নিরাপদ খাদ্য চরের মাসকলই
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি (বলড়া, চালা, গালা, বাল্লা) ইউনিয়ন ভাঙ্গনহীন, ৫টি ইউনিয়ন (বয়ড়া, রামকৃষ্ণপুর, হারুকান্দি,কাঞ্চনপুর, গোপিনাথপুর) আংশিক নদী গর্ভে ও ৪টি ইউনিয়ন (লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ি, আজিমনগর, ধুলসুরা) সম্পর্ণ চর এলাকায় অবস্থিত। এলাকার লোকজন বলেন, এর আগে পদ্মা নদী ছিল ফরিদপুরের কাছে। নদী ভাঙ্গনের মাধ্যমে আস্তে আস্তে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে পদ্মা নদী হরিরামপুরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চর এলাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি নালা দিয়ে মাঠে প্রবেশ করায় জমিতে পলি পড়ে। পলি মাটিতে ঘাস সহ যেকোনো ধরনের ফসল ভালো হয়। তবে ঘাসে প্রভাব বেশি থাকায় ঘাসের মধ্যে ভালো হয় মাসকলই চাষ। কারণ হিসাবে বলেন, ঘাস মাসকলই আবাদে কোন ক্ষতি করতে পারে না। ঘাসের মধ্যে মাস কলই চাষ আরো ভালো হয়।
চাষকলই চাষ করেই চরে কৃষকগণ সবচেয়ে লাভবান হচ্ছেন বলে জানান। কারণ হিসাবে পাটগ্রামের আজিনা বেগম (৪৮) বলেন, ‘চর এলাকার প্রতি পরিবারে ৪টি থেকে ২০টি গরু পালন করে থাকে। তাছাড়াও হাঁস, মুরগি, কবুতরে সবচেয়ে উত্তম খাবার মাসকলই। গরু ছাগলের সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার হলো মাসকলই ভুষি। মাঠ থেকে নদীর পানি চলে যাওয়ার পর মাসকলই আবাদ করে থাকি। জমির মাটির জো বুঝে ভাদ্র মাসে চরের মানুষ ৩০ শতাংশ জমিতে ৪ কেজি মাসকলই বীজ জমিতে ছিটিয়ে রাখি। আবার মাঘ মাসে মাসকলই পাকলে তুলে নিয়ে আসতে হয়। তবে সকল কৃষকদের সমন্বয়ে আবাদ করা মাসকলই দেখে রাখি গরু ছাগলে যে না খায়।’
কৃষক আফজাল হোসেন (৪২) বাহিরচর, রামকৃষ্ণপুর, হরিরামপুির, মানিকগঞ্জ বলেন আমরা কৃষকগণ জলবায়ু পরিবর্তন সহ নানা কারণে চাষাবাদে কৃষকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কখনো বাজারের বীজে, রাসায়নিক সারে, কুয়াশা, পোকার আক্রমন, তাপ বেশীতে ফলন কম হওয়া নিত্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সবচে আশার কথা হলো মাস কলই চাষে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কারণ হলো মাস কলই চাষে পুঁজি হলো শুধুমাত্র মাসকলই বীজ। মাসকলই চাষে কৃষক কোন ধরনের খরচ না করে ৩০ শতাংশ জমিতে ৩ থেকে ৫ মন মাসকলই হয়। প্রতি মন মাস কলইর দাম আনুমানিক বা বাজার ভেদে ১৮০০/- (এক হাজার আটশত টাকা) থেকে ২১০০ ( দুই হাজার এক শত টাকা) বিক্রয় করা সম্ভব হয়। মাসকলই ভুষি বা ঘাস গরুর প্রধান খাবার হওয়ায় ১ মন ভুষি ৪০০ টাকায় বিক্রয় করা যায়। মাসকলই চাষে ৩০ শতকে ৮ থেকে ১২ মন ভুষি পাওয়া যায়। গরুর প্রধান ও পুষ্টিকর খাবার হওয়ায় চরের মানুষ মাস কলই চাষ করে থাকেন। চরের কৃষক-কৃষাণিগণ গরু পালন করে সংসারের সবচেয়ে বেশী আয় করে থাকেন।পাটগ্রামচরের কৃষক ছিদ্দিক মোল্লা (৬০) বলেন, ‘চরের কৃষক সব ধরনের ফসল আবাদ করে থাকেন।
তবে সবচেয়ে সুখের আবাদ হলো মাসকলই। কারণ হলো জমিতে মাসকলই ছিটিয়ে আবার এসে মাসকলই পাকলে জমি থেকে উঠিয়ে নিলেই চলে। তবে হরিরামপুরে মাসকলই চাষ মৌসুমে কৃষকগণ রাস্তার পাশে মাসকলই বুনে রাখেন। ফলে পতিত জায়গা থেকে ভালো মাসকলই পায়। আমরা চরের মানুষ খরচ ছাড়া এই ফসলটি পাই। চরের যে আবাহাওয়া, আলো, বাতাস মিলে মাসকলই সবসময়ই ভালো হয়। মাসকলই চাষেও কোনো ক্ষতি নাই, খাইতেও সুস্বাদু, পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার।’