস্থাসহ ভাটি অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ।